ভৈরবে করোনাজয়ী ১৪ জনকে ফুলেল সংবর্ধনা

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে করোনাভাইরাসকে জয় করে বাড়ি ফেরা ১৪ জনকে ফুলেল সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে উপজেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। করোনাজয়ী এসব মানুষ ঢাকার কুর্মিটোলা, কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ভৈরবের ট্রমা হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। তারা সবাই ১০ এপ্রিল থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এসব চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভৈরবে করোনাভাইরাসে প্রথম আক্রান্ত হন চান মিয়া নামের একজন পুলিশ কর্মকর্তা। পরে আক্রান্ত হন চান মিয়ার চিকিৎসক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. কিশোর কুমার ধর এবং যে ফার্মেসি থেকে চান মিয়া ওষুধ কিনতেন, সেই ফার্মেসির ফার্মাসিস্ট তৌহিদ আহমেদ আর্থ কিশোর। এইভাবে পর্যায়ক্রমে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশসহ আক্রান্ত হন ৪৫ জন। এদের মধ্যে প্রথম দিকে আক্রান্ত ১৪ জন করোনাভাইরাসকে জয় করে বাড়ি ফিরলেন।
গত পাঁচ দিনে এই ১৪ জন নিজ নিজ চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে সুস্থ্যতার ছাড়পত্র পান। আজ রোববার দুপুরে ভৈরব ট্রমা হাসপাতালের করোনাভাইরাস আইসোলেশন সেন্টারে তাদের ফুলেল শুভেচ্ছার মাধ্যমে বিদায় দেওয়া হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুবনা ফারজানা, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ ও ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন তাদের হাতে ফুলের তোড়াসহ ফুলমূল তুলে দেন।
যারা প্রথম দফায় করোনা থেকে মুক্তি পেলেন তাঁরা হলেন, পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. চান মিয়া, মো. দেলোয়ার হোসেন, ফার্মাসিস্ট তৌহিদ আহমেদ আর্থ কিশোর, আরএমও ডা. কিশোর কুমার ধর, স্থানীয় প্রাণ কোম্পানির কর্মচারী রাজু আহমেদ, ছয় পুলিশ কনস্টেবল মো. আমিনুল ইসলাম, তানজিব আহমেদ, আবদুর রহিম, সোনিয়া আক্তার, দুলাল কবির ও জামাল উদ্দিন এবং ব্যবসায়ী কাজী আবুল হোসেন, তাঁর দুই মেয়ে হালিমা তুজ স্নিগ্ধা ও নওশিন শর্মিলী নীরা।
সংবর্ধনা শেষে করোনাজয়ীদের মধ্যে ডা. কিশোর কুমার ধর, পুলিশ সদস্য মো. আমিনুল ইসলাম ও সমাজকর্মী হালিমা তুজ স্নিগ্ধা তাদের করোনা জয়ের অভিমত ব্যক্ত করেন। তাঁরা প্রত্যেকেই জানান, করোনাকে ভয় না পেয়ে নিয়ম মেনে ওষুধ সেবন করতে হবে। পালন করতে হবে কিছু বিধিমালা। নিয়মিত গরম পানির গড়গড়া করা, লেবুর শরবত ও ফলমূল খেতে হবে। ব্যায়াম করতে হবে। প্রচুর ভিটামিন সি খেতে হবে। তবেই করোনাকে সহজে জয় করা যাবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ বলেন, ভৈরবে এ পর্যন্ত ৩৭০ জনের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে একটি ১৫ মাসের শিশুসহ ৪৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ২২ জন হলেন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী। ১০ জন পুলিশ সদস্য।
এ পর্যন্ত ১৪ জন সুস্থ হয়েছেন। আল্লাহর রহমতে এখনও পর্যন্ত ভৈরবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। এটি আমাদের জন্য সুখের খবর। তা ছাড়া যারা ভৈরব ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসা নিয়েছেন, তারা এখানকার সেবা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।’
ইউএনও লুবনা ফারজানা জানান, ১৪ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী সুস্থ হওয়ায় তিনি অনেক আনন্দিত। ভৈরবের প্রতিটি করোনা রোগী সুস্থ হয়ে ফিরবেন। এইভাবে একদিন এই পৃথিবী আবারও সুন্দর হয়ে উঠবে, এটি তিনি প্রত্যাশা করেন। তবে তাঁর প্রত্যাশা পূরণে তিনি ভৈরববাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে বলেন, সামাজিক বিচ্ছিন্নতার সরকারি নির্দেশনা মেনে সবাই যেন যার যার বাড়িতে অবস্থান করেন আর কিছুটা দিন।