খামেনির পতন হলে কী হবে ইরানে?

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরানের শাসন ক্ষমতায় থাকা ধর্মীয় নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। শাসনযন্ত্র পরিবর্তনে ইসরায়েল বাজি ধরলেও প্রকৃত চিত্র হলো ইরানের বিরোধী মত দ্বিধাবিভক্ত এবং পরিবর্তন হলেও নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না যে, নতুন শাসক অপেক্ষাকৃত কম চরমপন্থার হবে, বিশ্লেষকরা এমনটাই বলছেন। খবর দ্য ডনের।
ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমে হামলার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল প্রমাণ করেছে, দেশটির পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ধ্বংসের মাধ্যমেই তারা ক্ষান্ত হবে না, এর বাইরেও তাদের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে–সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বলেন, আমরা জানি খামেনি কোথায় লুকিয়ে আছেন; তখন তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা ইরানি শাসকদের সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকির বার্তাই পাওয়া যায়।
২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক আগ্রাসন ও ২০১১ সালে লিবিয়ায় ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন হস্তক্ষেপ সম্পর্কে ইউরোপীয় নেতাদের ভীতিকর অভিজ্ঞতা রয়েছে। ওইসব হস্তক্ষেপের ঘটনায় সাদ্দাম হোসেন ও মুয়াম্মার গাদ্দাফির মতো স্বৈরশাসকের পতন হলেও দুটি দেশই বছরের পর বছর ধরে রক্তাক্ত হওয়ার ক্ষত বয়ে বেড়ায়।
কানাডায় সম্প্রতি শেষ হওয়া জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘শাসক বদলাতে সামরিক ব্যবস্থা নেওয়া সবচেয়ে বড় ভুল, কেননা এটি শুধু বিশৃঙ্খলার দিকেই নিয়ে যায়। কেউ কি একবার চিন্তা করেছেন ২০০৩ সালে ইরাকে কী করা হয়েছিল বা এরপরে লিবিয়ায় কী হয়েছিল? এগুলো কি ভালো কোনো ধারণা ছিল? আমি বলব, না।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানে খামেনির পতন হলে একটি শূন্যতা সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি থাকবে এবং কট্টরপন্থি বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) মাধ্যমে বা সে ধরনের আদর্শে বিশ্বাসী ইরানি সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে সেই শূন্যতা পূর্ণ হতে পারে।

এ বিষয়ে কার্নেগি এনডোমেন্টের ফেলো নিকোল গ্রাজেসকি বলেন, ইসরায়েলের আক্রমণগুলোই প্রমাণ করছে তারা পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধের চেয়ে ইরানের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনটাই বেশি চায়। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, ইসরায়েল ইরানের সামরিক স্থাপনা বা ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে, কিন্তু পাশাপাশি এটাও দেখতে হবে তারা ইরানি নেতৃত্ব ও শাসন ব্যবস্থার প্রতীক হিসেবে পরিচিত সম্প্রচার মাধ্যমগুলোতেও হামলা চালাচ্ছে।
গ্রাজেসকি আরও বলেন, যদি শাসকের পতন হয়, তবে উদারপন্থি গণতান্ত্রিক সরকারের আশা তৈরি হবে। তবে এক্ষেত্রে বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বদলি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থেকে যায়।
বিরোধী মত হিসেবে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রাজনীতিক রেজা পাহলাভি, যিনি ক্ষমতাচ্যুত শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলাভির ছেলে। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ভেঙে পড়ার প্রান্তে রয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, খামেনি ভয়ার্ত ইঁদুরের মতো মাটির নিচে পালিয়ে বেড়ান।
রেজা পাহলাভি দীর্ঘদিন থেকেই তার বাবার পথ অনুসরণ করে ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের উষ্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোকপাত করে আসছেন।