আশুরা
মহররমের ত্যাগের মহিমা

আজ থেকে প্রায় সাড়ে তেরোশো বছর আগে হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম সংঘটিত হয়েছিল ইসলামের ইতিহাসের আরেক কলঙ্কজনক অধ্যায়। ইসলামের ইতিহাসে সেই দিনটিকে আশুরা হিসেবে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পালন করা হয়ে থাকে।
ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা থেকে আমরা জানতে পারি, আরব জাহানে যখন আইয়ামে জাহেলিয়াত অর্থাৎ অন্ধকারের যুগ চলছিল তখন আল্লাহতায়ালা সেখানে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শেষ নবী হিসেবে হজরত মুহাম্মদ ( সা.)-কে পাঠিয়েছিলেন। তিনি বিধর্মীদের সঙ্গে মহান আল্লাহর নির্দেশে বিভিন্ন নিয়মতান্ত্রিক যুদ্ধ হিসেবে বদর, ওহুদ ইত্যাদি যুদ্ধ চালিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও প্রচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন ইরাকের কারবালায় অত্যাচারী শাসক হিসেবে পরিচিত ইয়াজিদ জনগণের ওপর অন্যায় ও অত্যাচার চালিয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে অতিষ্ঠ করে যাচ্ছিলেন।
জানা যায়, ঠিক সেই সময় অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তারা ইমাম হোসেন (রা.)-কে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ডেকেছিলেন। তখন আল্লাহ ও আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) তাঁর পরিবারের ৭২ জন সদস্য নিয়ে ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে পৌঁছালে অত্যাচারী ইয়াজিদ বাহিনী তাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালালে শুরু হয় এক অসম যুদ্ধ। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সেই যুদ্ধে সেদিন ইমাম হোসেন (রা.) এবং তাঁর পরিবারের অপরাপর সদস্যগণের পবিত্র রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ফোরাত নদীর তীর। সেখানে তাঁদের মৃত্যুর সময় পাশে ফোরাত নদীর অঝর ধারা থাকা সত্ত্বেও মৃত্যুপথযাত্রী শিশু নারী আবালবৃদ্ধবণিতাসহ সবার পানির পিপাসাও মেটানো হয়নি সেই নিষ্ঠুর ইয়াজিদ বাহিনীর তরফ থেকে। পবিত্র এ দিনটিতে স্মরণ করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রোজা রাখা, জিকির-আসকার, নামাজ আদায়, মসজিদে মসজিদে বিশেষ বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে তা পালন করে থাকেন।
দিনটির তাৎপর্যের কারণে এদিন সরকারি ছুটি রয়েছে। এখানে কোনো ধর্মের জন্যই সামান্যতম বিগ্রহ নেই। নেই কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।
এই তো এবারও (২০১৬) হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম শারদীয় দুর্গোৎসবের ঠিক একদিন পরেই পালিত হলো মুসলিম ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পবিত্র মহররমে আশুরা। তবে গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে এবার বাড়তি নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তরফ থেকে। তারা আগে থেকেই তাজিয়া মিছিলে অন্যবারের মতো ছুরি, কাঁচি, গোরাবারুদ, পটকা, আতশবাজি নিষিদ্ধ করেছিল। সেই সঙ্গে কর্মসূচিটিকে নির্বিঘ্ন করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর তরফ থেকে তিন-চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে।
আর তাই হাজার হাজার মানুষের সমন্বয়ে সংঘটিত এ তাজিয়া মিছিলের কোথাও কোনো সমস্যা হতে শোনা যায়নি। এভাবেই বাঙালির প্রতিটি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য সকল গণজমায়েত নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ হবে এবং ভয়-দ্বিধা আতঙ্ক কেটে যাবে- এটাই হোক এবারের পবিত্র আশুরার মহত্ত্ব।
লেখক : ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।