ভৈরবসহ কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় ড্রাই অ্যামোনিয়া ফসফেট (ডিএপি) সারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বর্তমানে জেলার বিএডিসির কিশোরগঞ্জ সদর, ভৈরব, সরারচর গুদামে এই সারের মজুত শূন্য রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

চলতি ডিসেম্বর মাসে কিশোরগঞ্জ জেলায় ডিএপি সারের বরাদ্দ হয়েছে ছয় হাজার ৩৫৪ মেট্রিক টন। অথচ জেলার তিন গুদামে ডিএপি সারের মজুত নেই। ফলে ডিলারদের দোকানে কৃষকরা সার পাচ্ছে না।

বিএডিসি ভৈরব গুদামের সহকারী পরিচালক (সার) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত চার উপজেলার সার ডিলাদের বরাদ্দকৃত ৬০০ মেট্রিক টন (১২ হাজার বস্তা) ডিএপি সারের ব্যাংক পেঅর্ডার অফিসে জমা রয়েছে। ভৈরব গুদামে কোনো মজুদ না থাকায় ডিলারদের সার সরবরাহ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

ভৈরবে এখন রবি আবাদ চলছে। রবি ও বোরো আবাদে ফলন বাড়াতে ডিএপি সার ব্যবহার খুবই জরুরি। ডিলারদের অভিযোগ, বিএডিসি কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম থেকে আশুগঞ্জ নৌবন্দরে দুই হাজার মেট্রিক টন (৪০ হাজার বস্তা) ডিএপি সার পাঠিয়েছে। কিন্তু আশুগঞ্জ থেকে ভৈরব গুদামে সার না পাঠিয়ে অন্য জেলায় সরবরাহ করছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ভৈরবসহ কিশোরগঞ্জের ডিলাররা সময়মতো সার পাচ্ছে না বলে অভিযোগ ডিলারদের।

আগামী দুই সপ্তাহের মধ্য ডিএপি ডিলাররা না পেলে এই সারের মৌসুম থাকবে না। এতে কৃষক ও ডিলার উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সার না পেলে রবি ও বোরো আবাদে ফলন উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইন, হাওরের কৃষকরা ডিলারদের দোকানে ডিএপি সার না পেয়ে নানা জায়গায় ধর্না দিচ্ছে। তাই কৃষকদের চাহিদা পূরণে অবিলম্বে ডিএপি সার সরবরাহ দেওয়ার দাবি ডিলারদের।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ), কিশোরগঞ্জ জেলা ইউনিটের সহসাধারণ সম্পাদক আলামিন সৈকত জানান, কিশোরগঞ্জের চার উপজেলার বরাদ্দকৃত ডিএপি সার সরবরাহ দেওয়া হয় ভৈরব বিএডিসি সার গুদাম থেকে। গত তিনদিন ধরে ডিলাররা ১২ হাজার বস্তা সারের পেঅর্ডার নিয়ে গুদামে ধর্না দিচ্ছে। কিন্তু গুদামে ডিএপি সার না থাকায় সার দিতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ।

আলামিন সৈকত অভিযোগ করে বলেন, ‘আশুগঞ্জ বিএডিসির ডিএপি সারের কার্গো এসেছে। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতা দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ আশুগঞ্জ থেকে কিশোরগঞ্জের ডিলারদের সার সরবরাহ দিচ্ছে না। বিলম্ব করে সরবরাহ দিলে এই সার কৃষককদের কোনো কাজেই আসবে না।’

অষ্টগ্রাম উপজেলার সার ডিলার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ডিএপি সার নিতে তিন দিন ধরে ভৈরবে ঘুরছি কিন্তু সার পাচ্ছি না।’

বিএফএ-এর কোষাধ্যক্ষ মো. রফিকুল ইসালাম অবিলম্বে ভৈরবসহ কিশোরগঞ্জ জেলার বিএডিসির তিন গুদামে ডিএপি সার পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন।

কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের কিশোরগঞ্জের উপপরিচালক সাইফুল আলম জানান, ঘটনাটি কোনো ডিলার আমাকে জানায়নি। এখন জরুরিভিত্তিতে এই সংকট নিরসনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ জেলা বিএডিসির যুগ্মপরিচালক ফিরোজ উদ্দিন জানান, আশুগঞ্জ থেকে গতকাল মঙ্গলবার ১৪০ মেট্রিক টন ডিএপি সার সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিগগিরই সার সংকট কাটাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এতদিন কেন ব্যবস্থা নেননি? এ প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি তিনি।