ফুটবলের দায়িত্বে ইতালির কোচ লোপেজ

ডাচ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফের বিদায়ের আগেই ঢাকায় চলে এসেছিলেন সম্ভাব্য নতুন কোচ। ফাবিও লোপেজ নামের এই ইতালিয়ান কোচ গত মঙ্গলবার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের বাংলাদেশ-জর্ডান ম্যাচ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বসেই দেখেছেন। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন বাফুফে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। urgentPhoto
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে লোপেজের সঙ্গে বৈঠক করেন বাফুফে সহসভাপতি তাবিথ আউয়াল। ৪২ বছর বয়সী এই কোচ নিজেই বাংলাদেশ দলের কোচ হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন তাঁর কাছে। বৃহস্পতিবার দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে আপাতত চার মাসের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই ইতালিয়ানকে। চুক্তির মেয়াদ ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।
বাংলাদেশ কোচের দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিচ্ছেন লোপেজ। এই চ্যালেঞ্জে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী, ‘অস্ট্রেলিয়া ও জর্ডানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ দুটি ম্যাচ মাঠে বসে দেখেছি। আমার মনে হয়েছে এই দলের হয়ে চ্যালেঞ্জ নেওয়া যেতে পারে। আশা করি চ্যালেঞ্জে জয়ী হতে পারব।’
ডাচ-ঘরানা থেকে বেরিয়ে এবার ইতালিয়ান কোচের দায়িত্বে বাংলাদেশের ফুটবল। এতে কোনো সমস্যা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বাফুফের সহসভাপতি ও জাতীয় দল কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘ফাবিও লোপেজ ইউরোপীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা উয়েফার প্রো-লাইসেন্সধারী কোচ। তিনি বুঝবেন কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে খেলতে হবে। আমার মনে হয় না তাঁর কোনো সমস্যা হবে। তাঁর সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তিনি বাংলাদেশ দলকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ নিতে রাজি। তাই আমরা তাকে দায়িত্ব দিয়েছি।’
লোপেজের প্রথম পরীক্ষা আগামী মাসে, ১৩ অক্টোবর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে কিরগিজস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। এরপর ১২ নভেম্বর তাজিকিস্তান ও ১৭ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। বাছাইপর্বে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ আগামী বছরের ২৪ মার্চ জর্ডানের বিপক্ষে।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব ছাড়াও লোপেজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। আগামী ডিসেম্বরে ভারতের কেরালায় হবে দক্ষিণ এশিয়ার এই সেরা ফুটবল টুর্নামেন্ট। তবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ পিছিয়ে গেলে তাঁর সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়াবে বাফুফে।
খেলোয়াড়ি-জীবনে লোপেজ ছিলেন গোলরক্ষক। তেমন বড় ক্লাবে খেলার সুযোগ হয়নি তাঁর। ২০০০ সালে কোচিং ক্যারিয়ারের সূচনা ইতালিয়ান ক্লাব এএস রোমার যুব অ্যাকাডেমিতে। ২০০৭ সালে লিথুনিয়ার ক্লাব এফকে গারজদাল, ২০১১ সালে মালয়েশিয়ার সাবাহ এফএ, ২০১২ সালে ইন্দোনেশিয়ার পিএসএমএস এবং সর্বশেষ ২০১৩ সালে মালদ্বীপ প্রিমিয়ার লিগের দল বিজি স্পোর্টস ক্লাবের কোচ ছিলেন তিনি।
লোপেজ অবশ্য এর আগে কখনোই কোনো জাতীয় দলের কোচ ছিলেন না। এবারই প্রথম একটি জাতীয় দলের দায়িত্ব পেলেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ ৫-০ গোলে হেরে যাওয়ার পর থেকেই লোডভিক ডি ক্রুইফের বিদায় নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়। ঘরের মাঠে জর্ডানের কাছে ৪-০ গোলের হারের পর আলোচনার মাধ্যমে এই ডাচ কোচকে বিদায় করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাফুফে।
অবশ্য গত জুনেই ডি ক্রুইফের সঙ্গে দুই বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছিল বাফুফের। তারপর থেকে তিনি বাফুফের সঙ্গে কাজ করছিলেন টুর্নামেন্ট ভিত্তিতে।
২০১৩ সালের ১ জুলাই দায়িত্ব নেওয়া ডি ক্রুইফের অধীনে বাংলাদেশ ১৮টি ম্যাচ খেলেছে। তার মধ্যে মাত্র তিনটি জিতেছে, ড্র ছয়টি আর হার মেনেছে নয়টি ম্যাচে।
তবে শুধু ব্যর্থতা নয়, ডি ক্রুইফের কিছু-কিছু আচরণেও হতাশ বাফুফে। বকেয়া বেতনের দাবিতে স্বদেশ নেদারল্যান্ডসে গিয়ে তাঁর বসে থাকা ভালো চোখে দেখেননি বাফুফে কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা ছাড়ার আগে ডি ক্রুইফ জানিয়েছেন, ‘এখানে লুকোচুরির কিছু নেই। বাফুফে আমাকে আর কোচ হিসেবে চাচ্ছে না, আমিও তাদের সঙ্গে থাকতে রাজি নই। তাই এখন থেকে আমাদের পথ আলাদা।’