রোহিঙ্গাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে মিয়ানমারকে আহ্বান

মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত কমিশনের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং শান্তি ফিরিয়ে না আনলে সহিংস জঙ্গিবাদের উত্থান হতে পারে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছে। কারণ মিয়ানমারের অং সান সু চির সরকার এর আগে এই কমিশনের মতামত মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছিল।
মিয়ানমারের পশ্চিমে রাখাইন রাজ্যটি সবচেয়ে দরিদ্র মানুষ অধ্যুষিত। এখানে দীর্ঘদিন ধরেই গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব চলে আসছে। বিশেষ করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল নিন্দা জানিয়ে বলছে, বৌদ্ধধর্মের অনুসারীরা মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে।
রোহিঙ্গা ও বৌদ্ধ অনুসারীদের মধ্যে বিদ্যমান বিভেদ দূর করতে কফি আনানকে নিয়োজিত করেছিলেন সু চি।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিশনের পরামর্শ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে আরো জঙ্গিবাদ ও সহিংসতার ঘটনা বাড়তে পারে। বলা হয়, ‘বিরাজমান সমস্যা দ্রুত চিহ্নিত করা না গেলে উভয় সম্প্রদায়ের অনুসারীদের মধ্য থেকে মৌলবাদী হওয়ার ঝুঁকি আছে।’ এতে রোহিঙ্গাকে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ রাষ্ট্রহীন সম্প্রদায় হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘স্থানীয় লোকজনের অসন্তোষ যদি উপেক্ষিত থাকে, তাহলে জঙ্গিবাদীরা তাদের নিজেদের পক্ষে ভেড়াতে পারবে সহজেই।’
কমিশনের মূল পরামর্শগুলোর মধ্যে রয়েছে, রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের চলাফেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা এবং শরণার্থী শিবির বন্ধ করা। এসব শিবিরে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে, যারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
এ ছাড়া মিয়ানমার সরকারকে ১৯৮২ সালের বিতর্কিত আইন পুনর্বিবেচনার জন্য বলা হয়েছে, যাতে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে নাগরিক হতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে বিনিয়োগ বাড়াতে এবং সংবাদমাধ্যমকে অবাধে প্রবেশের সুযোগ দিতে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
গত বছর অক্টোবরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে অভিযান চালায়। এতে বহু রোহিঙ্গা নিহত হয়। এর আগেই অজ্ঞাতপরিচয় রোহিঙ্গারা পুলিশের সীমান্ত চৌকিতে হামলা চালায়।
এর পর থেকে ৮৭ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, পালিয়ে আসা লোকজনের কাছে তারা হত্যা, গণধর্ষণ, গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার কথা জেনেছে, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক স্ট্রেইটসটাইমস জানিয়েছে, কফি আনান কমিশনের পরামর্শ সু চির সরকারের ওপর চাপ তৈরি করবে, যাতে তারা রাখাইনে দ্রুত পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু তবে তিনি জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধধর্ম অনুসারীদের কাছ থেকে তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েছেন। তারা রোহিঙ্গাদের ঘৃণা করে এবং দেশ থেকে তাদের বহিষ্কারের দাবি জানায়। যদিও দেশটির শক্তিধর সেনাবাহিনীর ওপর সু চির খুব নগণ্য নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
মিয়ানমারের অনেকেই মনে করে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী।
অক্টোবর হামলার আগে রোহিঙ্গাদের মধ্যে জঙ্গিবাদ ও সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ার ঘটনা খুব কম ছিল।
কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ফিল রবার্টসন বলেন, সু চির সরকারের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।