গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসা কিশোরীটি এখন গ্র্যাজুয়েট

২০০৬ সালের ৯ জুন। ফিলিস্তিনের গাজার বেইত লাহিয়া এলাকার সুদানিয়া সমুদ্রসৈকতে পারিবারিক বনভোজনে সবার সঙ্গে আনন্দ করছিল হুদা ঘালিয়া নামের এক কিশোরী। ঠিক সেই সময়ে তার পরিবারের ওপর হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। মুহূর্তেই বদলে যায় সবকিছু, অন্ধকার হয়ে আসে চারপাশ। ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন হুদার বাবা, সৎমা ও পাঁচ ভাইবোন। এ ঘটনায় আহত হন ওই কিশোরী ও তার মা।
কী করবেন বুঝতে না পেরে হুদা চিৎকার করে তার বাবা, সৎমা ও ভাইবোনের মৃতদেহের পাশে ছোটাছুটি করতে থাকে। তার এই চিৎকার বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হয় বিশ্বজুড়ে।
গাজায় ইসরাইলি হামলার পর কেটে গেছে অনেক দিন। এরপর ১১ বছরে আরো একবার ইসরাইলি হামলায় আক্রান্ত হয়েছে গাজা। তখনো হামলায় ভুক্তভোগী হয়েছে হুদার মতো অনেক শিশু-কিশোর। গণমাধ্যমে আলোচনায় এসেছে তাদের ছবি। আড়ালে পড়ে গেছে হুদা। এতদিনে অবশ্য তিনি পরিণত তরুণী।
সম্প্রতি গাজার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়াহ ও আইন বিষয়ে স্নাতক (গ্র্যাজুয়েশন) শেষ করেছেন হুদা। তাঁর এ সাফল্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান আদেল আওয়াদালাহ বলেন, ‘হুদা আর পাঁচ-১০ জনের মতো নয়। সে প্রত্যেক নিপীড়িত ফিলিস্তিনির মূর্ত প্রতীক। সে আমাদের অন্তরাত্মায় জায়গা করে নিয়েছে। তাই তার দেখাশোনা করা এবং তার পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব।’
গাজায় হামলায় বিধ্বস্ত দিনটির কথা উল্লেখ করে হুদা বলেন, ‘আমি সেই মেয়ে। ২৩ বছর বয়সে আজ আমি গাজার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়েছি। আমি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও যাঁরা আমার কথা শুনছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি আমার মায়ের প্রতিও কৃতজ্ঞ। তিনি সব সময় আমার পাশে থেকেছেন। তিনি আমার খুব যত্ন নিয়েছেন, সব সময় লেখাপড়া শেষ করতে উৎসাহিত করেছেন।’
হুদার ঘটনাটি গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হওয়ার পর দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছিল ইসরাইল। আর এই ঘটনায় ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছিলেন।