ফের গুয়ানতানামো বে কারাগার খোলার নির্দেশ ট্রাম্পের

বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর কারাগার হিসেবে পরিচিত কিউবা দ্বীপের গুয়ানতানামো বে কারাগার খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর প্রথম স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণে এ ঘোষণা দেন। পরে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়, এ-সংক্রান্ত এক নির্বাহী আদেশপত্রে স্বাক্ষর করেছেন প্রেসিডেন্ট।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলায় টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর পরই আলোচনায় আসে গুয়ানতানামো বে কারাগারের কথা। তখন অনেক তালেবান যোদ্ধা ও চরমপন্থীকে বন্দি করে সেখানে রাখা হয়। বন্দিদের ওপর মার্কিন সেনাদের ভয়াবহ নির্যাতনের বিভিন্ন ছবিও তখন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সমলোচনা তুঙ্গে ওঠে।
পরে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন একশর বেশি বন্দি এই কারাগার থেকে মুক্তিও পান। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত তাঁর আগের উত্তরসূরির নেওয়া পদক্ষেপের বিপরীত।
প্রশাসন প্রয়োজনে শত্রুযোদ্ধাদের প্রতিহত করতে আটক করতে পারে, এটা জানানোর জন্যই গুয়ানতানামো বে কারাগার-সংক্রান্ত আদেশ স্বাক্ষর করা হয়েছে বলে হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদীরা কখনো কখনো নিছক অপরাধী না। তারা শত্রুযোদ্ধা। আর যখন বিদেশিদের ধরা হয়, তখনো তাদের সন্ত্রাসীর মতই বিবেচনা করা উচিত।’
তথাকথিত ইসলামী স্টেটের (আইএস) নেতা আবু বকর আল বাগদাদির উদাহরণ দিয়ে মুক্তিপ্রাপ্ত ১০০ কারাবন্দি সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘অতীতে আমরা বোকার মতো ভয়ংকর একশ সন্ত্রাসীকে মুক্তি দিয়েছি শুধু তাদের সঙ্গে যুদ্ধের ময়দানে আবারও দেখা করার জন্য।’
ওবামা প্রশাসন এক বছরের মধ্যে কারাগারটি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য একটি আদেশপত্র স্বাক্ষর করেছিলেন। কিন্তু আট বছরের মধ্যে তাদের মুক্তি দেওয়া যাবে না—আইনপ্রণেতাদের এমন কঠোর বাধার সম্মুখীন হন তিনি।
ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারের সময়ই গুয়ানতানামো বে কারাগার খুলে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘কিছু খারাপ মানুষকে আমি কারাগারটি ভরে ফেলতে চাই।’
‘ঐক্যের আহ্বান’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এটা প্রমাণ হয়েছে বিশ্বের আর কোনো দেশ আমেরিকার মতো নয়। তিনি দেশটির রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাকর্মীদের সব মতভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অভিবাসন ও অবকাঠামোগত বিষয়ে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার জন্য আজ আমি আপনাদের সবার প্রতি আহ্বান জানাই। আমাদের সব বিভেদ সরিয়ে রাখার কথা বলছি। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
‘আইএস নিয়ে আরো কিছু করার আছে’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আইএসবিরোধী যুদ্ধে আরো অনেক কিছু করার রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন। স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণে তিনি এ বিষয়ে সতর্ক করেন।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ইরাক ও সিরিয়া ভূখণ্ডের প্রায় শতভাগ এলাকা আইএসমুক্ত করেছে বলে ট্রাম্প ঘোষণা দেন। একসময় দেশ দুটির বিশাল এলাকা এ জঙ্গি গ্রুপের দখলে ছিল। এ যুদ্ধক্ষেত্রে মার্কিন সৈন্যের উপস্থিতি অব্যাহত রাখার ব্যাপারে তার প্রশাসনের যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আরো অনেক কিছু করার রয়েছে।’
২০১১ সালে ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার ব্যাপারে তাঁর পূর্বসূরি বারাক ওবামার ভুলের কথা তুলে ধরে এ ব্যাপারে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আইএসকে পরাজিত না করা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।’
২০০৩ সাল থেকে ইরাকে মার্কিন সৈন্য মোতায়েন রয়েছে।
‘পিয়ংইয়ং মার্কিন ভূখণ্ডের জন্য হুমকি হতে পারে’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার সতর্ক করে বলেছেন, উত্তর কোরীয় সরকার পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির একেবারে কাছাকাছি চলে এসেছে। এ ক্ষেত্রে পিয়ংইয়ংয়ের এই অগ্রগতি মার্কিন ভূখণ্ডের জন্য হুমকি হতে পারে।
ট্রাম্প বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির বেপরোয়া তৎপরতা আমাদের ভূখণ্ডের জন্য খুব শিগগির হুমকি হতে পারে। কখনো যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, তা প্রতিরোধে আমরা দেশটির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি।’
ট্রাম্প তাঁর ভাষণের সময় উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসা দেশটির এক নাগরিকের প্রতিও সম্মান জানান।