সেই তরুণীর সরাসরি পোস্ট সরাল ইনস্টাগ্রাম

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ইনস্টাগ্রাম তাদের ‘লাইভ-ব্লগ’ থেকে ধর্ষণের শিকার মার্কিন তরুণীর পোস্ট সরিয়ে ফেলেছে। নিউইয়র্কের বাসিন্দা ওই তরুণী সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার একটি হোস্টেলের বাথরুমে ধর্ষণের শিকার হন। এর পর পরই তিনি ইনস্টাগ্রামের সরাসরি পোস্টে নিজের ভয়াবহ সময়ের বর্ণনা করেন।
আজ মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দি ইনডিপেনডেন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইনস্টাগ্রাম লাইভ ব্লগের নীতিবহির্ভূত হওয়ায় ওই পোস্ট সরানো হয়েছে বলে ওই তরুণীকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। বার্তায় আরো বলা হয়, ‘পোস্টবিষয়ক নির্দেশিকা ভালো করে পড়লে ইনস্টাগ্রামের সঙ্গে নিরাপদে যুক্ত থাকা যাবে।’
ধর্ষণের শিকার ওই তরুণীর পরিচয় প্রকাশ করেছে ইনডিপেনডেন্ট। সংবাদমাধ্যমটির খবর অনুযায়ী, ২৭ বছরের ওই তরুণীর নাম অ্যাম্বার আমর। অ্যাম্বার একজন মানবাধিকারকর্মী, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় গেছেন ‘ধর্ষণ বন্ধ করো, শিক্ষিত হও’ শীর্ষক কর্মসূচির প্রচারের কাজে।
এর আগে অ্যাম্বারের সরাসরি ব্লগের ওই পোস্টে দেখা যায়, একটি বাথরুমের মেঝেতে বসে কাঁদছেন অ্যাম্বার। আর ওই ছবির নিচেই ‘ধর্ষণের’ ঘটনার বর্ণনা দেন অ্যাম্বার। তিনি বলেন, দুদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। হোস্টেলের এক ব্যক্তি তাঁকে গোসল করাতে বাথরুমে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে জোর করে হাঁটু গেড়ে বাসানো হয়। শারীরিক দুর্বলতার জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন অ্যাম্বার।
সম্বিত ফিরে পেয়ে অ্যাম্বার আবিষ্কার করেন ওই ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে সম্ভোগে লিপ্ত। অ্যাম্বারের বর্ণনায় ধর্ষণের ওই চিত্রটি উঠে আসে এভাবেই।
ধর্ষণের পর ওই ব্যক্তি যখন দেখেন জ্ঞান ফিরে এসেছে অ্যাম্বারের, তখন তিনি ‘যত্ন করে’ তাঁকে গোসল করিয়ে দেন। যাতে গোসলের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে থাকা ধর্ষণের আলামতও মুছে যায়।
মানবাধিকারকর্মী অ্যাম্বার বলেন, ‘যখন আমাকে ধর্ষণের পর লোকটি চলে গেল তখন আমার মনে লজ্জা, ঘৃণা ও ব্যথা ছাড়া আর কোনো অনুভূতিই কাজ করেনি। আমার কাছে ধর্ষণের অভিজ্ঞতা এই প্রথম, আর আমি খুবই অসহায় হয়ে আবিষ্কার করলাম এই ভয়াবহ অনুভূতির ভেতর দিয়ে যাওয়ার পর একজন ধর্ষিতা কী অনুভব করে।’
ইনডিপেনডেন্টকে অ্যাম্বার জানান, এর পরই আমি ভাবলাম আমার বসে থাকলে চলবে না। এই ঘটনা জানাতে হবে মানুষকে। আমার জন্য নয়, সেই সব নারীর জন্য যারা বছরের পর বছর এই নির্মম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরও মুখ খুলতে সাহস পায় না।
ধর্ষণের পর ঘটনাস্থল থেকে ছবি প্রকাশের পর ইনস্টাগ্রামে আরো দুটি ছবি প্রকাশ করেন অ্যাম্বার। এর একটিতে তিনি একটি ‘ধর্ষণ পরীক্ষা যন্ত্রের’ ওপর শুয়ে আছেন।
ইনস্টাগ্রামে লেখা অ্যাম্বার তাঁর বার্তাটি শেষ করেন এভাবে, ‘আমি জানি অনেকেই এখন আমাকে অভিযুক্ত করবেন, কেন আমি ওই ব্যক্তিকে আমাকে গোসল করাতে নিয়ে যেতে দিলাম। কিন্তু আমি অসুস্থাবস্থায় আমাকে গোসল করিয়ে আনতে বলেছি, আমি তাঁকে ধর্ষণের আমন্ত্রণ জানাইনি।’
নিজের লেখার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশেরও সমালোচনা করেন অ্যাম্বার। তিনি লেখেন, ‘আমার ওপর এই নির্যাতনের ঘটনা শুনে পুলিশ এমন আচরণ করছিল যেন এই ঘটনা খুবই স্বাভাবিক। বাড়ি গিয়ে দুটো ওষুধ খেয়ে নিলেই তো হয়!’