‘সেই স্বাস্থ্যকর্মীর ঝুপড়িঘরে থাকার সঙ্গে আ. লীগের যোগ নেই’

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার লখণ্ডা গ্রামের ঝুপড়িঘরে নারী স্বাস্থ্যকর্মী লোপা মল্লিকের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
আজ শনিবার সকাল ১০টায় উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
লিখিত বক্তব্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, লখণ্ডা গ্রামে ঢাকা থেকে আসা নারী স্বাস্থ্যকর্মী লোপা মল্লিকের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর আমরা একটি তদন্ত কমিটির গঠন করি। এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি আমাদের কাছে তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এই রিপোর্টে দেখা গেছে, ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মী লোপা মল্লিকের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার সঙ্গে আওয়ামী লীগ দলীয় কোনো নেতাকর্মীর সংশ্লিষ্টতা নাই।’
ওই স্বাস্থ্যকর্মী তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিজ ইচ্ছেয় হোম কোয়ারেন্টিনে যান বলে দাবি করেন আয়নাল হোসেন। তিনি আরো বলেন, একটি কুচক্রি মহল সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে এ ঘটনাকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ওপর চাপিয়ে দিয়ে একটি অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটানার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।
এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, পৌর মেয়র মো. কামাল হোসেন শেখ, আওয়ামী লীগ নেতা মতিয়ার রহমান হাজরা, কামরুল ইসলাম বাদল, রুহুল আমিন খান, আতিকুজ্জামান খান বাদল উপস্থিত ছিলেন।
কোটালীপাড়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের এক নেতার নির্দেশে নির্জন পুকুরপাড়ের ঝুপড়ি ঘরে ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে (২১) রাখা হয় বলে গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে ভাইরাল হয়। উপজেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সাতদিন পর ওই নারীকে গিয়ে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
ওই স্বাস্থ্যকর্মী ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে চিকিৎসকের অ্যাটেনডেন্ট পদে চাকরি করেন। করোনা সংক্রমণের কারণে হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যায়। গত ২১ এপ্রিল ওই স্বাস্থ্যকর্মী কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের লখণ্ডা গ্রামের বাড়িতে আসেন। স্বাস্থ্যকর্মী ও তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, বাড়িতে আসার পর সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত বাড়ৈর নির্দেশে এলাকাবাসী তাঁকে একটি নির্জনস্থানে পুকুরপাড়ে তালপাতা দিয়ে কোনোমতে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে তার মধ্যে কোয়ারেন্টিনে রাখেন। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে এই স্বাস্থ্যকর্মী সেখানে অবস্থান করতে থাকেন।
ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে উদ্ধারের পর কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ লুৎফর রহমান বলেন, ‘ঝুপড়ি ঘর থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে তাদের ঘরের পাশে নতুন একটি ছাপড়া ঘর তুলে সেখানে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ওই ঝুপড়িঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ওই স্বাস্থ্যকর্মীর পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
পাশাপাশি কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মাহফুজুর রহমান বলেছিলেন, ‘বিকেলে আমি ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। তাঁকে আমরা কিছু খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। তাঁর কোনো সমস্যা হলে আমাদের জানাতে বলেছি। তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ফরিদপুর পাঠানো হবে। ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে যারা অমানবিকভাবে ঝুপড়ি ঘরের ভেতর রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’