পবিত্র হজের খুতবা শেষ

সৌদি আরবের মক্কার আরাফাত ময়দানে পবিত্র হজের খুতবা সম্পন্ন হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৫ জুন) বাংলাদেশ সময় বিকেল সোয়া ৩টার দিকে আরাফাত ময়দানের নামিরাহ মসজিদ থেকে হজের খুতবা পাঠ শুরু করেন পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম শায়েখ ড. সালেহ বিন আবদুল্লাহ বিন হুমাইদ, যা বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে শেষ হয়।
মক্কার মসজিদুল হারামের সাবেক ইমাম ও সিনিয়র স্কলার কাউন্সিলের সদস্য শায়েখ সালেহ বিন আব্দুল্লাহ বিন হুমাইদ তাঁর গভীর জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং ইসলামী পাণ্ডিত্য ও বিচারিক দক্ষতায় গত কয়েক দশক ধরে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়ে এসেছেন। প্রতি বছর আরাফার দিনে প্রদত্ত এই খুতবা হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, যা বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে সমবেত হওয়া লাখ লাখ হাজির জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করে।
হাজিরা আজ ঐতিহাসিক এই ময়দানে নামাজ, জিকিরসহ ইবাদত বন্দেগি ও দোয়া-মোনাজাতে দিনটি কাটাচ্ছেন। এদিন সকাল থেকে লাখো কণ্ঠে সমস্বরে উচ্চারিত হচ্ছে—‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা, ওয়ান্নি মাতা লাকা ওয়াল্মুল্ক্, লা শারিকা লাকা’। এর বাংলা অর্থ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার’।
সাদা দুই টুকরা কাপড়ে শরীর ঢেকে হজযাত্রীরা আজ বৃহস্পতিবার মিনায় ফজরের নামাজ আদায়ের পর থেকেই পবিত্র আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে রওনা করেন। এই আরাফাতের ময়দানেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি বুকে ধারণ করে মুসলিমরা সমবেত হচ্ছেন এই পবিত্র প্রান্তরে।
গতকাল বুধবার (৪ জুন) সকাল থেকে মিনায় জড়ো হওয়ার মধ্য দিয়ে পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। অধিকাংশ হাজি মঙ্গলবার রাতেই তাঁবুর শহর মিনায় পৌঁছে যান। হজযাত্রীদের সংখ্যা বিবেচনা করে সৌদি মুয়াল্লিমরা আগের রাত থেকেই তাঁদের মিনায় নেওয়া শুরু করেন।
মিনায় যাত্রার মাধ্যমে হজ পালনের সূচনা হয়, যা ১২ জিলহজ শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। অন্যান্য দেশের হাজিদের সঙ্গে এবার বাংলাদেশের ৮৫ হাজার ১৬৪ জন হাজিও বুধবার সারা দিন মিনার তাঁবুতে অবস্থান করেছেন।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের খবরে বলা হয়, সৌদি আরবের বাইরে থেকে ১৫ লাখের বেশি হজযাত্রীর আগমন নিশ্চিত করছে সৌদি প্রশাসন। হজযাত্রীদের চলাচল সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিস্তৃত ট্র্যাফিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার আওতায় রয়েছে হজযাত্রীদের প্রধান রুটগুলো এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ আচার পালনে সুশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিশ্চিত করা। আকাশ থেকেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নজরদারি করা হয়।
সৌদিতে তাপমাত্রা প্রায় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন হলে সব হজযাত্রীদের কাছাকাছি হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর শরণাপন্ন হতে আহ্বান জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত হাজিরা পবিত্র আরাফাতের ময়দানে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত চেয়ে প্রার্থনা করবেন। এ ময়দানে অবস্থানকালে হজযাত্রীরা নামিরাহ মসজিদে আসরের নামাজও আদায় করবেন। বিশ্বের লাখ লাখ হজযাত্রী সম্মিলিতভাবে আল্লাহর ইবাদতে নিজেদের নিমগ্ন রাখবেন। আজ সন্ধ্যায় হজযাত্রীরা মুজদালিফায় যাত্রা শুরু করবেন। এটি আরাফাত ও মিনার মধ্যে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হজযাত্রীরা মুজদালিফায় রাত কাটাবেন এবং ছোট পাথর সংগ্রহ করবেন। মিনায় জামারাত স্তম্ভে শয়তানকে লক্ষ্য করে এসব পাথর নিক্ষেপ করবেন তারা।
মূল আরবি খুতবার সঙ্গে সরাসরি সম্প্রচার করা হয় অনুবাদও। এবার বাংলাসহ ৩৪টি ভাষায় হজের খুতবা অনুবাদ করা হয়। হজের খুতবার বাংলা অনুবাদ করেছেন সৌদি আরবে অধ্যয়নরত চার বাংলাদেশি ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান মাক্কী, মুবিনুর রহমান ফারুক ও নাজমুস সাকিব। তাঁরা সবাই মক্কার উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন।
হজের খুতবা একাধিক টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুবাদসহ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। বাংলায় হজের খুতবা শোনা যাচ্ছে মানারাতুল হারামাইন ওয়েবসাইট ও তাদের মোবাইল অ্যাপে। ওয়েবসাইট লিঙ্ক হলো : https://manaratalharamain.gov.sa/arafa/arafa_sermon/bn
এ ছাড়া, অন্য ভাষাগুলোতে খুতবা শুনতে যেকোনো ডিভাইস থেকে মানারাতুল হারামাইন (https://manaratalharamain.gov.sa/) ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে একটি ভাষা নির্বাচন করলে খুতবার অনুবাদ শোনা যাচ্ছে। একইসঙ্গে মানারাতুল হারামাইন মোবাইল অ্যাপেও তা শোনা যাচ্ছে। আর ওয়েবসাইটে বিগত বছরের খুতবা ও এর অনুবাদও পাওয়া যায়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১৫ লাখ হজযাত্রীসহ প্রায় ২০ লাখ মানুষ আজ বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের মক্কা নগরীর পবিত্র আরাফাত ময়দানে সমবেত হয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে এবার হজে অংশ নিয়েছেন প্রায় ৮৭ হাজার ১০০ জন। এই আরাফাতের ময়দানেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।