‘নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না থাকাই লোডশেডিং নয়’

সাধারণ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি উন্নতির একটি সাধারণ পরিমাপক হলো, লোডশেডিং হচ্ছে কি হচ্ছে না; কিংবা লোডশেডিং হলেও তা কতক্ষণ। সাধারণ মানুষের এ হিসাব মতে, অন্তত শহর বা রাজধানীতে লোডশেডিং কমেছে।
urgentPhoto
তবে গ্রাম এলাকায় এখনো চার পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী মানুষজনের। যদিও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে এই সময়ের মধ্যে কোনো লোডশেডিংই ছিল না। আর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারলেও তাকে লোডশেডিং বলতে নারাজ সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রী।
বিদুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের এ পুরনো ট্রান্সফরমার, পুরনো লাইনগুলোকে বদলাতে গিয়েই কিন্তু মাঝে মাঝে আমাদের বিদ্যুৎকে বন্ধ রাখতে হচ্ছে এবং বেশ কিছু জায়গায় ট্রিপ করে হচ্ছে।’
সরকারের মহাপরিকল্পনায় ছিল ২০১৩ সাল থেকেই দেশে কোনো লোডশেডিং থাকবে না। সে অনুযায়ী উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও সে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়নি এখনো। এর সাথে সঞ্চালন লাইন বাড়ানোও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
অন্যদিকে জ্বালানির কথা না ভেবেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে বরাবরই এমন অভিযোগ করে আসছিলেন অর্থনীতিবিদরা। কয়েক বছর ধরেই বাজেটের দিক নির্দেশনায় ধীরে ধীরে তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো কমিয়ে আনার পরামর্শ থাকলেও সবগুলোর মেয়াদই বাড়ানো হয়েছে। তেলভিত্তিক এই কেন্দ্রগুলোতে গড়ে প্রতিদিন ৩০ কোটি টাকার জ্বালানি লাগে। বছরে যা দাঁড়ায় প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। সেই তেলও সরবরাহ করা হয় ভর্তুকি মূল্যে। শর্তে আছে উৎপাদনে থাক বা না থাক একইরকম ভর্তুকি সুবিধা পাবে কেন্দ্রগুলো।
পিডিবির আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়ার তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো মোট বিদ্যুতের ২০ শতাংশ জোগান দেয়। আর এ পরিমাণ বিদ্যুৎ কিনতে খরচ হয় মোট ব্যয়ের ৪২ শতাংশ।
কিন্তু কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসলে এসব কেন্দ্রের ওপর থেকে নির্ভরতার পাশাপাশি উৎপাদন ব্যয়ও কমতো। তবে এ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বেশির ভাগই আটকে আছে পরিকল্পনার পাতায়।
কয়লাভিত্তিক এ বড় কেন্দ্রগুলোর কাজ ঠিকঠাকভাবে শেষ করে উৎপাদনে আনাই সরকারের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এজন্য ভূমি আর অর্থের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।
গত কয়েক বছরের বাজেটে দেখা যায়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে চার-পাঁচ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি আর ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই ভর্তুকি কমাতে গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কথা বলা হয় বারবার। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের মতে, সঠিক পরিকল্পনা আর দুর্নীতির লাগাম টানতে পারলে, দাম না বাড়িয়েও ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
পিডিবির নির্বাহী পরিচারক অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যেভাবে সরকারের ভর্তুকিটাকে কমানো সম্ভব ছিল সে জায়গাটিতে আমরা সুযোগটা নিতে পারিনি। কারণ কুইক রেন্টাল যেভাবে ফেজআউট করার কথা ছিল সে ফেজআউট হয়নি। কিন্তু তারপরও এখন জোরটা যেটা দিতে হবে সেটা হলো বেজ পাওয়ারে এবং অন্যান্য যেসব সরকারের আইপিপিএ আছে সেগুলো যাতে দ্রুত আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি। সেখানে প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট যেটা প্রাক্কলিত সময়ে আমাদের শেষে করার কথা ছিল সেটা আমরা করতে পারি।’
অর্থনীতিবিদদের মতে, একটি উন্নয়নশীল দেশে সামঞ্জস্যপূর্ণ জিডিপি প্রবৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর বিদ্যুৎ চাহিদা ৯ থেকে ১২ শতাংশ হারে বাড়াতে হয়। পাশাপাশি পরিকল্পনা আর বাস্তবতার ব্যবধান কমিয়ে আনার মতো চ্যালেঞ্জ থাকছে এবারের বাজেটেও। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ খাতে বেশ বড় অঙ্কের ভর্তুকি থাকছে এবারের বাজেটেও।