এখনো আশা জাগাচ্ছেন এক পোড়া রোগী, অন্যদের ক্ষেত্রে নিরাশা

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় হতবিহ্বল সারা দেশ। হঠাৎ এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যাবে, তা কেউ ভাবতেই পারেনি। তার পর থেকে একে একে স্বজনহারা হয়েছেন অনেকেই।
এখন পর্যন্ত মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় মারা গেছেন ২৭ জন। রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আরো ১০ জন। এই ১০ জনের মধ্যে ছয়জন আছেন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। এ ছাড়া পোস্ট অপারেটিভ ইউনিটে আছেন তিনজন। মামুন (৩০) নামের একজন সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন এনটিভি অনলাইনকে জানান, চিকিৎসাধীন ১০ জনের মধ্যে ৯ জনের অবস্থা গুরুতর। মামুন নামের যিনি সাধারণ ওয়ার্ডে আছেন, তাঁর ব্যাপারে চিকিৎসকরা আশাবাদী। আশা করা যাচ্ছে, তিনি ভালো হয়ে ফিরবেন। অন্য ৯ জনের ক্ষেত্রে এখনো ভালো কিছু আশা করা যাচ্ছে না। তাঁদের কেউ শঙ্কামুক্ত নন।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে গত শুক্রবার এশার নামাজের সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত ২৭ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ জনের মরদেহ তাঁদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মসজিদে বিস্ফোরণের ওই ঘটনার পরদিন দুপুরে পশ্চিম তল্লা এলাকার বোমওয়ালা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয়রা উদ্যোগ নিয়ে তিন এলাকার ১৯টি মসজিদ থেকে মোট ১৯টি গোসলের খাটিয়া ও ১৯টি লাশবাহী খাটিয়া এনে রেখেছিলেন। স্বজনরা অপেক্ষায় ছিলেন লাশের। সেই খাটিয়া ধরে ডুকরে কাঁদছিলেন আর বিলাপ করছিলেন স্বজনরা। সবাই যেন কাঁদতেই গিয়েছিলেন; একে অপরকে জড়িয়ে ধরে শুধুই কেঁদে নিজেদের কষ্ট নিবারণের চেষ্টা করছিলেন। পরিবেশ এমন ভারি ও মর্মান্তিক ছিল, যা নিজের চোখে না দেখলে ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন।
গত শনিবার বিকেল ৩টার দিকে যখন কুদ্দুস বেপারী নামের একজনের লাশ বোমওয়ালা মাঠে নেওয়া হয়, তখন সেখানে ভিড় করেন হাজার হাজার মানুষ। সারা তল্লা এলাকা কেঁদে উঠেছিল সেদিন। এরপর একে একে ওই দিন সাতটি লাশ নেওয়া হয় মাঠে। সে এক হৃদয়বিদায়ক দৃশ্য!
সে দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে বিস্ফোরণ ঘটার কিছু মুহূর্ত আগেই মসজিদ থেকে বের হওয়া বজলুর রহমান নামের একজন বলছিলেন, ‘আমার জীবনে এত ভয়াবহতা আমি আর কখনো দেখিনি। ঘরে ঘরে মৃত্যু, ঘরে ঘরে কান্না। এ দৃশ্য সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। একসঙ্গে সবাই নামাজ পড়লাম, তারা সবাই পুড়ে গেল।’ বলতে বলতে কেঁদে ওঠেন তিনি।