সম্পদমূল্য নেগেটিভ হলেও শ্যামপুর সুগারের শেয়ারের দর আকাশচুম্বী

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত দুর্বল কোম্পানি শ্যামপুর সুগার মিলসের সম্পদমূল্য নেগেটিভ। কোম্পানিটি ডুবেছে লোকসানে। রিজার্ভও নেগেটিভ। তবুও কোম্পানির শেয়ার দর আকাশচুম্বী। গত ২০ কর্মদিবসে লাফিয়ে লাফিয়ে শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ৫১ টাকা। শেয়ার দর এই ধরনের অস্বাভাবিক বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে রেগুলেটরদের দৃষ্টি দিতে বলছেন শেয়ার ধারণ করা বিনিয়োগকারীরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) শ্যামপুর সুগার মিলসের প্রতি শেয়ারের সমাপনী দর দাঁড়িয়েছে ২০৪ টাকা ৩০ পয়সায়। যেখানে গত ২১ আগস্ট কোম্পানিটির এই শেয়ারের দর ছিল ১৫৩ টাকা ৩০ পয়সা বা ৩৩ দশমিক ২৭ শতাংশ। মাত্র ২০ কার্যদিবসে এই শেয়ারের দর বেড়েছে ৩৩ টাকা ১০ পয়সা। গত বৃহস্পতিবার মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন দাঁড়িয়েছে ১০২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। যেখানে গত ২১ আগস্ট এই মূলধন ছিল ৭৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন বেড়েছে ২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন বন্ধ জানিয়ে কোম্পানির সচিব কায়েস খান বলেন, বন্ধের কারণে কয়েক বছর ধরে শ্যামপুর সুগার মিলস লোকসান গুনছে। ইতোমধ্যে ডিএসই আমাদের উৎপাদনে যেতে তাগিদ দিচ্ছে। কিন্তু আঁখ আগের মতো কৃষক চাষ করছে না। চিনি উৎপাদন ব্যয়ও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। বর্তমানে কোম্পানিটির বিপুল পরিমাণ লোন রয়েছে। উৎপাদনে যেতে এখন আামদের যে পরিমাণ পুঁজি প্রয়োজন, তা কোম্পানির কাছে নেই। সরকার থেকেও পুঁজি পাওয়া যাচ্ছে না। চেষ্টা করছি, কোম্পানির সমস্যাগুলো থেকে বের হয়ে উৎপাদনে যেতে।
কোম্পানির লোকসান প্রসঙ্গে কোম্পানির এ কর্মকর্তা বলেন, সম্পদমূল্য নেগেটিভ, রিজার্ভও ঘাটতিতে। এত নেগেটিভের পরও শ্যামপুর সুগার মিলসের শেয়ার দর বাড়ছে। কেন বাড়ছে বা অতি দরে কারা কিনছে সেটা আমাদের জানা নেই। জানার কথাও না। কোম্পানির কেউ শেয়ার কেনাবেচা করে না। ইতোমধ্যে গত ১ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে জানানো হয়েছে, শেয়ার দর বাড়ার মতো কোম্পানিটিতে এখন কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। এরপরও শেয়ার দর বেড়েছে। এখন দর বাড়া থেমে নেই।
শেয়ার দর বাড়া নিয়ে ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারের সিকিউরিটিজ হাউজে নানা গুঞ্জন উঠেছে, শেয়ার দর এ ধরনের বৃদ্ধিকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না কোম্পানিটির শেয়ার ধারণ করা বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, মাত্র ২০ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৫১ টাকা বেড়েছে, যা তারা মানতে নারাজ। তাই কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে রেগুলেটরদের বিশেষ অনুরোধ করেন বিনিয়োগকারীরা। একই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক কর্মকর্তা বলেন, লোকসানে নুয়ে পড়া শ্যামপুর সুগারের শেয়ার দর বাড়ার বিষয়টি ইতোমধ্যে বিএসইসির নজরে এসেছে। এখন এই শেয়ার দর বাড়ায় কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে (২০২৪-২০২৫) তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদনে শ্যামপুর সুগার মিলসের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১৪ টাকা ৯৬ পয়সা। আগের বছরের (২০২৩-২০২৪) একই সময়ে (জানুয়ারি-মার্চ) শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ১০ টাকা ৬৭ পয়সা। কোম্পানিটির গত অর্থবছরের তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩৮ টাকা ২৯ পয়সা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-মার্চ) শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৩১ টাকা ৭৫ পয়সা। গত তিন প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছে ৯ পয়সা। গত ৩১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৯৮ টাকা ২১ পয়সা।
এর আগে, ২০২৩-২০২৪ সমাপ্ত অর্থবছরে (জুলাই-জুন) জন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য কোন লভ্যাংশ দেয়নি। ওই অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ৪৮ টাকা ৮৪ পয়সা। ওই সমাপ্ত বছরে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছিল নেগেটিভ ৫৫ টাকা ২২ পয়সা। শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছিল নেগেটিভ এক হাজার ২৫৯ টাকা ৯২ পয়সা।
১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় শ্যামপুর সুগার মিলস। ‘জেড’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন পাঁচ কোটি টাকা। শেয়ার সংখ্যা ৫০ লাখ। রিজার্ভ রয়েছে নেগেটিভ ৬২৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার সরকারের হাতে ৫১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে পাঁচ দশমিক ২৯ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৩ দশমিক ৭১ শতাংশ রয়েছে।