জিকা ভাইরাস আতঙ্কে টাটা গাড়ির নাম বদল

বিশ্বব্যাপী চলছে জিকা ভাইরাস আতঙ্ক। দক্ষিণ ও উত্তর আমেরিকা, আফ্রিকা এমনকি ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়েছে জিকা ভাইরাস। আর এই ভাইরাস নিয়ে এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থার ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
আর দোর্দণ্ডপ্রতাপ এই ভাইরাসের আতঙ্কেই নতুন গাড়ির নাম বদলে দিয়েছে ভারতীয় গাড়ি নির্মাতা সংস্থা ‘টাটা’। এনডিটিভি জানায়, ২০১৬ সালে টাটার নতুন যে গাড়ি বাজারে আসার কথা ছিল, তার নাম ঠিক করা ছিল ‘জিকা’। আর এই ‘জিকা’র বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছিলেন আর্জেন্টিনার তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসি।
এতকিছুর পরও সেই গাড়ির নামবদলের ঘোষণা দিয়েছে টাটা। এই ব্যাপারে টাটার বক্তব্য, যেহেতু জিকা একটি ক্ষতিকর ভাইরাসের নাম হিসেবে দুনিয়াজোড়া পরিচিতি পেয়ে গেছে, তাই প্রতিষ্ঠানের সুনাম অব্যাহত রাখতে নামবদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, মশাবাহিত জিকা ভাইরাস ‘বিস্ফোরকের মতো’ ছড়াচ্ছে। পৃথিবীর ২০টি দেশে এখন মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধকোটি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এমন অবস্থায় দক্ষিণ আমেরিকাসহ আফ্রিকায় জিকা ভাইরাসের দ্রুত বিস্তারের পরিপ্রেক্ষিতে সারা পৃথিবীতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কোনো গর্ভবতী মা জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাঁর অনাগত শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হতে পারে এবং ওই শিশুর মস্তিষ্কের গঠন থাকতে পারে অপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল ব্রাঞ্চ বর্তমানে এই ভাইরাসের টিকা নিয়ে কাজ করছে। এই ব্রাঞ্চের বিজ্ঞানীরা এরই মধ্যে উপদ্রুত এলাকায় সফর করে ভাইরাসে আক্রান্তদের রক্তসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তবে তাঁরা বলছেন, এই ভাইরাসের উপযুক্ত টিকার পরীক্ষা চালাতে তাঁদের দুই বছরের বেশি সময় লাগতে পারে। আর তা পারা গেলেও মানুষের কাছে প্রতিষেধকটি সহজলভ্য করতে এক দশকের বেশি সময় লেগে যেতে পারে।
এরই মধ্যে জিকা ভাইরাসের ব্যাপারে ব্রাজিলসহ বিশ্বব্যাপী সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিশেষ করে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে নেওয়া হয়েছে চরম সতর্কতামূলতা ব্যবস্থা। লাতিন আমেরিকার লাখ লাখ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ব্রাজিলের অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, এই ভাইরাসের কারণে দেশটির সরকার নারীদের আগামী দুই বছর গর্ভধারণ থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিয়েছে।
পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডার অতিপরিচিত জিকা (স্থানীয় ভাষায় ‘বাড়ন্ত’) বনাঞ্চলের আদিবাসীদের মধ্যে ১৯৪৭ সালে প্রথম এ ভাইরাসের সন্ধান মেলে। এ কারণে এর নাম দেওয়া হয় ওই বনেরই নামে।
সন্ধান পাওয়ার সাত বছর পর নাইজেরিয়ায় প্রথম মানবদেহে এ ভাইরাস সংক্রমণের তথ্য পাওয়া যায়। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলোতে।
গত বছরের অক্টোবরে ব্রাজিলে নতুন করে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মেলার পর মাত্র চার মাসের মধ্যে বহু দেশে তা ছড়িয়ে পড়ে।
এডিস মশা থেকে সাধারণত জিকা ভাইরাস মানুষের দেহে ছড়িয়ে থাকে। এ ভাইরাস মানুষের শরীরে একবার প্রবেশ করলে প্রাথমিক অবস্থায় জ্বর, হাতে-পায়ের সংযোগস্থলে ব্যথাসহ নানা ছোটখাটো কিছু শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। কিন্তু তা কম সময়ের মধ্যে সেরেও যায়।
তবে বিপত্তি তৈরি হয় গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে। গর্ভাবস্থায় জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মাইক্রোফেলাসি তথা বিকৃত ও ছোট মাথা নিয়ে জন্ম নিতে পারে শিশু। এসব শিশুর বুদ্ধিমত্তার ঘাটতি থাকে, শারীরিক বৃদ্ধি কম হয়, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।