আপনার জিজ্ঞাসা
বদলি হজ নাকি সমপরিমাণ টাকা দান উত্তম?

নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১৮৫৮তম পর্বে সন্তানদের জন্য পিতার অনাদায়কৃত বদলি হজ করানো নাকি বদলি হজের সমপরিমাণ টাকা কোথাও দান করা উচিত, সে বিষয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে চিঠির মাধ্যমে জানতে চেয়েছেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান খান। অনুলিখনে ছিলেন মুন্সী আবদুল কাদির।
প্রশ্ন : আমার বাবা মারা গেছেন ২০০৩ সালে। কিন্তু তিনি হজ করতে পারেননি। বাবার মৃত্যুর পর তাঁর রেখে যাওয়া ৩০ বিঘা জমি মুসলিম ফারায়েজ অনুযায়ী আমাদের ছয় ভাই, তিন বোন এবং মায়ের মধ্যে বণ্টন হয়েছে, যা আমরা অদ্যাবধি ভোগ করছি। যেহেতু আমাদের ছয় ভাইয়ের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন বাবার পরিবর্তে আমাদের যেকোনো একজনকে হজ পালন করতে হবে এবং এই হজের ব্যয়ভার ছয়জনকেই সমানভাবে দিতে হবে। আবার আমাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন বাবার পরিবর্তিত হজ বা বদলি হজ না করে হজ পালনের সমপরিমাণ টাকা কোনো এতিমখানা বা জনকল্যাণকর কাজে ব্যয় করা উত্তম। এর কোনটি সহিহ সমাধান?
উত্তর : আপনার বাবা মারা গেছেন। কিন্তু হজ পালন করতে পারেননি। এটি তার জন্য অত্যন্ত দুঃখের কথা। কারণ যে সম্পদ তাঁর ছিল, তাতে তাঁর ওপর হজ ফরজ ছিল। যে সন্তানদের জন্য তিনি সম্পদ রেখে গেছেন কিন্তু হজ করতে পারেননি, সে সন্তানরা ৩০ বিঘা সম্পদ বণ্টন করে নিয়ে গেছেন। এখন আপনারা হজ করবেন কি না, করলে ছয়জন মিলে টাকা দেবেন কি না, এই নিয়ে চিন্তা করছেন। এই চিন্তুা না করে একজন সন্তানেরই উচিত ছিল নিজের টাকা খরচ করে পিতার জন্য হজ করে দেওয়া। যেহেতু হজের মতো ফরজ ইবাদত তিনি পালন করতে পারেননি।
এখন যেহেতু তাঁর সম্পদ আপনারা ভোগ করছেন, তাই যদি আপনারা মনে করেন যে পিতার ফরজ হজের বদলি হজ কেউ করতে চান, তাহলে তিনি করতে পারেন। তবে বদলি হজ করতে হলে আগে তাঁর নিজের হজ পালন করতে হবে। তবে এটা শর্ত নয় যে পাঁচজন বা ছয়জনকে টাকা দিতে হবে। যেকোনো একজন করলেই আদায় হয়ে যাবে। যেহেতু তাঁর সম্পদ আপনারা বণ্টন করে ফেলেছেন। তবে সবাই শেয়ার করতে চাইলে তা-ও করতে পারেন। এটি আপনাদের জন্য জায়েজ রয়েছে।
আপনাদের মধ্যে যদি কেউ এরই মধ্যে হজ করে থাকেন, তাহলে তিনিও আদায় করতে পারেন। আর তা না হলে যিনি আগে হজ করেছেন এমন কারো মাধ্যমে আদায় করতে পারেন। তবে শর্ত হলো, যিনি বদলি হজ করবেন আগে তার নিজের হজ আদায় করতে হবে।
এর পরের বিষয় হলো, আপনাদের কেউ কেউ চিন্তা করছেন যে, হজ না করিয়ে হজের টাকা এতিমখানা বা মাদ্রাসায় দান করে দেওয়ার বিষয়ে। এটি গলদ হবে। কারণ, এতিমখানায় টাকা দেওয়াটা তার জন্য ফরজ, সুন্নত বা নফলের কোনোটিই নয়। দিলে ভালো, সওয়াবের কাজ। অবশ্যই এটি সদকায়ে জারিয়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। কিন্তু হজ তো তার ওপর ফরজ ছিল, যা তিনি আদায় করেননি। তাই তাঁর পক্ষ থেকে বদলি হজ করাটাই হচ্ছে ওয়ারিশদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বপূর্ণ কাজ। তাই তাঁরা চেষ্টা করবেন বদলি হজ করানোর জন্য।