বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে মিথ্যাচারের অভিযোগ টিউলিপের বিরুদ্ধে

যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি আবারও নতুন এক সংকটে পড়েছে। এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের দাবি ছিল তিনি কখনও বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট পাননি—তবে ঢাকা সেই দাবির বিপরীতে প্রমাণ হাজির করেছে।
ঢাকার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লন্ডনে তার নামে একটি পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছিল, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর। এছাড়া ২০১১ সালের জানুয়ারিতে তার নামে একটি জাতীয় পরিচয়পত্রও ইস্যু হয়। খবর ডেইলি এক্সপ্রেসের।
দ্য টাইমস ও বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক প্রথম আলো উভয় সংবাদমাধ্যমে ওই নথির কপি প্রকাশ করা হয়েছে। বর্তমানে ৪৩ বছর বয়সী সিদ্দিক গত জানুয়ারিতে স্যার কিয়ার স্টারমারের দুর্নীতি বিরোধী মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এ সময় তিনি দাবি করে যে, তিনি "বিভ্রান্তি তৈরি করতে চান না"।
অভিযোগ রয়েছে, গণবিক্ষোভের মুখে অপসারিত হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার খালা শেখ হাসিনার মাধ্যমে ঢাকায় তাকে বেআইনিভাবে জমি দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন এ ঘটনাকে “ক্ষমতার অপব্যবহার” বলে আখ্যায়িত করেছে।
পাসপোর্ট ডাটাবেজে দেখা যাচ্ছে, ২০১১ সালের জানুয়ারিতে সিদ্দিক আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে নবায়নের আবেদন করেছিলেন। নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেজেও তার জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট নম্বর এবং ভোটার নম্বরের তথ্য পাওয়া গেছে। উভয় নথিতেই তার স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ঢাকার সেই বাড়ির নাম এসেছে, যা তার খালা শেখ হাসিনার।
তবে সিদ্দিকের আইনজীবীরা পুরো বিষয়টিকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার অভিযান” বলে দাবি করেছেন। তার পক্ষের আইনজীবী প্রতিষ্ঠান স্টিফেনসন হারউড ১২ আগস্ট ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানায়: “টিউলিপ সিদ্দিক কখনও বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি পাননি এবং শৈশবের পর থেকে কোনো বাংলাদেশি পাসপোর্টও তার ছিল না।”
নথি প্রকাশের পর সিদ্দিকের আইনজীবীরা দাবি করেন, এগুলো “জালিয়াতি” এবং বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের “রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ”।
বাংলাদেশের আইনে, শুধুমাত্র নাগরিকত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। দেশটিতে জন্ম নেওয়া ব্যক্তি বা যাদের বাবা-মায়ের একজন বাংলাদেশি, তারা নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকারী।
যদিও জন্মসূত্রে টিউলিপ সিদ্দিক দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারী, তিনি অতীতে নিজেকে বাংলাদেশি হিসেবে অস্বীকার করেছিলেন। ২০১৭ সালে এক সাক্ষাৎকারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন,

“আপনি কি আমাকে বাংলাদেশি বলছেন? কারণ আমি ব্রিটিশ, খুব সাবধান হোন আপনি কী বলছেন। আমি একজন ব্রিটিশ এমপি, আমি বাংলাদেশি নই।”
বর্তমানে তিনি ঢাকায় অনুপস্থিত অবস্থায় বিচারাধীন, যেখানে অভিযোগ রয়েছে যে তিনি তার খালাকে প্রভাবিত করে তার মা, ভাই ও বোনের জন্য জমি বরাদ্দ করিয়েছিলেন। তবে তিনি অভিযোগকে সরাসরি অস্বীকার করে একে “নির্যাতন ও প্রহসন” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।