আইফোনের পূর্বসূরিরা

সারা বিশ্বের মানুষের হাতে হাতে এখন স্মার্টফোন। আর স্মার্টফোনের বিশাল বাজার হাতের মুঠোয় ধরে রেখেছে অ্যাপল ও গুগল! কিন্তু অ্যাপলের আইফোন কিংবা গুগলের অ্যানড্রয়েড স্মার্টফোন আসার আগেও কিন্তু বাজার দাপিয়ে গেছে অনেক স্মার্টফোন!
এ যুগের ঢাউস আকৃতির টাচস্ক্রিনের স্মার্টফোনের পূর্বসূরিরা ছিল বাহারি ডিজাইন এবং বিচিত্র সাইজের। কোনোটা ফ্লিপ, কোনোটা স্লাইড আবার কোনোটায় ছিল আস্ত একসেট কিপ্যাড। চার্জের ব্যাপারেও তারা মোটেই এ যুগের স্মার্টফোনের মতো কিপ্টে ছিল না!
এইচটিসি কিংবা স্যামসাং সে সময় খুব সাধারণ মানের ফোনসেট বাজারে আনত। অন্যদিকে বাজার দাপিয়ে বেড়াত নকিয়া, মটোরোলা কিংবা সনি এরিকসনের মতো কোম্পানির ফোনসেট। আর আপনিও হয়তো পত্রিকা খুঁজে সে রকম কোনো এক ফোনের জন্য রিংটোন, ওয়ালপেপার কিংবা গেমস ডাউনলোডের লিংক খুঁজতেন। এ রকম কিছু সেট নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক নিউজ সাইট নিউজ ডটকম। নস্টালজিক হতে হতে চলুন চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক এ রকম কিছু আইফোন কিংবা অ্যানড্রয়েড পূর্ববর্তী স্মার্টফোনের ওপর।urgentPhoto
নকিয়া এন ৯৫ (২০০৭)
নকিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত স্মার্টফোন এন ৯৫। ২০০৭ সালে বাজারে আসা এই ফোনটির স্পেশাল ফিচার ছিল ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। এখন ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরাসহ ফোন অহরহ দেখা মিললেও ২০০৬ সালের জন্য সেটি ছিল এক চমকপ্রদ ঘটনা। শুধু তাই নয়, জিপিএস, ওয়াইফাই সুবিধা, ৩.৫ এমএমের হেডফোন জ্যাকসম্পন্ন এই ফোনসেট সে সময় আলোড়ন তুলেছিল প্রযুক্তিপ্রেমীদের মাঝে।
শুধু স্পেসিফিকেশনে নয়, এই সেটের ডিজাইনেও ছিল নতুনত্য। দুইপাশে স্লাইড করার সুবিধা ছিল এই সেটে, একদিকে মিউজিক কন্ট্রোল কি অন্যদিকে কিপ্যাড। সিম্বিয়ান অপারেটিং সিস্টেমের এই স্মার্টফোন বিশ্বব্যাপী বিক্রি হয়েছিল প্রায় ৭০ লাখ পিস।
নকিয়া ৩৩১০ (২০০০)
স্মার্টফোনের কাতারে নকিয়া ৩৩১০-এর নাম দেখে নিশ্চয়ই ভ্রু কুঁচকে ফেলেছেন। নকিয়া ৩৩১০ মডেলের ফোনসেটকে এ যুগের বিচারে হয়তো ‘স্মার্টফোন’ না বলে শুধুই ‘ফোন’ বলাই শ্রেয়। তবে ভুলে গেলে চলবে না নতুন শতাব্দীর শুরুতে বাজারে আসা এই ফোনসেট কিন্তু সে যুগের বিচারে বেশ ‘স্মার্ট’ ছিল।
এই ফোনেই সর্বপ্রথম প্রিলোডেড হিসেবে মুক্তি পায় বিখ্যাত ‘স্নেক’ গেম। একই সাথে নিজে নিজেই মনোফোনিক রিংটোন তৈরি করার মতো ফিচার ছিল এই ফোনসেটে। চার্জের ব্যাপারে উদার এই সেট কিন্তু দারুণ শক্তপোক্ত ছিল। এই ফোন নিয়ে ইন্টারনেট দুনিয়ায় বেশকিছু রসিকতাও প্রচলিত আছে। এই যেমন বলা হয়ে থাকে নকিয়া ৩৩১০ ‘অবিনশ্বর’!
মটোরোলা রেজার (২০০৪)
অ্যাপলের আইফোনকে বাদ দিলে, বলা হয়ে থাকে মটোরোলা রেজার স্মার্টফোন দুনিয়ায় এক আইকন! মটোরোলার এই ফোনটি অসম্ভব জনপ্রিয় হয় শুধুমাত্র তার ডিজাইনের জোরে। বেশ পাতলা ফ্লিপ এই সেট ছিল সে সময়ের তরুণদের প্রথম পছন্দ। ফিচারের দিক থেকে নেহাত সাধারণ হলেও ডিজাইন দিয়েই দুনিয়া মাত করেছিল রেজার!
সনি এরিকসন ডব্লিউ ৮১০ আই (২০০৬)
সনি এরিকসনের ফোনসেটগুলোর বেশ সুনাম ছিল মিউজিক কোয়ালিটির জন্য। ডব্লিউ সিরিজটি ছিল সনি-এরিকসনের ‘সিগনেচার ফোন সিরিজ’। দারুণ মিউজিক কোয়ালিটির এই সেটে ছিল এলইডি ফ্ল্যাশসহ ২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। মেমোরি কার্ড ব্যবহারের সুযোগও ছিল এই ফোনে।
ব্ল্যাকবেরি পার্ল (২০০৬)
ব্ল্যাকবেরির স্বর্ণযুগ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে অ্যাপল কিংবা অ্যানড্রয়েড ফোনের জোয়ারে। কিন্তু একসময় করপোরেট দুনিয়ার মানুষের প্রথম পছন্দ ছিল ব্ল্যাকবেরির যে কোনো ফোনসেট। ব্ল্যাকবেরির স্বর্ণযুগের সেট ‘পার্ল’। ব্ল্যাকবেরি পার্ল মূলত একটি সেট নয়, এটি ছিল একটি সিরিজ। সব শ্রেণির মানুষের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যেই এই সিরিজটি বাজারে এনেছিল ব্ল্যাকবেরি।
মাল্টিমিডিয়া ফিচার নিয়ে আসা এই ফোনের ডিজাইনও ছিল নজরকাড়া। ২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, মিডিয়া প্লেয়ারসহ সব রকম ফিচার ছিল পার্ল সিরিজের সেটগুলোতে।