মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা বন্ধে ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক সহায়তা বন্ধের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে এক গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এদের এক-তৃতীয়াংশই ছোট শিশু। খবর এএফপির।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) প্রকাশিত এই গবেষণাটি চিকিৎসাবিষয়ক খ্যাতনামা জার্নাল ল্যানসেটে ছাপা হয়েছে। এটি এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন স্পেনের সেভিয়ায় বিশ্বের নেতা ও ব্যবসায়ী নেতারা এক দশকের সবচেয়ে বড় সাহায্য সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।
২০০১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে মার্কিন উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইড উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ৯ কোটি ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু রোধ করেছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। কিন্তু ট্রাম্পের নেতৃত্বে জানুয়ারিতে মার্কিন প্রশাসন ফের ক্ষমতায় ফেরার পরপরই বিদেশি সহায়তা ৮৩ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেয়।
দুই সপ্তাহ পর ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ইলন মাস্ক বলেন, ইউএসএইডকে "উডচিপারে ফেলা হয়েছে"।
গবেষণার সহলেখক, বার্সেলোনার ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের গবেষক দাভিদে রাসেলা বলেন, “এই অর্থের ধাক্কা অনেক দেশের জন্য মহামারী বা বড় আকারের সশস্ত্র সংঘাতের মতোই ধ্বংসাত্মক হবে।”
মডেলিংয়ের মাধ্যমে গবেষকরা ২০৩০ সালের মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখ অপ্রয়োজনীয় মৃত্যু হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন। এর মধ্যে ৪৫ লাখের বেশি শিশু মারা যেতে পারে, অর্থাৎ বছরে প্রায় ৭ লাখ শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি হবে। তুলনা হিসেবে বলা যায়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ১ কোটি সৈন্য নিহত হয়েছিল।
গবেষণায় দেখা গেছে, ইউএসএইডের সহায়তা পেলে শিশু মৃত্যুহার ৩২ শতাংশ কমেছে, যা মৃত্যুহার হ্রাসে বড় অবদান রেখেছে। ইউএসএইডের অর্থায়নে এইচআইভি/এইডস, ম্যালেরিয়া ও অবহেলিত ট্রপিক্যাল রোগ থেকে মৃত্যুহার যথাক্রমে ৬৫ শতাংশ এবং ৫০ শতাংশ কমেছে।
রাসেলা বলেন, “এখন সহায়তা কমানোর সময় নয়, বরং বাড়ানোর সময়।”
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ইউএসএইডের অর্থায়ন বন্ধ হওয়ার পর জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য প্রধান দাতারাও বিদেশি সহায়তা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে, যা মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
যদিও মৃত্যু নিয়ে ভয়াবহ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, পরিস্থিতি পরিবর্তিত হলে সহায়তা বাড়ালে এই সংখ্যা দ্রুত কমে আসতে পারে বলেও গবেষকরা উল্লেখ করেছেন।

সেভিয়ায় চলমান সম্মেলনে বিশ্বের অনেক নেতা অংশ নিলেও যুক্তরাষ্ট্র যোগ দিচ্ছে না।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক ও সহলেখক জেমস মাকিঙ্কো বলেন, “প্রতিটি মার্কিন নাগরিক প্রতিদিন গড়ে মাত্র ১৭ সেন্ট বা বছরে প্রায় ৬৪ ডলার ইউএসএইডে অবদান রাখে। মানুষ যদি জানত এই ছোট অবদানই কত লাখ জীবন বাঁচাতে পারে, তাহলে তারা সহায়তা বন্ধের বিপক্ষে থাকত।”