ফিলিপাইনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে হাজারো জনতার বিক্ষোভ

ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলাতে হাজার হাজার প্রতিবাদী নাগরিক দেশটির শত শত কোটি ডলারের বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে আর্থিক কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রকাশ করেছে। দেশটির কর প্রদানকারী নাগরিকদের আজ রোববারের (২১ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভ কোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়াই শেষ হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। খবর এএফপির।
তথাকথিত 'ভূতুড়ে অবকাঠামো' প্রকল্পগুলো নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। গত জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এই কেলেঙ্কারির কথা প্রকাশ করেন। দেশজুড়ে নজিরবিহীন কয়েক সপ্তাহের বন্যার পর এ তথ্য তিনি তুলে ধরেন দেশবাসীর সামনে।
মার্কোস গত সপ্তাহের শুরুতে বলেছিলেন, তিনি বিক্ষোভকারীদের প্রতি 'একটুও' দোষারোপ করছেন না। পাশাপাশি তিনি বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণভাবে করার আহ্বান জানান। এখনো বিক্ষোভকারীরা শান্তিপূর্ণভাবেই তাদের প্রতিবাদ প্রকাশ করছে।
তবে দু'টি আলাদা ঘটনায় তরুণ বিক্ষোভকারীদের পুলিশের দিকে পাথর ও বোতল ছুড়তে দেখা গেছে। এর মধ্যে একটিতে তারা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদমুখী একটি সেতুর কাছে একটি ট্রেইলারের টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসময় ১৭ জন তরুণকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
এক ঘন্টা পর, দ্বিতীয় সংঘর্ষে পুলিশ মুখোশধারী বিক্ষোভকারীর একটি দলের ওপর জল কামান ব্যবহার করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন সাংবাদিক দেখেছেন কিছু পুলিশ সদস্য পাথর কুড়িয়ে বিক্ষোভকারীদের দিকে ছুড়ে মারে। তবে মূল বিক্ষোভের সঙ্গে এগুলোর কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা, তা তাৎক্ষণিক পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি।
দিনের শুরুটা হয় রাজধানীর লুনেটা পার্কে সকালে এক শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশের মধ্য দিয়ে। এখানে স্থানীয়দের শহরের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল।
বিকেলে আরও হাজার হাজার মানুষ রাজধানীর ইডিএসএ হাইওয়েতে একটি জমায়েতে যোগ দেয়। এই এলাকাটি ১৯৮৬ সালের আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল ছিল যাতে মার্কোসের স্বৈরাচারী বাবাকে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন।
ইডিএসএ’র সমাবেশে আসা ৩০ বছর বয়সী মিটজি বাজেত নামের একজন ডিজাইনার বলেন, "আমি খুব কমই সমাবেশে যাই, কিন্তু এই পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে আমি সত্যি বলতে বাধ্য হয়েছি, 'আর নয়'।"
বামপন্থী জোট বাগং আলয়ানসাং মাকাবায়ানের ৫৬ বছর বয়সী চেয়ারম্যান টেডি ক্যাসিনো বলেন, দলটি কেবল চুরি হওয়া তহবিল ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে না, বরং জড়িতদের কারাদণ্ডেরও দাবি করছে। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি মানুষকে রাস্তায় নামতে এবং তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে বাধ্য করছে যাতে সরকার তাদের কাজ করতে বাধ্য হয়।’
শত শত কোটি ডলারের ক্ষতি
ফিলিপাইনের অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমান করে যে ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বন্যা-নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের দুর্নীতিতে ফিলিপাইনের অর্থনীতিতে প্রায় ১১৮.৫ বিলিয়ন পেসো (২ বিলিয়ন ডলার) ক্ষতি হয়েছে।
তবে, গ্রিনপিস জানিয়েছে, এই সংখ্যা আসলে ১৮ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।

চলতি মাসের শুরুতে, একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রায় ৩০ জন হাউস সদস্য এবং গণপূর্ত ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নগদ অর্থ নেওয়ার অভিযোগ আনেন।
এই কেলেঙ্কারি ইতোমধ্যেই কংগ্রেসের উভয় কক্ষে নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। তদন্ত শুরু হওয়ার পর হাউস স্পিকার মার্টিন রোমালডেজ, যিনি মার্কোসের একজন আত্মীয়, এই সপ্তাহের শুরুতে পদত্যাগ করেন।
রোববার, বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ ইডিএসএ বিক্ষোভে অংশ নেন।এই বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন ছিল দেশটির শক্তিশালী ক্যাথলিক চার্চের।
ফিলিপাইনের সরকারি তহবিল কেলেঙ্কারির একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, তবে দুর্নীতির জন্য দোষী প্রমাণিত উচ্চপদস্থ রাজনীতিবিদরা সাধারণত গুরুতর অপরাধে কারাদণ্ড থেকে রেহাই পেয়ে যান।