ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির দেওয়ার ঘোষণা কানাডার

গাজায় ইসরায়েলের নৃশংসতার ধারাবাহিকতার কারণে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ইচ্ছার ক্ষেত্রে এবার কানাডাও যোগ দিয়েছে। বুধবার (৩০ জুলাই) কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এই ঘোষণা দেন। এর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশের পাশে দাঁড়াল কানাডা।
কার্নি বলেন, অটোয়া আশা করেছিল আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান অর্জন করা যেতে পারে, কিন্তু সেই পদ্ধতি আর টেকসই নয়। কার্নি সাংবাদিকদের বলেন, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে চায়। এই মাসের শুরুতে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের একই রকম ঘোষণার পর কানাডার এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো।
তবে, গাজায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ ও পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপনের সম্প্রসারণের ওপর এই ধরনের স্বীকৃতি কীভাবে প্রভাব ফেলবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। উল্লেখ্য, এই দুটি অঞ্চল মিলেই একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
কার্নি বলেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সংস্কারের প্রতিশ্রুতি এবং ২০২৬ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতির ওপর ভিত্তি করে এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি জোর দিয়ে বলেছেন, হামাস ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ সরকারে বা ভবিষ্যতের কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে কেউ কেউ মনে করেন, এমন শর্ত একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নষ্ট করতে পারে।
কার্নি আরও বলেছেন, দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সমাধান (ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন) তখনই সম্ভব, যখন সবাই সহিংসতা ও সন্ত্রাস বাদ দিয়ে শান্তির পথ বেছে নেবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা ও ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন
ইসরায়েলের প্রধান বন্ধু যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধিতা করেছে। তাদের মতে, এমনটা করলে হামাসকে পুরস্কৃত করা হবে। এই মাসের শুরুতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে রীতিমতো তিরস্কার দিয়েছিলেন, যখন ম্যাক্রোঁ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানান। ট্রাম্প তখন ম্যাক্রোঁকে নিয়ে বলেছিলেন, তিনি যা বলেন, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এতে কোনো পরিবর্তন হবে না।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ট্রাম্প যুক্তরাজ্যের ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগেও আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্কটল্যান্ডে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারের সঙ্গে তার বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা হয়নি। ট্রাম্পের মন্তব্য ছিল, আপনি যদি এমনটা করেন, তাহলে আপনি বলতে পারেন যে, আপনি হামাসকে পুরস্কৃত করছেন। আমার মনে হয় না তাদের পুরস্কৃত করা উচিত। সত্যি বলতে, আমি এই মতের পক্ষে নই।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ও অধিকার গোষ্ঠীগুলোর অভিযোগ সত্ত্বেও মার্কিন মিত্র ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলের প্রতি তাদের সমর্থনে আপোষহীন। ২০২৩ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় ৬০ হাজারেও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ও বেশিরভাগ ভূখণ্ডকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে।
কানাডার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান
গত বছর কানাডা ঘোষণা করেছিল, তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদ্বেগের মধ্যে ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানির জন্য নতুন পারমিট প্রদান বন্ধ করবে। কিন্তু এই সপ্তাহের শুরুতে অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলোর একটি জোট ইসরায়েলি কর রেকর্ডের ওপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে নতুন বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে যে, ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠানো অব্যাহত রয়েছে।
দলগুলো সমালোচনা থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য কানাডিয়ান সরকারকে ‘মিথ্যার জাল’ তৈরি করার অভিযোগ করেছে ও অটোয়াকে ইসরায়েলে বিদ্যমান সমস্ত অস্ত্র রপ্তানির পারমিট বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে।