তিনটি সেলফি স্মার্টফোন

পৃথিবীতে এখন দুই ধরনের মানুষ আছে, যাঁরা জীবনে একবার হলেও সেলফি তুলেছেন এবং যাঁরা তোলেননি। সেলফি তুলেছেন এমন লোকের সংখ্যাই বেশি। প্রায় সব বয়সের মানুষই এখন সময় পেলে সেলফি তুলছেন যখন-তখন। ফেসবুকের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে সেলফি-ঝড়।
স্মার্টফোনের যুগে ফ্রন্ট ক্যামেরার জন্য কাজটি হয়েছে আরো সহজ। এখন কেউ স্মার্টফোন কিনতে গেলে আগে ফ্রন্ট ক্যামেরাটা দেখে নেয়। কোম্পানিগুলোও তাই বসে নেই। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে তারাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভালো মানের সেলফি তোলার মোবাইল বাজারে আনতে। শুধু সেলফিকে প্রাধান্য দিয়েই তৈরি, এমন তিনটি সেটের ব্যাপারে আজ জানা যাক।
আসুস জেনফোন সেলফি
আসুস মাত্র কয়েক দিন আগেই এই সেট বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে। সেটের সামনে-পেছনে উভয় পাশেই যোগ করা হয়েছে ১৩ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। ফ্রন্ট ক্যামেরায় ওয়াইড ভিউ থাকায় সামনে থাকা অনেক কিছুই সেটটির লেন্স ধারণ করতে সক্ষম। এ ছাড়া রয়েছে অটো ফোকাস আর এলইডি ফ্ল্যাশ।
সেটটির আরেকটি বড় সুবিধা হচ্ছে এটিতে ব্যবহার করা যাবে অ্যানড্রয়েডের সর্বশেষ ভার্সন ললিপপ ৫ দশমিক শূন্য। আরো আছে ১৯২০×১০৮০ পিক্সেলের ৫ দশমিক ৫ ইঞ্চি ফুল এইচডি স্ক্রিন। স্ক্রিনের সুরক্ষার জন্য রয়েছে কর্নিং গরিলা গ্লাস ফোর, যা সব রকমের দাগ কিংবা আঙুলের ছাপ থেকে স্ক্রিনকে রক্ষা করবে।
জেনফোন সেলফির ওজন ১৭০ গ্রাম। এর প্রসেসর হচ্ছে কোয়ালকমের ৬৪-বিট স্ন্যাপড্রাগন ৬১৫। র্যামের ক্ষেত্রে দুটি ভার্সন পাওয়া যাবে—২ গিগাবাইট এবং ৩ গিগাবাইট এলপিডিডিআর থ্রি। স্টোরেজও একটিতে থাকবে ১৬ গিগাবাইট এবং অপরটিতে ৩২ গিগাবাইট। একটি মাইক্রোএসডি স্লট রয়েছে, যাতে ৬৪ গিগাবাইট পর্যন্ত জায়গা বাড়ানো যাবে।
ডুয়াল সিমের সেটটির একটি সিমে টুজি/থ্রিজি/ফোরজি ব্যবহার করা যাবে। অন্যটিতে ব্যবহার করা যাবে শুধু টুজি। আরো আছে তিন হাজার এমএএইচের শক্তিশালী লিথিয়াম-পলিমার ব্যাটারি। তাই সেটটির ‘জীবনকাল’ও একদম খারাপ নয়।
সেটটি এখনো বাংলাদেশের বাজারে আসেনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ২০ হাজার টাকার থেকে বেশি হতে পারে এর দাম। যদি তাই হয়, তবে জেনফোন টু-এর মতো এটিও বাজারে বেশ হইচই ফেলে দিতে পারে। আর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে এইচটিসি ডিজায়ার আইয়ের দিকে।
মাইক্রোম্যাক্স ক্যানভাস সেলফি
ফেব্রুয়ারিতে আসা সেটটি এরই মধ্যে বাজারে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। এর দাম ২১ হাজার ৯৯৯ টাকা। সেটটির বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে কর্নিং গরিলা গ্লাস থ্রি দ্বারা রক্ষিত ৪ দশমিক ৭ ইঞ্চি এইচডি আইপিএস ডিসপ্লে, অ্যানড্রয়েড কিটক্যাট অপারেটিং সিস্টেম, ১ দশমিক ৭ গিগাহার্টজের ট্রু-অক্টাকোর প্রসেসর।
এ ছাড়া রয়েছে ২৩০০ এমএএইচ ব্যাটারি, ২ গিগাবাইট র্যাম এবং সঙ্গে ১৬ গিগাবাইট রম, মাইক্রোএসডি কার্প দিয়ে, যেটি বাড়ানো যাবে ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত।
সেটটির মূল দুর্বলতা তুলনামূলকভাবে কিছুটা ছোট স্ক্রিন এবং কম মেমোরি। আসুস সেলফি বাজারে এলে তাই মাইক্রোম্যাক্স ক্যানভাস সেলফি কিছুটা বিপদে পড়ে যেতে পারে।
এবার আসা যাক আসল ব্যাপারে। ডুয়াল সিমের সেটটির রিয়ার এবং ফ্রন্ট উভয় ক্যামেরাই ১৩ মেগাপিক্সেলের। আর সেলফি তোলার জন্য আই এনহান্সমেন্ট, স্কিন স্মুথেনিং কিংবা ফেইস স্লিমিং-এর মতো টুলগুলো ব্যবহার করা যাবে।
তাই কিছু দুর্বলতা থাকলেও সেলফি-পাগল মানুষ ঠিকই সেটটিকে পছন্দ করেছে। তা ছাড়া এত কম টাকায় এত ভালো ক্যামেরা পারফরম্যান্স পাওয়াও কিছুটা দুষ্কর।
এইচটিসি ডিজায়ার আই
এই সেট হাতের মুঠোয় আনা যেকোনো সেলফিপ্রেমী মানুষের স্বপ্ন হওয়া উচিত। সেলফি পারফরম্যান্সের দিক থেকে এটি বর্তমানে সেরা হ্যান্ডসেট। এই সেটটিরও রিয়ার এবং ফ্রন্ট ক্যামেরা ১৩ মেগাপিক্সেলের। এফ ২ দশমিক ২ ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স থাকায় দলবল নিয়ে সেলফির পর সেলফি তোলা কোনো ব্যাপারই না এখন। আরো আছে শক্তিশালী ফ্ল্যাশ।
পরীক্ষা করে দেখা গেছে, আলো এবং অন্ধকার উভয় স্থানেই এইচটিসি ডিজায়ার আই দিয়ে তোলা সেলফি কিংবা ভিডিওর মান বেশ চমৎকার। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এই সেলফি-সেটটি দিয়ে একই সঙ্গে রিয়ার এবং ফ্রন্ট ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা যায়।
সেটটিতে রয়েছে ৫ দশমিক ২ ফুল এইচডি ডিসপ্লে, ২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজের কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮০১ কোয়াড-কোর প্রসেসর আর সঙ্গে ২ গিগাবাইট র্যাম। সেটের নিজস্ব স্টোরেজ ১৬ গিগাবাইট, যেটি ১২৮ গিগাবাইট পর্যন্ত উত্তীর্ণ করা যাবে।
তবে সেটটির দাম কিছুটা বেশি বলা যায়। সেলফি তোলার এই শৌখিনতার মূল্য দিতে ৩৪ হাজার টাকা খরচ করতে হবে।