কক্সবাজারে নিজেদের রেশন নিয়ে অসহায়দের ঘরে ঘরে সেনাবাহিনী

বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করা মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় ১৬ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। একই সঙ্গে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে এবং জরুরি প্রয়োজনে নির্দিষ্ট দোকানপাট ছাড়া সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
এ পরিস্থিতিতে জনগণকে সচেতন রাখার অংশ হিসেবে পর্যটন নগরী কক্সবাজার জেলা ও বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার চারটি উপজেলায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন ‘সকলের সুস্থতাই আমাদের কাম্য’ স্লোগানকে সামনে রেখে তাদের সার্বিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

মানুষকে করোনা বিষয়ে সচেতন করা, চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, জীবাণুনাশক কার্যক্রম পরিচালনা ও লকডাউন বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রান্তিক মানুষের কাছে নিজেদের রেশন বাঁচিয়ে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে সেনাবাহিনী। সংকটময় এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে, আধার কাটাতে অতি দরিদ্র মানুষের পাশে থাকার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে তারা। এ ছাড়া জনসচেতনতায় মাস্ক বিতরণ, স্যানিটাইজার বিতরণ, সেনাবাহিনীর গাড়ি দিয়ে রাস্তায় বিশুদ্ধ পানি ছিটানো, কক্সবাজার প্রবেশ পথে জরুরি প্রয়োজনে প্রবেশকৃত গাড়িগুলোতে জীবাণুনাশক ছিটানো, জনসচেতনতায় মাইকিং করা, ফুল হাতে দিয়ে পথচারীদের ঘরে ফেরানোসহ নানাবিধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে।

এরই ধারাবাহিকতায় আজ সোমবারও জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কর্মহীন হতদরিদ্র মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন রামু সেনানিবাসের সেনাসদস্যরা। তারা আর্তমানবতার সেবায় নিজেদের রেশন বাঁচিয়ে চাল, ডাল, আটা, আলু, পেঁয়াজ, তেল, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রকৃত অভাবগ্রস্ত, ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষদের হাতে পৌঁছে দিয়েছেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সম্যক জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিনা প্রয়োজনে কাউকে ঘর থেকে বের না হওয়ার অনুরোধ করেন সেনা জওয়ানরা। পাশাপাশি তারা বেশি বেশি হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ করেন। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর মেডিকেল টিম রামু ও পেকুয়া উপজেলায় অসহায় মানুষদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্যালাইন বিতরণের পাশাপাশি ছোট ছোট বাচ্চাদের চিপস ও চকলেট বিতরণ করেন সেনাসদস্যরা।

এদিকে গত ৮ এপ্রিল থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজার লকডাউন ঘোষণার পর থেকে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি চেকপোস্ট স্থাপন করেছে সেনাবাহিনী। জেলা শহর ছাড়াও আশপাশের উপজেলায় টহল কার্যক্রম ছিল চোখে পড়ার মতো। টহলরত সেনা সদস্যরা মানুষের সমাগম দেখলেই গাড়ি থামিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলছে এবং দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে ঘরে থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন। সেনাবাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে জরুরি প্রয়োজনে যারাই বাইরে বের হচ্ছে তাদের প্রায় সবাইকে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

পাশাপাশি কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায় ১১ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের ৩৪টি ক্যাম্পে করোনাভাইরাস সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করছে সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের সেনা সদস্যরা। সেনা ক্যাম্পের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা মাঝি ও স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে বৈঠক অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও সংস্থাগুলোর মাধ্যমে বার্মিজ ও ইংরেজি ভাষায় সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি ক্যাম্পগুলোতে দিনব্যাপী বার্মিজ এবং ইংরেজি ভাষায় সচেতনতামূলক মাইকিং চলমান রয়েছে। ক্যাম্প এলাকায় সেনাবাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক নতুন চেকপোস্ট স্থাপনের পাশাপাশি যৌথ টহল কার্যক্রমের পরিধি বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়েছে। সীমিত করা হয়েছে বহিরাগতদের চলাচলও।
রামু সেনানিবাস সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের ওপর যে দায়িত্ব বর্তেছে তা শতভাগ পালনে সচেষ্ট থাকবেন তারা। এলক্ষ্যে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবতার সেবায় যুদ্ধকালীন সময়ের মতোই তারা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। দেশের স্বার্থে সব ধরনের কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।