হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল, নতুন করে বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা

গাজা উপত্যকার শেষ বড় জনবসতিপূর্ণ এলাকাটি দখলে নিতে ইসরায়েলি সেনারা গাজা সিটিতে হামলা আরও জোরদার করেছে। গত কয়েক দিনে জেইতুন, সাবরা, রিমাল ও তুফাহসহ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে তীব্র বোমাবর্ষণ চালানো হয়েছে, যার ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি পুনরায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। খবর আল জাজিরার।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় দপ্তর (ওসিএইচএ) সতর্ক করে বলেছে, গাজার বাসিন্দাদের জোরপূর্বক দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়ার ইসরায়েলি পরিকল্পনা তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়াবে। রোববার (১৭ আগস্ট) জেইতুন এলাকায় অব্যাহত হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পাশাপাশি গাজার আল-আহলি আরব হাসপাতালে বিমান হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হন।
এদিকে, ইসরায়েলি সেনারা দাবি করেছে যে বাস্তুচ্যুতদের জন্য দক্ষিণে তাঁবু ও আশ্রয় তৈরির সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো একে গণহত্যা ও পরিকল্পিত বাস্তুচ্যুতির আড়াল হিসেবে আখ্যায়িত করছে।
হামাস জানিয়েছে, দক্ষিণে তাঁবু স্থাপনের এই পরিকল্পনা আসলে ‘গণহত্যার নতুন ধাপ’ এবং ভয়াবহ অপরাধ ঢাকতে সাজানো প্রচেষ্টা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের মুখোমুখি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, বেসামরিক নাগরিকদের “নিরাপদ অঞ্চলে” সরানো হবে। অথচ এসব এলাকা অতীতেও একাধিকবার বোমাবর্ষণের শিকার হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে আরও সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে তিন শিশু রয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুধাজনিত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫৮-এ। চলমান যুদ্ধে মোট নিহতের সংখ্যা প্রায় ৬২ হাজারে পৌঁছেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ সতর্ক করেছে, গাজা এক ভয়াবহ মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের মুখে। সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে, আর এক লাখের বেশি শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলছে, তারা বর্তমানে লক্ষ্যভুক্ত জনসংখ্যার মাত্র ৪৭ শতাংশের কাছে খাদ্য পৌঁছে দিতে সক্ষম হচ্ছে। যুদ্ধবিরতি ছাড়া পূর্ণ সহায়তা দেওয়া সম্ভব নয়।
গাজার গণমাধ্যম দপ্তর এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে, দুধ, পুষ্টি-সম্পূরক খাদ্য, মাংস, মাছ, দুগ্ধজাত পণ্য ও ফলমূলসহ সব ধরনের জরুরি সরঞ্জাম অবরোধ করে ফিলিস্তিনিদের পরিকল্পিতভাবে অনাহারে রাখা হচ্ছে।
গাজায় কাজ করা স্থানীয় এনজিও নেটওয়ার্কের পরিচালক আমজাদ শাওয়া বলেছেন, “আমরা সীমিত সামর্থ্যে খাবার, চিকিৎসা ও শিক্ষা সরবরাহের চেষ্টা করছি। কিন্তু মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। গাজা সিটিতে ১১ লাখ মানুষ রয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী, শিশু, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী। তাদের বাঁচানো এখন ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।”

জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ইসরায়েলের অবরোধ ও হামলা গাজায় “মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ ও গণহত্যার রূপ নিচ্ছে” এবং অবিলম্বে একটি টেকসই যুদ্ধবিরতি ছাড়া এ বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব নয়।