পদত্যাগ করেছেন ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়

ভারতের ১৪তম উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় পদত্যাগ করেছেন। দুই বছর মেয়াদ বাকি থাকতেই তিনি স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে সোমবার (২১ জুলাই) পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে। উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ও এর আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। খবর এনডিটিভির।
একজন স্পষ্টভাষী নেতা হিসেবে জগদীপ ধনখড়ের উপরাষ্ট্রপতি থাকার সময়টা ছিল বেশ আলোচিত। তার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল, তিনি বিরোধীদের সঙ্গে প্রায়ই বিতর্কে জড়িয়ে পড়তেন ও বিচার বিভাগ নিয়ে কড়া মন্তব্য করতেন, বিশেষ করে ক্ষমতা বণ্টনের বিষয়ে।
৭৪ বছর বয়সী জগদীপ ধনখড় এই মাসের শুরুতে বলেছিলেন, তিনি সঠিক সময়ে অবসর নেবেন। তার পদত্যাগের পর বিরোধী দল কংগ্রেস মন্তব্য করেছে, তার এই সিদ্ধান্তে চোখে দেখা কারণের বাইরেও আরও কিছু থাকতে পারে।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে লেখা পদত্যাগপত্রে জগদীপ ধনখড় উল্লেখ করেছেন, তার পদত্যাগ অবিলম্বে কার্যকর হবে। তিনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, আমাদের মহান গণতন্ত্রে উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে আমি যে অমূল্য অভিজ্ঞতা ও অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করেছি তার জন্য আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। এই উল্লেখযোগ্য সময়ে ভারতের অসাধারণ অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও অভূতপূর্ব তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করা এবং তাতে অংশ নেওয়া একটি সৌভাগ্য ও তৃপ্তির বিষয়। আমাদের জাতির ইতিহাসের এই রূপান্তরমূলক যুগে সেবা করা সত্যিকার অর্থে সম্মানের বিষয়।
রাজস্থানের একটি ছোট গ্রাম কিথানার এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করা জগদীপ ধনখড়ের দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে পৌঁছানোর যাত্রা প্রায়শই দক্ষতা, সাহস ও দৃঢ়তার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। চিত্তৌরগড়ের সৈনিক স্কুল ও পরে রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ছিলেন তিনি। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে তিনি রাজস্থান হাইকোর্ট ও পরে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন।
পিভি নরসিমা রাও প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন জগদীপ ধনখড় কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে রাজস্থানে অশোক গেহলটের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন, এমনকি চন্দ্রশেখরের নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী হিসেবেও কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে তার আকস্মিক নিয়োগ তাকে আবারও রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে। রাজ্যপাল হিসেবে তিনি একজন কঠোর পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। প্রায়শই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারকে আইনশৃঙ্খলা, যুক্তরাষ্ট্রীয়তা ও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগসহ একাধিক বিষয়ে জবাবদিহি করতে বলেছেন।

আইনজীবী থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা এই ব্যক্তি রাজ্যসভার উচ্চকক্ষে বিরোধীদের সঙ্গে একাধিক বিষয়ে সমানভাবে কঠোর ছিলেন। এর ফলে তাকে পদ থেকে অপসারণের চেষ্টা করা হয়েছিল। যদিও এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তবুও তিনিই প্রথম উপরাষ্ট্রপতি যার বিরুদ্ধে এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। জগদীপ ধনখড় এই নোটিশকে বাইপাস সার্জারির জন্য মরিচা পড়া সবজির ছুরি ব্যবহারের সঙ্গে তুলনা করে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
২০২২ সালের আগস্টে অনুষ্ঠিত উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জগদীপ ধনখড় ৭১০টি বৈধ ভোটের মধ্যে ৫২৮ ভোট পেয়ে বিরোধী প্রার্থী মার্গারেট আলভাকে পরাজিত করেছিলেন। তিনি ৭৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন, যা ১৯৯২ সালের পর থেকে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়।