যাত্রী ভাড়া না বাড়িয়ে ভারতে রেলমন্ত্রীর ‘চমক’

চলতি বছরের ভারতীয় রেল বাজেটে যাত্রী ভাড়া না বাড়িয়ে রীতিমতো চমক দিলেন ভারতের রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। আজ বৃহস্পতিবার দেশটিতে ২০১৬-১৭ সালের পেশ করা হয় ভারতের রেল বাজেট। এই রেল বাজেটের দিকে তাকিয়ে ছিলেন বহু মানুষ। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রেল ভাড়া বাড়বে কি না, তা নিয়ে সংশয়ও চড়ছিল। অবশেষে যাবতীয় সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে রেল বাজেটে যাত্রীভাড়া না বাড়িয়ে আম জনতার মন জয় করে নিলেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এই রেলবাজেটকে রেলমন্ত্রীর ‘চমক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
ভাড়ার পাশাপাশি এবার রেলের পণ্য মাশুলও বাড়ানো হলো না। আগামী এক বছর ভারতীয় রেল কোন দিকে চলবে এদিনই সংসদে তারই পথ দেখালেন ভারতের কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। রেলমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় বারের জন্য রেলবাজেট পেশ করতে গিয়ে সুরেশ প্রভু বারে বারে যাত্রী সুরক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন।
একইসঙ্গে বিকল্প পথেই রেলের আয় বাড়ানোর ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি। রেলমন্ত্রী বলেছেন, আর্থিক দিক থেকে রেলের শক্তিশালী হওয়া জরুরি। আশা করি দেশের মানুষের প্রয়োজন ও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে এবারের রেল বাজেট।
তবে রেল পরিষেবা উন্নত করার জন্য যাত্রী সুরক্ষার বেশ কয়েকটি নতুন প্রকল্প এবং চলতি প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের ওপর নজর দিয়েছেন রেলমন্ত্রী। রেল বাজেটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দৃষ্টিহীনদের জন্য ব্রেইলের সুবিধা যুক্ত কোচের ব্যবস্থা, জেনারেল কামরায় মোবাইল চার্জিংয়ের সুবিধা, লোকো পাইলটদের জন্য ট্রেনের মধ্যেই শৌচাগারের সুবিধা, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্ল্যাটফর্ম টিকেটের ব্যবস্থা করা, নারী যাত্রীদের সুরক্ষায় প্রতিটি কামরায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রস্তাব রাখা, মহিলাদের জন্য মোট সিটের ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ, শিশু নিয়ে যাতায়াতকারী নারী যাত্রীদের সুবিধার জন্য ট্রেনেই শিশুখাদ্যের ব্যবস্থা, বেবি বোর্ডের ব্যবস্থা করা, যাত্রীদের বিনোদনের কথা মাথায় রেখে ট্রেনে এফএম চালুর প্রস্তাব, সব স্টেশনকে সিসিটিভির আওতায় আনা প্রভৃতি।
আগামী অর্থবর্ষে ভারতীয় রেলের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে রাখা হয়েছে এক কোটি ৮৪ লাখ রুপির কিছু বেশি। এ ছাড়া ২০২০ সালের মধ্যে চার হাজার কোটি রুপি আয়ের লক্ষ্যে দিল্লিতে রিং রেল চালুর লক্ষ্যমাত্রা আছে এবারের বাজেটে। পাশাপাশি রেলের পরিকাঠামো আধুনিকীকরণের জন্য পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে ৮.৫ লাখ কোটি রুপি ব্যয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গোটা ভারতে নতুন করে ২৫ হাজার কিলোমিটার ব্রডগেজ লাইন বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরেই ১০০টি স্টেশনেওয়াই-ফাই পরিষেবা এবং পরবর্তী দুই বছরে ৪০০টি স্টেশনে এই পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
জাপান ও কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ পরিকল্পনায় দুর্ঘটনাহীন রেল গঠনের লক্ষ্যেও জোর দেওয়া হয়েছে এই বাজেটে। রেলে দুর্ঘটনা এড়াতে অত্যাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছেন রেলমন্ত্রী।
প্রবীণ নাগরিকদের জন্য ভারতীয় রেলের লোয়ার বার্থে ৫০শতাংশ আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকছে। রেলের কাজে স্বচ্ছতা আনতে এবার থেকে সব কাজ অনলাইনে করার কথাও বলেছেন রেলমন্ত্রী।
এ ছাড়া নতুন অর্থবছরের পরিকল্পনার মধ্যে আছে, মুম্বাই-আহমেদাবাদের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালু। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা ও শহরতলির মধ্যে ইস্ট-ওয়েস্টসহ কলকাতা মেট্রোকে আরো ১০০ কিলোমিটার সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর মন্ত্রী জানিয়েছেন, এখন থেকে ভারতীয় রেলের কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখা হবে উপগ্রহের ছবিতে।
এদিকে নতুন এই রেল বাজেট পেশের পর রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর ভুয়সী প্রশংসা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ প্রভুর দ্বিতীয় রেল বাজেটের প্রশংসা করে বললেন, রেলের ভাড়া না বাড়িয়ে পুঁজি বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ এই বাজেট রেলের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের প্রতি লক্ষ্য রেখেই তৈরি এবং এই বাজেট গরিবের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতার বাজেট বলে উল্লেখ করেছেন নরেন্দ্র মোদি।
তবে সাধারণ যাত্রী ভাড়া না বাড়ায় নতুন এই রেল বাজেটকে বিজেপি স্বাগত জানালেও রেলমন্ত্রীর এই বাজেটের সমালোচনা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছে এই রেল বাজেট অপরিপক্ব পরিকল্পনাপ্রসূত এবং পুরোপুরি মানুষের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ।