জাতিসংঘের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় সু চি

রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনার পরিবেশ তৈরি করতে যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার কর্মীসহ উন্নয়ন সংস্থাদের দেশে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে মিয়ানমার।
এর মাধ্যমে নিজের হারানো খ্যাতি ফিরিয়ে আনতে পারবেন বলে আশা করছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। এ বিষয়ে জাতিসংঘের একজন দূত নিয়োগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক আবারও ভালো হবে বলেও আশা করছেন মিয়ানমারের সরকারি কর্মকর্তারা।
গত বছরের আগস্টে মিয়ানমারের মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন অঞ্চলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। হিসাব অনুযায়ী, কয়েক দশক ধরে আরো প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা কমিশনের ১৫টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি থেকে ঊর্ধ্বতন কূটনীতিকরা বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার পরিদর্শনে যাচ্ছেন। অং সান সু চির সঙ্গে সাক্ষাতের আগে বাংলাদেশ সফর করবেন রাষ্ট্রদূতরা। এরপর হেলিকপ্টারে করে তাঁরারা রাখাইন রাজ্যে যাবেন।
অং সান সু চির মিত্ররাও আশা করছেন, তিনি হয়তো জাতিসংঘের কূটনীতিকদের সন্তুষ্ট করতে পারবেন।
কর্মকর্তারা নিজেরাও পুরো পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন আর এমন সহিংসতা যাতে আর কখনো না হয় সেজন্য ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
এমনকি অং সান সু চির মিত্ররাও স্বীকার করেছেন যে, শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে জাতিসংঘের হাইকমিশনার সাম্প্রতিক সময়ে বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার জন্য মিয়ানমারের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক, সহায়ক ও নিরাপদ হয়নি।’ পরিস্থিতি পরিবর্তনে সরকারের দায়বদ্ধতার কথাও তিনি বলেন।
তবে শরণার্থীরা বলছে, মিয়ানমারে ফিরে যেতে তারা কিছু দৃশ্যমান নিরাপত্তা চায়। যেমন, আইনি পরিচয়, নাগরিকত্ব এবং রাখাইনে নিরাপত্তা।
আর এর প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরেই রাখাইন থেকে বিতাড়িত অধিবাসীদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা, তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। এতে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা সাহস ফিরে পাবে। আরেকটি পদক্ষেপ হিসেবে দুই দেশের সীমান্তে ‘জিরো লাইনে’ থাকা ছয় হাজার রোহিঙ্গার ফিরিয়ে নিতে পারে মিয়ানমার।
কমিশনের পক্ষ থেকে এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনের একটি পর্যালোচনা চাওয়া হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে মেনে নেওয়া হচ্ছে না।
গত মাসে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সু চির দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ উইন মিন্ট। সু চির ছেলেমেয়েরা বিদেশি জাতীয়তার হওয়ায় মিয়ানমারের সংবিধান তাঁর প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তিনি দেশের কাউন্সিলর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, যা প্রেসিডেন্ট পদের চাইতেও বড় বলে মনে করা হয়। কেননা, স্টেট কাউন্সিলর হিসেবে সু চিই সরকার নিয়ন্ত্রণ করবেন।
আন্তর্জাতিক সংস্থা রেড ক্রসের প্রেসিডেন্ট পিটার মওরার রাখাইনের নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের সাহায্য দিয়ে আসছিলেন। মওরার জানান, মিয়ানমার সরকার গ্রামগুলোকে নতুন করে তৈরি করছে এবং রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
মওরার বলেন, ‘কিন্তু আমরা যা দেখছি, মানুষ এখনো তাদের বিশ্বাস করছে না যে সেখানে তারা নিরাপদ। আমরা লোকেদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি।’