জার্মান গাড়ি নির্মাতাদের ড্রোন তৈরি সুযোগ

জার্মানির ৫০০ বিলিয়ন ইউরো প্রতিরক্ষা তহবিল নতুন সুযোগ এনেছে। গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো এখন সামরিক ড্রোন উৎপাদনে যুক্ত হচ্ছে। তরুণ উদ্যোক্তারা বিভিন্ন সামরিক অভিযানে ব্যবহারের পথ দেখাচ্ছেন।
সামরিক ও অবকাঠামো খাত উন্নয়নের জন্য ৫০০ বিলিয়ন ইউরোর একটি বিশেষ তহবিল গঠন করেছে জার্মানি সরকার। সে কারণে সামরিক বাহিনীর জন্য ড্রোন তৈরির আগ্রহ দেখাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানি। এই কাজে তারা গাড়ি শিল্পের কোম্পানির সঙ্গেও হাত মেলাচ্ছে।
স্টার্ট-আপ ও তরুণ উদ্যোক্তারা নজরদারির জন্য আরও বেশি করে ড্রোন এবং উড়ন্ত জিনিসপত্র তৈরি করছেন। যেমন ‘ক্রিকেট' নামের একটি ড্রোন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
আর ‘ফাল্কে', বা ‘ফ্যালকন' নামের একটি কপ্টারের প্রোটোটাইপ পরীক্ষা করা হচ্ছে। কৃষিকাজ এবং উদ্ধার পরিষেবাগুলোতে ফাল্কে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এর ডেভেলপাররা এটি যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করেছেন। যেমন ইউক্রেন যুদ্ধে।
‘‘এটি মূলত বাজপাখির মতো, যা আকাশে উড়তে থাকার সময় হঠাৎ থেমে গিয়ে লক্ষ্যবস্তু খুঁজতে পারে এবং তারপর তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। ফাল্কেকেও আপনি এর সঙ্গে তুলনা করতে পারেন,'' বলেন লুফটক্রাফ্ট টেকনোলজিস এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডিট্রিশ ফন ভিটৎসলেবেন।
ফ্যালকন কপ্টারের নির্মাতারা এর নকশা এবং উপাদানের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভেবেছেন। সে কারণে এটি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ছুটতে পারে। এয়ারোডাইনামিক ডিজাইনের কারণে ফাল্কে ২০ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিতে পারে। ফ্যালকনের বডি পলিপ্রোপিলিন দিয়ে তৈরি। এটি একটি বিশেষ উপাদান, যা অত্যন্ত শক্ত এবং ভাসতে পারে।
ডিট্রিশ ফন ভিটৎসলেবেন জানান, ‘‘ফ্যালকনের যে বৈশিষ্ট্য অনন্য তা হচ্ছে, এটি সস্তা এবং সংখ্যায় অনেকগুলো উৎপাদন করা যেতে পারে। এটি বানাতে আমাদের বেসমেন্টে ওয়ার্কশপ স্থাপনের দরকার নেই, কারণ, গাড়ি তৈরির কারখানায়ও এটি তৈরি করা যেতে পারে৷''
একটি গাড়ির বাম্পার রিইনফোর্সমেন্ট তৈরি করতে যে উপকরণ ব্যবহার করা হয় তা দিয়েই ড্রোন তৈরি করা যায়। ড্রোন নির্মাতারা এরইমধ্যে একটি গাড়ি কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছেন।
ভিটৎসলেবেন এবং তার সঙ্গী মিউনিখে থাকেন। এটি এমন এক এলাকা যেখানে বিমান তৈরির একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে। সামরিক বাহিনীর জন্য ড্রোন তৈরি একটি সম্পূর্ণ নতুন ক্ষেত্র। এই ওয়ার্কশপে ফাল্কে প্রোটোটাইপ দ্রুত তৈরি করা যেতে পারে।
ভিটৎসলেবেন বলেন, ‘‘এই এলাকার কোথায় উপকরণ পাওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা করেছিলাম। দেখতে পেলাম, সব জায়গায়, সব গ্রামে, মাঝারি আকারের কোম্পানিগুলোতে এগুলো পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি সত্যিই দারুণ৷ আমাদের অটোমোটিভ সাপ্লায়ারও এখান থেকে খুব বেশি দূরে নয়। তারা দারুণ ফোম তৈরি করে, যা করা কঠিন।
ফাল্কে ড্রোন নির্মাতারা গাড়ির যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারক ইয়প-এর সঙ্গে কাজ করছে। ইয়প-এর কর্মী সংখ্যা প্রায় এক হাজার ২০০। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনে করছেন, তারা অনেক ড্রোন তৈরি করতে পারবেন। এখন পর্যন্ত তারা বিলাসবহুল গাড়ির ব্র্যান্ডের জন্য সব ধরণের উপাদান তৈরি করছে।
তবে ব্যবসায় উদ্বেগ বাড়ছে। কয়েক মাস ধরে অর্ডার কমায় এরইমধ্যে কয়েকশ কর্মচারীকে ছাঁটাই করতে হয়েছে। ড্রোন হার্ডওয়্যার তৈরি হোক কিংবা গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরি, এই দুই কাজের মধ্যে প্রযুক্তিগত পার্থক্য খুব একটা নেই। ইয়প একটি জিনিস করতে পারে: সস্তায় অনেক যন্ত্রাংশ উৎপাদন করা।
ইয়প এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মার্টিন ব্যুখস জানান, ‘‘আমরা নির্ভুলভাবে উচ্চমানের কাজ করতে অভ্যস্ত। আমাদের কাজের পরিবেশও দারুণ। আমাদের সবার গোপনীয়তার শপথও নেওয়া আছে। এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে আমরা অন্য কোম্পানির জন্যও কাজ করতে পারবো বলে আশা করছি। আমরা জানি কীভাবে সাশ্রয়ী মূল্যে উৎপাদন করতে হয়।’
সামরিক বাহিনী এই প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে শুরু করেছে। শুধু যুদ্ধ মিশনের জন্যই নয়, জরুরি পরিস্থিতিতে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আহত সৈন্যদের উদ্ধারের জন্যও। আফেলিয়ুস কোম্পানির এই ড্রোনের মতো। এখন জার্মানির আরও বেশি সংখ্যক উদ্যোক্তা প্রতিরক্ষা খাতে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ৫০০ বিলিয়ন ইউরোর বিশেষ তহবিলের জন্য এটি সম্ভব হচ্ছে।