সজীব ওয়াজেদ জয়ের লেখা
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ মুক্তবাণিজ্য এবং কিছু কথা

উনিশশো একাত্তরে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী বন্ধু ও মিত্র হিসেবে পরিচিত। একসময় এই বন্ধুত্ব মানবিক এবং উন্নয়ন সাহায্যভিত্তিক হলেও এখন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এর ফলেই বাংলাদেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি ঘরে পৌঁছে গেছে।
এরপরও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পায়নি, যার মূল্য পরিশোধ করছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা। এ কথা বলা যায় যে, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বাণিজ্য অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। ২০১৩ সাল থেকে পাকিস্তানসহ বাংলাদেশের বহু প্রতিবেশী রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাণিজ্য কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন বাণিজ্য সুবিধা ভোগ করে আসছে। অথচ বাংলাদেশি রপ্তানির মাত্র ১ শতাংশ যুক্তরাজ্যের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। আজকের দিনে এটা বলা অমূলক হবে না যে, খুব কম বাংলাদেশি পণ্যই উচ্চহারে শুল্ক পরিশোধ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশাধিকার পায়। আর এ শুল্ক কাটা যায় সরাসরি শ্রমিকের মজুরি থেকে। আর শ্রমিকের মজুরি কমানোতেও যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে প্রবল আপত্তি।
এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে মার্কিন কংগ্রেসের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের সীমা বাড়ানো উচিত। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে পোশাক কারখানায় মারাত্মক বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা বাতিল করেছিল। তবে একই সময়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রমিক অধিকারের সামর্থ্য’ নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ। ওবামার এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিল। ওই বছর থেকে বাংলাদেশ শ্রমিকের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা উন্নয়নে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন এবং ধারাবাহিক উন্নতি দেখিয়ে গেছে।
বাংলাদেশের শ্রমিকরা এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রমিক অধিকার ভোগ করে। এরই মধ্যে শ্রমিক সংগঠনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে শ্রম আইনের সংস্কার করেছে দেশটি, যাতে শ্রমিকদের পেশাগত ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বজায় থাকে।
আজ বাংলাদেশে ৩৫০টিরও বেশি শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। উপরন্তু তিন হাজারের বেশি কারখানার নির্মাণগত, বৈদ্যুতিক ও অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ক পরীক্ষা করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ দুই শতাধিক কারখানা পরিদর্শক ভাড়া করে এনেছে এবং শিল্প পুলিশের জন্য কঠোর প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে। পাশাপাশি গার্মেন্টস খাতের নিরাপত্তা লঙ্ঘনে পাবলিক ডেটাবেইস স্থাপনের মতো পদক্ষেপ বাংলাদেশকে শ্রমিক অধিকার বাস্তবায়নের পথে অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছে।
মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার বন্ধ করা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করার সক্ষমতাকেও দুর্বল করে দেয়। বিশ্বের অন্য সব জায়গার মতো বাংলাদেশের দরিদ্ররাও সহজেই সন্ত্রাসীদের নিয়োগের ফাঁদে পা দেয়। যদি যুক্তরাষ্টের সঙ্গে বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশিদের জন্য আরো বেশি অর্থনৈতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়, তাহলে তারা এত সহজে সন্ত্রাসীদের শিকারে পরিণত হতে পারে না।
(গতকাল বুধবার ওয়াশিংটন টাইমসের মতামত বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের লেখাটি প্রকাশিত হয়।)