খোলা চোখে
আমরা পরাজয় এড়াতেই লড়ছি!

কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে স্পেশাল উইপন্স অ্যান্ড টেকটিস (সোয়াত), র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)-এর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী ব্যাপক সাফল্য লাভ করে। সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযানগুলোর মধ্যে এটাই উল্লেখযোগ্য সাফল্য বলেই দৃশ্যমান। ওই অভিযানে যৌথ বাহিনীর হাতে নয় জঙ্গি নিহত হয়েছে, এবং একজন আহত অবস্থায় আটক হয়েছে। উল্লেখযোগ্য অর্জন আরো আছে, ওখান থেকে জঙ্গিদের বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। আশার কথা হচ্ছে ব্যাপক তদন্তের পর সেসব জব্দ মালামাল থেকে জঙ্গিদের তাত্ত্বিক গুরুদের কোনো হদিস পাওয়াও যেতে পারে, যা সময়সাপেক্ষ।
পুলিশের বক্তব্য ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী এক মাস আগে জঙ্গিরা ওই বাড়ির একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়, বাড়ির মালিক ভাড়াটিয়া সম্পর্কিত কোনো তথ্য ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে জমা দেননি। তথ্য গোপনের কারণে অভিযান শেষে তাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর আগে রাতে জঙ্গিরা ওই বাড়িতে রাতের বিভিন্ন সময়ে ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’ বলে স্লোগান দিয়েছে, নিজেদের উদ্দীপ্ত করতে জেহাদি বক্তব্য দিয়েছে বলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এমনকি ভোরে ফজরেরও আজান দিয়েছিল তারা। এ থেকে তাদের উদ্দেশ্য ও পরিচয় প্রমাণিত হয়।
আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিশ্বব্যাপী ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাদের ভাষায় জিহাদে নেমেছে। পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থাকে তারা ‘তাগুদি সরকার’ বলে মনে করে থাকে। তাদের ভাষায়, তারা কোরআনে বর্ণিত আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে জেহাদে নেমেছে। একমাত্র তারা ছাড়া আর কেউই সহিহ ইসলাম পালন করছে না এটাই তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও সিদ্ধান্ত। ইরাক, সিরিয়া থেকে উদ্ভূত এ জঙ্গি সংগঠন দেশে দেশে যে তাদের ডালপালা ছড়িয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন নাশকতা ও সন্ত্রাসী হামলা তার উদাহরণ।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জঙ্গিবাদের যে ভয়াবহ রূপ পরিলক্ষিত হয়েছে, সেটার শুরু এ আইএস দিয়ে নয়। জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) নামক এক জঙ্গিগোষ্ঠীর একসঙ্গে মুন্সীগঞ্জ বাদে দেশের ৬৩টি জেলায় বোমা হামলা চালিয়ে আলোচনায় আসে। এরপর ওই সংগঠনের দুই শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইয়ের ফাঁসির পর দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে এরপর ভিন্ন নামে সংগঠিত ও নাশকতা শুরু করে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সেই আবদুর রহমান ও বাংলা ভাই একসময় জামায়াতের রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ছিল। জেএমবি, হিযবুত তাহরীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম কিংবা অন্য নামের এই সংগঠনগুলো একসময় তালেবান, আল-কায়েদাকে মূল কেন্দ্র ভাবলেও ওই সব ধর্মীয় সন্ত্রাসী সংগঠনের শক্তি ক্ষয়ের পর নতুনভাবে ইসলামিক স্টেট অব সিরিয়া অ্যান্ড ইরাক (আইএসআইএস)-এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে একই স্টাইলে খেলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর। এ ক্ষেত্রে তাদের জেহাদিদের কাউকে সিরিয়া কিংবা ইরাকে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ওই সব সংগঠনের কেউ প্রশিক্ষণ নিয়ে এলে সেই এখানে অন্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। এটা স্বাভাবিকভাবেই একটা ‘চেইন’ হিসেবে কাজ করছে।
আইএস জঙ্গিরা ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নাশকতা চালাচ্ছে। এতে করে এক শ্রেণির মানুষ ওদের নাশকতা না দেখে ওদের দাবিকেই বড় করে দেখে। আবার যখন নাশকতার প্রসঙ্গ আসে, তখন মিনমিন করে বলে এটা সহিহ ইসলাম নয়। গুলশানে জঙ্গি হামলার পর যখন কিছু রহস্যময় লোকের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ‘হিজাব দেখে ছেড়ে দিয়েছে, দোয়া-কালেমা জানা লোকদের খাতির করেছে, সেহরি খেয়েছে’ এমন প্রচার করে তখনো কিছু লোক জঙ্গিদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছে।
জঙ্গিদের নাশকতা, মানুষ হত্যা সেসবকে বড় করে দেখার চেয়ে তাদের প্রচারণার মূল বিষয় হিসেবে হঠাৎ করেই আবির্ভূত হয় ধর্মের প্রতি অনুরাগ। ফলে প্রমাণ হয় জঙ্গিরা আসলে দুটি পৃথক ফ্রন্টে তাদের কাজ চালাচ্ছে। এর একটা হচ্ছে সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভীতি সঞ্চার করে কথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠা, এবং অন্যটি হচ্ছে মানুষের ধর্মীয় অনুরাগকে পুঁজি করে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সমর্থন আদায়। গুলশান পরিস্থিতিকে এ ক্ষেত্রে যদি ধর্তব্যের মধ্যে নেওয়া হয় তবে বলা যায় তারা ব্যর্থ হয়নি, সফল হয়েছে।
গুলশানে জঙ্গি হামলাকারীদের সবাই নিহত হয়েছে এটাকে সাফল্য হিসেবে দেখার অবকাশ নেই। কারণ তারা নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও এমন নাশকতামূলক হামলা চালিয়েছে। তাদের ভাষায়, তারা জিহাদে অংশ নিয়ে বেহেশতে যাচ্ছে, বিধর্মীদের হত্যা করে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করছে। গুলশানে জিম্মিদের ১৩ জন জীবিত হিসেবে উদ্ধার করা গেলেও ২০ জন নিহত হয়েছেন, জঙ্গিদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন অকুতোভয় দুই পুলিশ কর্মকর্তা। দেশি-বিদেশি এত নিরীহ মানুষের প্রাণহানির পরেও এদেশের কিছু লোক ঠিকই জঙ্গিদের পক্ষে কথা বলেছে। ইনিয়ে-বিনিয়ে অনেকেই জঙ্গিদের জীবিত গ্রেপ্তার করতে না পারার কারণে অভিযান পরিচালনাকারী প্যারা কমান্ডো দলের সমালোচনা করেছে। রাতভর অপেক্ষা করে কেন সকালে অপারেশন চালানো হলো, সঙ্গে সঙ্গেই কেন অভিযানে যাওয়া হয়নি- এমন অনেক সমালোচনা হয়েছে। এ সমালোচকদের অনেকেই প্রকাশ্যে জঙ্গিদের পক্ষে কথা বলতে না পারলেও অপ্রকাশ্য একধরনের সহানুভূতি দেখিয়েছে জঙ্গিদের প্রতি। আর তার ওপর ছিল সে কথিত ধর্মপ্রেম, হিজাব, সুরা-কেরাত জপ সম্পর্কিত বয়ানও।
ফলে ধারণা করাই যায়, জঙ্গিরা অনেক গভীর পরিকল্পনার পরেই কেবল মাঠে নেমেছে। এক পরিকল্পনা প্রকাশ্য এবং অন্য যা তা গোপনীয়। প্রকাশ্য পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা নাশকতার মাধ্যমে ভীতি সঞ্চার, অতঃপর ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে খেলাফত প্রতিষ্ঠা। আর অন্য পরিকল্পনা অপ্রকাশ্য যা প্রধানত সহানুভূতি আদায়ের মাধ্যমে দল ভারী করা। এটা ধর্মের অনুভূতিকে উদ্দেশ্য করেই চালিত, গুলশানে জঙ্গি হামলার পরবর্তীতে হামলাকারীরা ধর্মের প্রতি অনুগত ছিল এবং ধার্মিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল সেটাও প্রমাণের চেষ্টা হয়েছে। তাদের সে চেষ্টা শতভাগ সফল বলেই প্রতীয়মান। একটা সময়ে বিভিন্ন বিশ্লেষণে ধর্মানুরাগ স্রেফ প্রচারের বিষয় ছিল বলে প্রমাণ হলেও সাধারণ মানুষের কাছে যে বার্তা পৌঁছেছে, সেটা ভয়াবহ রকমের সহানুভূতি উৎপাদন করেছে।
গুলশানের জঙ্গিরা হামলা করলেও কল্যাণপুরে সেটা করতে পারেনি এলাকাবাসীর তথ্যের ভিত্তিতে এবং সোয়াটের নেতৃত্বে অভিযানের কারণে। কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানা ‘জাহাজ বাড়িতে’ জঙ্গিদের উগ্রবাদিতার অনেক প্রমাণ হাজির করা হলেও এক শ্রেণির লোক কোনোভাবেই সেটাকে বিশ্বাস করতে রাজি নয়। যে বাড়িতে জঙ্গিরা মারা পড়েছে সেখানকার প্রতিবেশীরা তাদের সে সময়কার অবস্থা বর্ণনা করলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই পুলিশের সে অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলে একে বিভিন্নভাবে সমালোচনা করেছেন।
এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উত্তর- গুলশানের মতো কল্যাণপুর ওভাবে আক্রান্ত হয়নি, বরং পুলিশ পূর্বে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান পরিচালনা করেছে। রাতে যখন পুলিশ প্রথম দফায় সে বিল্ডিংয়ে যায় তখন জঙ্গিদের প্রতিরোধের মুখে কিছুটা পিছু হটে আরো ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে গেছে। অপেক্ষা করেছে সর্বশক্তি নিয়োগের। সে জন্য হাজারের মতো সদস্য অভিযান পরিচালনা করেছে। যৌথ বাহিনীর চৌকস দল নিশ্চিতভাবেই বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরেই এগিয়ে গেছে, এবং নিজেদের সুরক্ষার জন্য তারা সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রশিক্ষিত হিসেবে নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরাই নিশ্চিত করেছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য আত্মরক্ষা যেখানে প্রাথমিকভাবেই বিবেচ্য সেখানে নিশ্চিতভাবেই তারা নিজেদের সুরক্ষিত রেখে তাদের প্রশিক্ষণ ও অভিযানকে সফল করেছে। ফলে এ অভিযানে পুলিশের প্রাণহানি ঘটেনি।
সাম্প্রতিক সময়ের জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতদের ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে পুলিশ এ ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষিত বলে সাধারণীকরণ করে থাকে। ১৮-২৫ বছর বয়সী তরুণরা যাদের অধিকাংশই ব্যাচেলর ডিগ্রি লেবেল পর্যন্ত পাস করেনি পুলিশ কীভাবে তাদের উচ্চশিক্ষিত বলে আখ্যা দেয়। প্রশ্ন জাগে, তবে কি একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় পা দেওয়া মাত্রই কারো গায়ে উচ্চশিক্ষিতের লেবেল আঁটা হয়ে যায়?
কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় যৌথ বাহিনীর অভিযানের পর কিছু মানুষের সে অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা আমাদের চলমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটা অংশ বলেই ধারণা করি। পরস্পরবিরোধী মতামত এখানে শক্তিশালী বলে সবকিছুতে বিরোধিতা করার একটা প্রবণতা লক্ষণীয়। সরকারে যে দলই থাকে, দেশের অধিকাংশ মানুষই প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সরকারবিরোধী এক প্রকার মত প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এখন আওয়ামী লীগ সরকারে বলে আওয়ামীবিরোধী মত শক্তিশালী, একইভাবে যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন সে মত বিএনপিবিরোধীও ছিল। এর মানে এই নয় যে সরকারবিরোধী মত শক্তিশালী বলে সবাই সরকারকে সমর্থন করছে না। এ ক্ষেত্রে কল্যাণপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযান সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার লোকের অভাব হচ্ছে না। যদিও এসব সমালোচনা সর্বক্ষেত্রে যৌক্তিকতার মানদণ্ডে কতটা যৌক্তিক সে হিসাবটা রাখছে না অনেকেই।
সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিবাদ বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জঙ্গিবাদ নির্মূলে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের ভূমিকা ও বক্তব্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হলেও এ কাজটা কিন্তু সরকারকেই করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প কিছু নেই। আর জাতীয় ঐক্য রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনোমতেই সম্ভব নয়। জঙ্গিবাদ নির্মূলে সরকারের প্রশাসনিক উদ্যোগের দরকার হলেও সবার আগে দরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া এ সমস্যা থেকে উত্তরণ কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। এ জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দল ও জাতীয় পার্টির ঐক্য দিয়েই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সেটা আংশিক হয়ে পড়বে। এ ঐক্যের প্রয়োজনে বিএনপি, গণফোরাম, সিপিবিসহ বাম দলগুলোকে সঙ্গে নেওয়া দরকার।
বিএনপির পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের দাবি, জামায়াতকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হতে পারে। এদিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে। ফলে দেশের বিরাট এক জনগোষ্ঠীর সমর্থনের জন্য জাতীয় ঐক্যে বিএনপির অংশগ্রহণ জরুরি, জঙ্গিবিরোধী জাতীয় ঐক্যে এটা তো খুব জরুরিই।
বিএনপির জামায়াতকে ছাড়া উচিত। আর এটা সম্ভব হলে জাতীয় ঐক্যের কাতারে বিএনপিও চলে আসবে বলে ধারণা; আর তা যদি হয় তবে আংশিক নয়, নিরঙ্কুশ জাতীয় ঐক্য সম্ভব।
ধারণা করি, রাজনৈতিক বিরোধিতা আমাদের এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে সত্যকে সত্য বলতেও অনেকের দ্বিধা চলে এসেছে। এটা একধরনের মহামারী আকার ধারণ করেছে, ফলে জঙ্গিবাদের মতো জাতীয় সংকটের সময়েও আমরা ঐক্যে পৌঁছাতে পারছি না। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ, বিভ্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
আমাদের মনে রাখা দরকার, যেকোনো অপপ্রচারের শক্তি এতখানি যে এটা প্রচারের জন্য কাউকে মাইক লাগিয়ে প্রচার করতে হয় না। লোকমুখে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেটা ছড়িয়ে যায়। কল্যাণপুরের অভিযান নিয়ে যে অপপ্রচার হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, বিভিন্ন মিডিয়ায় তার বিপরীতে যৌক্তিক উত্তর এলেও কিছু মানুষ সে উত্তরগুলো বিবেচনায় না নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে বসে আছে। নিন্দা প্রচার যেখানে সহজাত, সেখানে প্রশংসার শক্তি ও ধ্বনি খুব কম।
বাংলাদেশের ক্রমবিকাশমান জঙ্গিবাদ নির্মূলে বিভাজন, বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারের রাজনীতি থেকে সরে আসা উচিত। জঙ্গিবাদ নির্মূলকে কৃতিত্ব নেওয়া-দেওয়ার বিষয় হিসেবে দেখলেই কেবল এ নিয়ে অপপ্রচার চলবে। আমাদের মনে রাখা দরকার জঙ্গিবাদ নির্মূল আমাদের কৃতিত্বের কোনো অংশ নয়, এটা দায়িত্ব। জঙ্গিবাদ নির্মূল আমাদের কৃতিত্ব নয়, এটা আমাদের পরাজয় থেকে রক্ষা। আমরা এখন সে পরাজয় এড়াতেই লড়ছি!
লেখক : প্রধান সম্পাদক, সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম