শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে গ্রেপ্তার

শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহকে আজ শুক্রবার (২২ আগস্ট) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দেশটির নতুন বামপন্থি সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ বিরোধী নেতা তিনি। খবর এএফপির।
গত সেপ্টেম্বরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিশানায়েকে। এরপর থেকে শ্রীলঙ্কার দুর্নীতিবিরোধী ইউনিটগুলো এ অভিযান শুরু করে। গত নির্বাচনে দিশানায়েকের কাছে হেরে যান রনিল বিক্রমাসিংহে।
পুলিশের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, ৭৬ বছর বয়সী বিক্রমাসিংহেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে একটি ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার স্ত্রীর এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে লন্ডন সফর নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, তারা ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহারের অভিযোগে রনিল বিক্রমাসিংহের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে (রনিল) কলম্বো ফোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির করব।’
২০২৩ সালে হাভানা থেকে ফেরার পথে রনিল বিক্রমাসিংহে লন্ডন গিয়েছিলেন। সেখানে রনিল বিক্রমাসিংহে এবং তার স্ত্রী মাইথ্রি উলভারহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন, যেখানে তাকে সম্মানসূচক অধ্যাপক পদ প্রদান করা হয়েছিল। বিক্রমাসিংহে এর আগে দাবি করেছেন, তার স্ত্রীর ভ্রমণ খরচ তিনিই বহন করেছেন এবং এজন্য রাষ্ট্রীয় তহবিল ব্যবহার করা হয়নি।
রনিল বিক্রমাসিংহে লন্ডন সফরে তার পদের অপব্যবহার করেননি বলে জানিয়েছিল তার কার্যালয়। এই মাসে তার তৎকালীন তিনজন জ্যেষ্ঠ সহযোগী কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দেশটির অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির দাবি, বিক্রমাসিংহে তার ব্যক্তিগত সফরের জন্য সরকারি অর্থ ব্যবহার করেছেন এবং তার দেহরক্ষীদেরও রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে অর্থ প্রদান করা হতো।
দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে কয়েক মাস ধরে চলা রাজপথের বিক্ষোভের পর গোতাবায়া রাজাপাকশে পদত্যাগ করার পর ২০২২ সালের জুলাইয়ে তার বাকি মেয়াদের জন্য প্রেসিডেন্ট হন রনিল বিক্রমাসিংহে।
২০২৩ সালের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বিক্রমাসিংহে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের বেইলআউট পান। ২০২২ সালে দেশটির সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক মন্দার পর অর্থনীতিকে আবার স্থিতিশীল অবস্থায় ফেরানোর জন্য তাকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। রাষ্ট্রের রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য কঠোর কৃচ্ছ্রতামূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে তিনি কর দ্বিগুণ করেন এবং জ্বালানি ভর্তুকি বাতিল করেন। গত সেপ্টেম্বরে তিনি পুনর্নির্বাচনের দৌড়ে হেরে যান। তবে ২২৫ সদস্যের সংসদে তার জোট মাত্র দুটি আসন পেলেও তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী ব্যক্তি হিসেবে স্থান করে নেন।

নতুন বামপন্থি সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দুর্নীতির দায়ে দুই সাবেক জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীসহ প্রধান বিরোধী রাজনীতিবিদদের ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকশের পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধেও রাষ্ট্রীয় তহবিল অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলাও চলছে। তাদের অনেকেই বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
এই মাসের শুরুতে দিশানায়েকের সরকার পুলিশপ্রধানকে অভিশংসন করেছে। তার বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদদের সমর্থনকারী একটি অপরাধ চক্র পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়া কারাপ্রধানকেও দুর্নীতির অভিযোগে জেলে পাঠানো হয়েছে।