যুক্তরাষ্ট্রে ১১ বছর বয়সে ধর্ষককে বিয়ে!

গর্ভবতী হয়ে ধর্ষককে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার বাসিন্দা এক মার্কিন নারী। তখন তিনি ছিলেন মাত্র ১১ বছর বয়সের শিশু!
পরে শেরি জনসন নামের ওই নারী ৭৩ বছর বয়সে এসে নিজের জীবন নিয়ে একটি বই লেখেন। বইটির নাম ‘ফরগিভিং অ্যান্ড আনফরগিভেবল’।
ওই বই লেখার পর সম্প্রতি তিনি মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের কাছে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি তাঁর দুর্বিষহ শৈশবের কথা জানান।
সাক্ষাৎকারে শেরি জানান, তাঁর বয়স যখন ১০ বছর, তখন তাঁকে রক্ষণশীল প্যান্টেকোস্টাল চার্চের গির্জার দুই যাজক ধর্ষণ করেন। এরপর তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন।
পরে সরকারি শিশুকল্যাণ কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার তদন্তে এলে তাঁর পরিবার তাঁকে জোর করে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয়। এর মাধ্যমে তাঁর পরিবার ও চার্চ কর্তৃপক্ষ মিলে ধর্ষকদের ফৌজদারি মামলা থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিনিধির কাছে শেরি বলেন, ‘তখন আমাকে জোর করা হয়েছিল। একদিন আমার মা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি বিয়ে করতে চাই কি না। আমার উত্তর ছিল, আমি জানি না। আমি কীভাবে স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করব? তখন আমার মা বলেছিলেন, তা ঠিক আছে। কিন্তু আমার মনে হয়, আমরা তোমাকে তাড়াতাড়িই বিয়ে দিয়ে দেবো।’
এ ঘটনার এক সপ্তাহের মাথায় তাঁর বিয়ে হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন শেরি।
আত্মজীবনীতে শেরি লিখেছেন, ওটা ছিল ভয়ংকর জীবন। শেষ পর্যন্ত আমার ওই বিয়ে ভেঙে গিয়েছিল। নষ্ট হয়েছিল আমার শৈশব ও তারুণ্যের দিনগুলো। আমি পরপর নয়টি সন্তান নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। নিদারুণ অর্থকষ্টে ঠিকমতো খাওয়াতেও পারিনি শিশুদের। আর সবই হয়েছিল আমার পরিবারের ভীরুতার জন্য।’
নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাসহ ২৭টি অঙ্গরাজ্যে মা-বাবার অনুমতি সাপেক্ষে শিশু বিয়ে বৈধ। এক জরিপ অনুযায়ী কেবল ২০১১ সালেই যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ বছরের কম বয়সী ৯৪ লাখ শিশু ও কিশোরীর বিয়ে হয়।
এই শিশু বিয়ের বিষয়ে নানা সময়ে প্রতিবাদ ও নিন্দা হওয়ার পরও দেশটির আইনসভা ও আদালত কেউই এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
নিজের বই ‘ফরগিভিং অ্যান্ড আনফরগিভেবল’-এ ফ্লোরিডায় বাল্যবিবাহ রদ করার দাবি জানিয়েছেন শেরি জনসনও। পরে সিনথিয়া স্টাফোর্ড নামের এক মানবাধিকারকর্মীও ফ্লোরিডা রাজ্যে ১৬ বছরের কম বয়সের মেয়েদের বিয়ে রদ চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। কিন্তু গত বছর রাজ্যটির আদালত তাঁদের আবেদন খারিজ করে দেন। একইভাবে নিউ হ্যাম্পশায়ারের আরো একটি বিলেও সাড়া দেয়নি রাজ্য কর্তৃপক্ষ।