করোনাভাইরাস : ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারির ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার টেলিভিশনে প্রচারিত এক বক্তব্যে ট্রাম্প ইউরোপ থেকে আগামী ৩০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ স্থগিত করার ঘোষণা দেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
তবে এই ‘কঠোর, কিন্তু প্রয়োজনীয়’ নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাজ্যের জন্য প্রযোজ্য নয় বলে জানান ট্রাম্প। যুক্তরাজ্যে এখন পর্যন্ত ৪৬০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে এক হাজার ১৩৫ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৩৮ জন মারা গেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের দেশের সীমানার মধ্যে ভাইরাস আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি যেন প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছি।’
‘এই নতুন নিয়ম (আগামীকাল) শুক্রবার মধ্যরাত থেকে কার্যকর হবে,’ যোগ করেন ট্রাম্প।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপর করোনাভাইরাস যে প্রভাব ফেলেছে, তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোকে ঋণ দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকদের করোনায় সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকলেও চলতি মাসের শুরুতে বেশ কয়েকজন নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। এর পর থেকেই ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। নিউইয়র্ক শহরের উত্তরে নিউ রোচেলে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। নিউ রোচেলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই এলাকায় যাদের স্বেচ্ছায় আইসোলেটেড (আলাদা হয়ে থাকা) হয়ে যেতে বলা হয়েছে, তাদের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করবে মার্কিন ন্যাশনাল গার্ড।
যুক্তরাষ্ট্রের করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের গভর্নর তাঁর অধীনে থাকা একাধিক কাউন্টিতে সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছেন। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মারা যাওয়া ৩৮ জনের অন্তত ২৪ জনই ওয়াশিংটনের বাসিন্দা ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সংক্রামক রোগ ও অ্যালার্জি বিষয়ক জাতীয় সংস্থার পরিচালক ডা. অ্যান্থনি ফওচি এরই মধ্যে কংগ্রেসকে জানিয়েছেন, পরিস্থিতির ‘আরো অবনতি হবে’, তবে তা নির্ভর করবে আক্রান্তদের কতটা সফলভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তার ওপর।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে চিকিৎসা ব্যয় করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানোর ক্ষেত্রে একটি অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেক মার্কিনিই ব্যয়বহুল চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না।
এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে ছুটি কম থাকাও আরেকটি বড় কারণ। এর পাশাপাশি করোনাভাইরাস পরীক্ষা যথেষ্ট সহজলভ্য না হওয়াকেও ভাইরাসটি মোকাবিলায় প্রতিবন্ধকতার কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
তবে করোনাজনিত দুর্যোগ সামাল দেওয়ার জন্য গঠিত টাস্কফোর্সের সমন্বয়ক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, ‘চিকিৎসকের নির্দেশনা থাকলে যেকোনো মার্কিন নাগরিকই পরীক্ষা করাতে পারবেন।’ মার্কিন স্বাস্থ্যবিমা সংস্থাগুলোও এসব পরীক্ষার ব্যয় বহন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।