করোনাভাইরাসের কারণে ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে ইতালি। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। ভাইরাসটি মোকাবিলায় এক রকম যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে দেশটির সরকার। এরই মধ্যে পুরো ইতালি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও ইতালির জনগণ লকডাউনের নিয়ম মানছে না। অনেকে আবার গ্র্যাজুয়েশন পার্টিরও আয়োজন করেছে। কেউ কেউ বাড়ির বাইরে খেলাধুলায় মেতে উঠেছে। আর এজন্য ক্ষুব্ধ ইতালির বিভিন্ন অঞ্চলের মেয়র ও নেতারা। সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিভিন্ন শহরের মেয়র ও নেতাদের ক্ষোভ প্রকাশের বার্তা।

ক্যাম্পানিয়া অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট ভিনসেঞ্জো ডি লুকা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমার কাছে খবর এসেছে, কেউ কেউ নাকি গ্র্যাজুয়েশন পার্টি আয়োজন করতে চায়। আমরা সেখানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ পাঠাব।’

অন্যদিকে, মেসিনা শহরের মেয়র ক্যাটেনো ডি লুকাও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনারা আমার শহরে ঘোরাঘুরি করতে পারবেন না। আমি আপনাদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধ করতে পারব না। কিন্তু বিনা প্রয়োজনে জনসাধারণের চলাফেরার স্থানে পা রাখায় নিষেধাজ্ঞা দিতে পারব।’

গুয়ালদো শহরের মেয়র ম্যাসিমিলিয়ানো এক বার্তায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনারা কি চান আমরা সবাই অসুস্থ হই? আপনারা সবাই দায়িত্বজ্ঞানহীন, নির্বোধ। বড় নির্বোধ।’

রোজানো ভেনেতো অঞ্চলের মেয়র মোরেনা মার্তিনি ক্ষুব্ধ স্বরে বলেন, ‘একটা বিষয় আমাকে পাগল করে দিচ্ছে। মানুষ লুকিয়ে হেয়ার ড্রেসারের কাছে যাচ্ছে, সেলুনে যাচ্ছে! ঠিক আছে, যান। হেয়ার ড্রেসারের কাছে যান, সেলুনে যান, যাতে মৃত্যুর সময় আপনার মাথার চুল আঁচড়ানো থাকে, ওয়াক্স করানো থাকে।’

এদিকে বারি শহরের মেয়র অ্যান্তোনিও ডিক্যারো নিজেই রাস্তায় নেমে পড়েছেন। একটি সৈকতের পাশে টেবিল টেনিস খেলায় মেতে ওঠা দুজনকে বাড়িতে ফেরানোর জন্য মেয়রকে বলতে শোনা যায়, ‘বাড়িতে যান। ভিডিওগেম খেলুন।’

অ্যান্তোনিও ডিক্যারো আরো বলেন, ‘আমি এ শহরের মেয়র। আমি আপনাদের আদেশ মানতে বাধ্য করব। আমি কোনো অজুহাত শুনব না। আপনাদের অবশ্যই বাড়িতে ফিরতে হবে। আপনাদের সবাইকেই বাড়িতে থাকতে হবে।’

ডিক্যারো আরো বলেন, ‘এটি কোনো সিনেমা নয়। আপনারা উইল স্মিথ নন। আপনাদের বাড়িতে যেতে হবে।’

এদিকে, লকডাউনে রয়েছে পুরো ইতালি। কিন্তু তাও ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলছে। তাই আরো কঠোর অবস্থানের আহ্বান জানানো হয়েছে।

এরই মধ্যে ইতালিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৮২০ জনে। এর মধ্যে একদিনেই মৃত্যু হয়েছে ৭৪৩ জনের। এ ছাড়া শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০ হাজার।

এ ছাড়া সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে মোট ১৯ হাজার ৫০ জনের। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার লাখ ২৬ হাজার ৬৪৮ জনে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে এক লাখ ছয় হাজারেরও বেশি মানুষ। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বার্তা সংস্থা বিএনও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।