দেহবলে কুলায় না, তবু মনোবলে হারেনি পিয়াসা
জন্মগতভাবে ৭৫ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধী সে। উচ্চতা মাত্র তিন ফুট। ঠিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারে না। এমনকি ভালোভাবে বসতেও পারে না সে। লেখাপড়া করতে গেলে শুয়ে পড়ে ছোট ছোট দুটি হাত দিয়ে কলম আঁকড়ে ধরে লিখতে হয় তাকে। এতকিছুর পরও শুধু মনের জোরেই সব শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে এক শিক্ষার্থী।
প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সামনে এগিয়ে যাওয়া এই শিক্ষার্থীর নাম পিয়াসা মহালদার। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া জেলার শান্তিপুরের রাধারানি নারীশিক্ষা মন্দিরের ছাত্রী সে। সেখান থেকেই এ বছর কলা বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে পিয়াসা।
শারীরিক সমস্যার কারণে বসে লিখতে পারে না পিয়াসা। তাই বিশেষ ব্যবস্থায় শুয়ে শুয়েই পরীক্ষা দিচ্ছে সে। উচ্চ মাধ্যমিকের মতো মাধ্যমিকেও কোনো সহায়ক লেখক বা রাইটারের সাহায্য ছাড়াই নিজের চেষ্টায় পরীক্ষার খাতায় লিখছে সে।
পরীক্ষায় শান্তিপুরের ওরিয়েন্টাল একাডেমি স্কুলে সিট পড়েছে পিয়াসা মহালদারের। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক সুনিল কুমার দে জানান, এতটা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে শুয়ে শুয়ে যে দ্রুত গতিতে ওই ছাত্রী লিখছে তা যেকোনো সুস্থ ও স্বাভাবিক পরীক্ষার্থীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে। তার ওপর হাতের লেখাও বেশ পরিষ্কার ওই ছাত্রীর। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য ওই ছাত্রীর পরীক্ষার জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে বেঞ্চের ওপর শুয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে সে।
রাধারানি নারীশিক্ষা মন্দিরের প্রধান শিক্ষিকা ঝুমা সেন জানান, পিয়াসা প্রতিবন্ধী হলেও বরাবরের মেধাবী ছাত্রী। পঞ্চম শ্রেণী থেকে এই স্কুলেই পড়াশোনা করছে সে। মাধ্যমিকে চারটি বিষয়ে লেটার মার্ক নিয়ে পাস করেছিল। উচ্চ মাধ্যমিকেও যথেষ্ট ভালো ফল করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তবে প্রতিবন্ধকতা নিয়ে পরীক্ষা দিয়েও মনে কোনো রকম ক্ষোভ নেই পিয়াসার। সে জানায়, পরীক্ষা ভালোই হচ্ছে। ফলাফল যে যথেষ্ট ভালো হবে সে ব্যাপারেও যথেষ্ঠ আশাবাদী সে।

কলকাতা সংবাদদাতা