রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে ইউক্রেন, আরও নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা পশ্চিমাদের

রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা দ্বন্দ্বমুখর হলেও এগিয়ে চলেছে বলে আজ বুধবার জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। অন্যদিকে, ইউক্রেনে ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের মধ্যেই পশ্চিমারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছে। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিউপোলের রাস্তায় রাস্তায় রুশ বাহিনীর সঙ্গে ইউক্রেন বাহিনীর লড়াই চলছে। রুশ বোমা হামলায় বিধ্বস্ত হয়ে গেছে শহরটি। রুশ বাহিনী শহরটি ঘেরাও করে রেখেছে। রাশিয়ার তীব্র উড়োজাহাজ হামলা মারিউপোলকে ‘ছাইয়ে ভরা মৃত্যুপুরিতে’ পরিণত করছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে নগরের সিটি কাউন্সিল।
খাবার, পানি, বিদ্যুৎ বা উষ্ণতার কোনো ব্যবস্থা ছাড়াই হাজার হাজার মানুষ মারিউপোলের বিভিন্ন ভবনে আটকা পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আঞ্চলিক গভর্নর পাভলো কিরিলেঙ্কো বলেছেন, মারিউপোলে বেসামরিক লোকজন এবং ইউক্রেনের সেনারা রাশিয়ার গোলাগুলির মুখে পড়ছে।
মারিউপোলে প্রায় চার লাখ মানুষ বসবাস করত। রুশ সামরিক বাহিনী এবং রাশিয়া-সমর্থিত একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী দল এরই মধ্যে মারিউপোলের প্রায় অর্ধেকটা দখল করে নিয়েছে। এক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার বরাতে রুশ বার্তা সংস্থা আরআইএ এ তথ্য জানিয়েছে।
কিন্তু, এত কিছুর মধ্যেও আজ সকালে দেওয়া ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা নিয়ে আশার বাণী শুনিয়েছেন। যদিও গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে একাধিবার আলোচনায় খুব একটা ফল আসেনি।
জেলেনস্কি বলেন, ‘এটি (আলোচনা) খুব কঠিন, কখনও কখনও দ্বন্দ্বমুখর হয়ে ওঠে। তবে, আমরা ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছি।’
ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে রুশ বাহিনী অনুপ্রবেশ ও হামলা ৩৫ লাখের বেশি মানুষকে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। একই সঙ্গে পুতিন এমন পদক্ষেপের অভূতপূর্ব প্রভাব পড়েছে রাশিয়ার অর্থনীতিতেও। দেশটির অর্থনীতি একরকম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রুশ-ইউক্রেন সংকটের জেরে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে রাশিয়ার বিস্তৃত সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা গত কয়েক দশকে কেউ ভাবতেও পারেনি।
পুতিন ইউক্রেন সীমান্তে সৈন্য পাঠিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে আক্রমণের নির্দেশ দেন। ইউক্রেনকে নিরস্ত্র করতে এবং দেশটির পশ্চিমাপন্থি নেতৃত্ব হটাতে পুতিন এ হামলাকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে দাবি করছেন। ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর কিছু দিনের মধ্যেই মারিউপোল বন্দরনগরী এ যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকে মারিউপোল চলমান যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আজভ সাগরের ওপর অবস্থিত এ বন্দরনগরী দখল করতে পারলে রাশিয়া পশ্চিমে ক্রিমিয়ার উপদ্বীপের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হবে। ২০১৪ সালে মস্কোর দখল করা ওই উপদ্বীপ বর্তমানে রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
অন্যদিকে, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর আরও চাপ সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে।

চলতি সপ্তাহে ব্রাসেলসে ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানে বাইডেন ও ইউরোপীয় নেতারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞাগুলোকে কঠোর করার নতুন ব্যবস্থা ঘোষণা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মার্কিন কর্মকর্তা এবং অভ্যন্তরীণ নথির বরাতে সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে—আগামীকাল বৃহস্পতিবার নাগাদ রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের তিন শতাধিক সদস্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা কাদের ওপর এবং কত জনকে নিষেধাজ্ঞা দেব, সে বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’
হোয়াইট হাউসের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার যখন (মার্কিন) প্রেসিডেন্ট আমাদের মিত্রদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাবেন, তখন একযোগে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণার ব্যবস্থা করা হবে।’
বাইডেনের ইউরোপ সফরে ওই মহাদেশে জ্বালানি সুরক্ষা বাড়ানোর যৌথ পদক্ষেপের ঘোষণাও আসার কথা রয়েছে।
ইউরোপ রাশিয়ার গ্যাসের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। এবং ইউক্রেনের প্রতিবেশী পোল্যান্ডের সঙ্গে সংহতি প্রকাশে সে দেশ সফর করবেন বাইডেন।
এ ছাড়া বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোর জোট—গ্রুপ অব টোয়েন্টিতে (জি২০) রাশিয়াকে আর রাখা উচিত হবে কি না, তা মূল্যায়ন করছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা। সূত্রের বরাতে রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রাশিয়া অস্তিত্বের হুমকিতে পড়লেই কেবল পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করবে। স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পেসকভ দাবি করেন—ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য ও পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে। আর, পারমাণবিক অস্ত্রের সম্ভাব্য ব্যবহারের বিষয়ে মস্কোর বক্তব্যকে ‘বিপজ্জনক’ বলে অভিহিত করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন।