মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ ৪ কর্মকর্তার ওপর আবারও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ চার সামরিক কর্মকর্তার ওপর আরেক দফানিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। রোহিঙ্গাসহ সংখ্যালঘু নিপীড়নের জন্য নতুন করে এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তরা হলেন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং, সেনাবাহিনীর উপপ্রধান ভাইস সিনিয়র জেনারেল সোয়ে উইন, ৩৩ লাইট ইনফানট্রি ডিভিশনের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অং অং ও ৯৯ লাইট ইনফানট্রি ডিভিশনের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থান ও।
গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট মিয়ানমারের সেনাকর্মকর্তাদের কালো তালিকাভুক্ত করে। যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে মিয়ানমারের ওইসব সামরিক কর্মকর্তার কোনো সম্পদ থাকলে তা জব্দ করা হবে। পাশাপাশি তাঁদের সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখতে পারবেন না কোনো মার্কিন নাগরিক।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর চালানো গণহত্যার দায়ে দেশটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দায়েরকৃত মামলার শুনানি শুরু হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। শুনানির শুরুতে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্বোধ হত্যাকাণ্ড বন্ধে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গাম্বিয়ার আইন ও বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদো। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টার দিকে ওই মামলার শুনানির শুরু হয়।
আজ বুধবার আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেবে বিবাদী মিয়ানমার। এর পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার হবে যুক্তিতর্ক।
গাম্বিয়ার পক্ষে মামলা লড়ছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল এবং আইন ও বিচারমন্ত্রী আবুবকর তামবাদো। তিনি ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় গণহত্যার মামলায় এক দশকের বেশি সময় লড়াই করেছেন।
অন্যদিকে মিয়ানমারের পক্ষে আদালতে বক্তব্য দেবেন ও যুক্তি খণ্ডন করবেন দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি। মিয়ানমার টাইমস জানিয়েছে, সু চির সঙ্গে থাকবেন দেশটির আইনজীবীরাও।
গত ১১ নভেম্বর রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনে মিয়ানমারের নামে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে মামলা করেছিল গাম্বিয়া। ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে গাম্বিয়া এ মামলা করে। নিধনযজ্ঞ পেরিয়ে যাওয়ার প্রায় আড়াই বছর পর প্রথমবারের মতো কোনো দেশ এমন পদক্ষেপ নেয়।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত, যা বিশ্ব আদালত হিসেবেও পরিচিত তাতে দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের অভিযানের মধ্যে ছিল হত্যা, গুরুতর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি সাধন, ভৌত বিনাশ বয়ে আনার মতো পরিস্থিতি তৈরি, জন্ম রোধের ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া ও জোরপূর্বক স্থানান্তর। এগুলো গণহত্যার বৈশিষ্ট। কারণ এসবের উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গা গোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করে দেওয়া।
রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট আগস্টে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এক কঠোর বিদ্রোহ দমন অভিযান শুরু করে। এ সময় গণধর্ষণ, হত্যা ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়াসহ জাতিগত নির্মূল অভিযান থেকে বাঁচতে সাত লাখের অধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। চলতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত জাতিসংঘের অনুসন্ধানী দলের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত রাখাইনে ছয় লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। অত্যন্ত শোচনীয় পরিস্থিতিতে যাদের বসবাস করতে হচ্ছে।