বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস
কুকুরের প্রতি সদয় হোন

২৮ সেপ্টেম্বর ছিল বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। মরণব্যাধি জলাতঙ্কের চিকিৎসা নেই। কিন্তু একটু সাবধানতা অবলম্বন করলেই আর ভয় নেই। আমি দীর্ঘদিন ধরে কুকুর-বিড়াল পুষছি নিজের বাসায়। আর তিন বছর ধরে আমাদের এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় প্রায় ৩০-৪০টি কুকুরের দেখাশোনা করছি। যদিও শুরু করেছিলাম চার-পাঁচটি দিয়ে, এটি এখন অনেক বেড়ে গেছে। বিভিন্ন সময় ওদের খাওয়ানোর সময় বুঝেছি যে মানুষের মধ্যে কুকুর নিয়ে কত কুসংস্কার আর ভীতি আছে।
কুকুর কামড় দিলে পেটে কুকুরের বাচ্চা হয় -এমন হাস্যকর মিথ এখনো অনেক শিক্ষিত লোকও বিশ্বাস করেন। কুকুর কামড় দিলে জলাতঙ্ক হবেই- এমন ধারণাও ভুল। যেসব কুকুর জলাতঙ্ক জীবাণু বহন করে কেবল সেসব কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক হতে পারে। কিন্তু কামড়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টিকা নিলে জলাতঙ্ক হওয়ার আতঙ্ক থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, মানুষ কুকুরের ছোঁয়া লাগলেই কুকুর কামড় দিয়েছে বলে অস্থির হয়ে যায়। কুকুর বন্ধুত্বপরায়ণ পশু, ওরা মানুষকে সহজে কামড় দেয় না। মানুষ তার অহেতুক আতঙ্কের বশে কুকুরদের সঙ্গে নিষ্ঠুর, অমানবিক আচরণ করে। এটি কুকুরের মনে মানুষের প্রতি ভয় তৈরি করে। আর তখন ওরা আত্মরক্ষার জন্য মানুষের প্রতি আক্রমণাত্মক হয়ে যায়।
আমি আমার এলাকা ছাড়াও যেখানেই যাই, সেখানের কুকুরদের ধরি, আদর করি- কখনোই ওদের হিংস্র হতে দেখিনি। অনেক আহত কুকুরকেও সেবা দিয়েছি। এদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক কুকুরই কামড় দিয়েছে, ওরা ব্যথা পেলেই শুধু কামড়ানোর চেষ্টা করে।
কুকুর যদি ভ্যাকসিনেটেড না হয়, তবে ক্ষতস্থানটি খুব ভালো করে কাপড় কাচার সাবান দিয়ে ১০-১৫ মিনিট ধরে ধুতে হবে, ক্ষতটি বাঁধা যাবে না। আমরা জানি না কুকুরটি জলাতঙ্ক আক্রান্ত কি না, তাই মহাখালীতে গিয়ে টিকা নিয়ে নেওয়াই ভালো।
যদিও জলাতঙ্ক আক্রান্ত কুকুর খুব বেশি হলে দুই সপ্তাহ বাঁচে, আর বেশির ভাগ কুকুরের শরীরেই জলাতঙ্ক জীবাণু থাকে না, তবু সচেতন হওয়াই ভালো। আর যদি কুকুরকে ভ্যাকসিন দেওয়া থাকে, তবে ক্ষতটি ভালোভাবে ধুয়ে ফেললেই হবে।
পৃথিবীর অনেক দেশেই জলাতঙ্ক নেই। জলাতঙ্ক নির্মূলে ব্যাপক হারে কুকুরের ভ্যাকসিনেশন আর কুকুরের প্রতি মানুষের মানবিক ব্যবহারই যথেষ্ট।
লেখক : প্রাণী সংরক্ষক