অভিমত
বাজেটের এপিঠ ওপিঠ

অর্থমন্ত্রী কে কী পছন্দ করলেন, না করলেন সেসব খুব একটা আমলে নেন না। তিনি সব সময় তাঁর মতো করে কথা বলতে পছন্দ করেন। প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের নিরাশ করেননি। এবারের বাজেটের প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের ৭১ শতাংশই আসবে রাজস্ব খাত থেকে। এটা উচ্চাভিলাষী কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের বিপরীতে অর্থমন্ত্রীর স্বতঃস্ফূর্ত উত্তর ছিল , ‘ইয়েস, আমি নিজেই বলছি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাভিলাষী।’ কেন উচ্চাভিলাষী তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, “গত বছর রাজস্ব আদায় ‘নিম্নমানের’ হলেও আগের বছর পুরো সময় তা দুই অঙ্কের ঘরেই ছিল। দুঃখজনক এটি চলতি অর্থবছরে হয়নি। তবে গত সাত বছরে আমার সময়ে রাজস্ব আদায় সক্ষমতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এ জন্যই ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত কর আদায়ের প্রস্তাব করেছি। এটি আদায় সম্ভব।”
শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীকে বেশ নির্ভার দেখাচ্ছিল। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। এ ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ, এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব ইউনুসুর রহমান, পরিকল্পনা সচিব তারিক-উল-ইসলাম।
জাতীয় বাজেটের আকার বছর বছর বৃদ্ধির ধারা অক্ষুণ্ণ রেখে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে বৃহত্তম বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এটি বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের তৃতীয় এবং অর্থমন্ত্রীর ব্যক্তিগত দশম বাজেট ঘোষণা। বাজেটের মোট আকার তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। দেশের বিশাল জনসংখ্যার বিবেচনায় এ আকারের বাজেটকে হয়তো উচ্চাভিলাষী বলা সঙ্গত হবে না। বস্তুত খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি প্রস্তাবিত বাজেটে। অর্থমন্ত্রী সামগ্রিকভাবে যে বাজেট পেশ করেছেন, তাতে আয়-ব্যয়ের ঘাটতি ধরা হয়েছে ৯২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা, অনুদান ছাড়া যার পরিমাণ ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। এত বড় ঘাটতি নিয়ে বাজেটের অর্থায়নের বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
বাজেটের পক্ষে বিপক্ষে নানা ধরনের বিশ্লেষণ, মতামত, যাচাই বাছাই, মূল্যায়ন, পুনর্মূল্যায়ন থাকে। প্রতিবারের মতো এ বছরও বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য দল সরকার ঘোষিত বাজেটকে গণবিরোধী বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন, সমালোচনা করেছেন। সুশীলসমাজ, নাগরিক সমাজ তাদের মতামত দিয়েছে বাজেট নিয়ে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন বাজেটের কড়া সমালোচনা করেছে। অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা এসবকে বাজেটের অংশ বলে মনে করছেন।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বাজেটকে অর্থনীতির মানুষরা ভিন্নভাবে দেখার প্রয়াস পাচ্ছেন। সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবারের বাজেট নিয়ে বলেছেন, ‘আগামী বছরে তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ব্যয়ের কথা বলছে সরকার। এটি দেশজ আয়ের মাত্র ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ফলে কোনোভাবেই এটি বড় বাজেট নয়। বাজেটে সরকার যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, সেগুলোর সঙ্গে আমরা একমত। তবে এসব লক্ষ্য অর্জনের যে ধরনের দক্ষতা, সংস্কার এবং রাজনৈতিক উদ্যোগ দরকার, সেগুলো দেখা যাচ্ছে না। ফলে এর বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।’ তাঁর ভাষ্যমতে, এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী অর্থনীতিতে সাতটি বড় দুর্বলতা নিয়ে বাজেট ঘোষণা করেছেন দুর্বলতাগুলো হলো বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ নেই, উৎপাদনশীল খাতে কর্মসংস্থান নিম্নমুখী, রাজস্ব পরিকল্পনায় দুর্বলতা, বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপর নির্ভরশীলতা বেশি, লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে রাজস্ব আদায় হচ্ছে না, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন একেবারেই কম এবং আর্থিক খাতে সুশাসনের বড় ধরনের ঘাটতি। এ ছাড়া কৃষি উৎপাদন কম হওয়ায় চালের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যেভাবে কমছে, দেশীয় বাজারে তা সমন্বয় হয়নি। বর্তমানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি চাপের মুখে রয়েছে। এর সবই চ্যালেঞ্জ।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের দুর্বলতার দিক উল্লেখ করে তাদের বাজেট বিশ্লেষণে বলেছে, ‘আগামী বছরে ঘাটতি অর্থায়নেও বড় দুর্বলতা রয়েছে। উন্নয়ন বাজেটের চেয়ে অনুন্নয়ন বাজেট বেড়েছে। এ ছাড়া বৈদেশিক সহায়তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বাড়ছে না করের আওতাও। ফলে যারা কর দিচ্ছেন, তাদের ওপর চাপ আরো বেড়েছে। সিপিডির মতে, অর্থনীতির আকার অনুসারে কর আদায়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পৃথিবীর সর্বনিম্ন।’
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটে বিশেষভাবে প্রবৃদ্ধির কথা বলেছেন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা বলা হয়েছে। এই হারে প্রবৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত ৮০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ দরকার। কিন্তু এই পরিমাণ অর্থ কোথা থেকে আসবে, বাজেটে তা স্পষ্ট করা হয়নি। এটি এবারের বাজেটের বড় দুর্বলতা। অন্যদিকে অর্থায়নের দুটি উৎস ব্যাংকিং খাত ও পুঁজিবাজারের বর্তমান যে অবস্থা, তাতে এই পরিমাণ অর্থায়নের জন্য খাত দুটি প্রস্তুত নয়। ফলে আগামী বাজেটেও বিনিয়োগ বাড়ানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকছে । চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে জিডিপির ২১ দশমিক ৮ শতাংশ বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে তা ২৩ দশমিক ৩ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাজেটে স্পষ্ট করে বলা হয়নি বিনিয়োগের টাকা কোথা থেকে আসবে।
অর্থনীতিবিদরা বিনিয়োগের টাকার সংস্থান নিয়ে তাঁদের দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন। তাঁরা বলছেন, স্বাভাবিক নিয়মে বিনিয়োগের টাকা তিন খাত থেকে আসে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যক্তি নিজে টাকা দেয়, ব্যাংক থেকে ঋণ এবং পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ। কিন্তু বিভিন্ন কেলেঙ্কারির কারণে ব্যাংকিং খাত বিপর্যস্ত। ঋণের সুদের হার কমলেও মানুষ বিনিয়োগ করতে চায় না। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট রয়েছে। তারল্য প্রবাহ একেবারে কম। ফলে ভালো উদ্যোক্তারা পুঁজিবাজারে যেতে চায় না। যে কারণে এ বছরও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে জিডিপির ২১ দশমিক ৮ শতাংশ বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে তা ২৩ দশমিক ৩ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাজেটে স্পষ্ট করে বলা হয়নি বিনিয়োগের টাকা কোথা থেকে আসবে।
অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা বাজেট নিয়ে বলছেন, এডিপির বাস্তবায়ন ও কর আহরণের ক্ষেত্রে সমস্যা রয়ে গেছে। এডিপি নিয়ে নতুন কোনো ধরনের অগ্রগতি নেই। বড় প্রকল্পগুলো আগের অবস্থায় রয়েছে। এডিপির তহবিল গতবারের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি। এটা ব্যবহার করতে হলে যে নীতির পরিবর্তন দরকার, যে অবকাঠামো দরকার তা নেই। তাঁরা বলছেন, এডিপির অনেক প্রকল্প রয়েছে যার ৫০ শতাংশই সম্পন্ন হয়নি। যে প্রকল্পগুলো শেষ হবে বলা হচ্ছে, সেগুলোতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ১৮টি প্রকল্পে মাত্র এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, ২০টিতে মাত্র এক কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া অন্যগুলোতে পর্যাপ্ত অর্থায়ন করা হয়নি।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) মনে করছে, এই বাজেট তাদের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবির যথাযথ প্রতিফলন ঘটেনি। এর ফলে আমদানিকারকদের সঙ্গে কঠিন প্রতিযোগিতায় পড়বেন দেশীয় উদ্যোক্তারা। বিশেষ করে দেশে উৎপাদন করা মোটরসাইকেলে নতুন করে ভ্যাট আরোপ করায় এ শিল্প পারবে কি না সন্দেহ। দেশীয় শিল্পের স্বার্থে মোটরসাইকেলের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের সুপারিশ করেন ব্যবসায়ীরা। এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা বিষয়টি নিয়ে আগামী ৭ বা ৮ জুন বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া জানাবে বলে জানিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্থানীয় মোটরসাইকেল উৎপাদকরা এতদিন ভ্যাটের আওতামুক্ত ছিলেন। কিন্তু আসছে অর্থবছরে গুনতে হবে ভ্যাট। অন্যদিকে যাঁরা মোটরসাইকেলের বিভিন্ন অংশ আমদানি করে দেশে সংযোজন করেন, তাঁদের আগের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম সম্পূরক শুল্ক দিতে হবে। অর্থাৎ আমদানিকারকদের বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আর করের বোঝা চাপানো হয়েছে দেশীয় উদ্যোক্তাদের ওপর। তিনি বলেন, সাতটি বাজেট প্রস্তাবের কোনোটির প্রতিফলনই অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতায় দেখা যায়নি। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বাজেটের আকার অনেক বড় হয়েছে। আকার বড় হওয়া মানেই রাজস্বের আকার বড় হবে। রাজস্বের আকার বড় হওয়া মানেই ব্যবসায়ীদের আরো টাকা দিতে হবে। ব্যবসায়ীসহ সব মানুষের ওপর করের বোঝা বাড়বে। আমরা টাকা দিতে প্রস্তুত। কিন্তু আমরা আমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকতে চাই। যৌক্তিক না হয়ে বিশাল অঙ্কের করের বোঝা চাপালে ব্যবসায়ীরা বাঁচবেন না। আর ব্যবসায়ী না বাঁচলে দেশ ও দেশের মানুষ বাঁচবে না।
এ ছাড়া এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে পোশাক খাতের করপোরেট কর হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। অপরদিকে উৎসে কর দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। উৎসে কর দিতে হয় মোট উৎপাদনের ওপর। ১ শতাংশ উৎসে কর ৫০ শতাংশ করপোরেট করের সমান। পোশাক ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমরা চাই শুধু মুনাফার ওপর কর ধরা হোক। তা না হলে রপ্তানি আয়ের যে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, তা মুখ থুবড়ে পড়বে। অন্য ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, শুধু মোটরসাইকেল শিল্প নয়, স্থানীয় কোনো শিল্পকে প্রস্তাবিত বাজেটে সুবিধা দেওয়া হয়নি। বরং কর ও শুল্কের হার বাড়ানো হয়েছে বিপরীতে আমদানিপণ্যে কমানো হয়েছে সম্পূরক শুল্ক। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বাজেটের জন্য ভ্যাটসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাতটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এখনো পর্যন্ত তার কোনো প্রতিফল দেখতে পাইনি।
সিপিডির বাজেট বিশ্লেষণে বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে একটি মজার কথা বলেছেন। তাঁরা বলেছেন, একটি লক্ষ্য ভেদ করার জন্য শক্ত একটি তীর ও ধনুক দরকার। এক্ষেত্রে বাজেটের লক্ষ্য বাস্তবায়নে ধনুকটি হলো ব্যয় এবং তীরটি হলো আয়। বর্তমানে আমাদের হাতে যে ধনুক ও তীর রয়েছে, তা দিয়ে লক্ষ্য ভেদ করা যাবে না। তাঁরা বলছেন, বাজেটের ঘাটতি অর্থায়নে সরকার অভ্যন্তরীণ ঋণের ওপর বেশি নির্ভর করেছে। এ বছর মোট ঘাটতির ৬৮ শতাংশ দেশীয় উৎসের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র। কিন্তু দেশের ভেতর থেকে এই পরিমাণ ঋণ নিলে বেসরকারি বিনিয়োগেও অর্থায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। আর এই ঋণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। অন্যদিকে সহায়তা খাত থেকে যে পরিমাণ অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, এক অর্থবছরে তা সম্ভব নয় । কারণ বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান ব্যবহারের দক্ষতা আমাদের নেই। এবারের লক্ষ্যমাত্রা হলো ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের ইতিহাসে ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা আসেনি।
আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইন বাস্তবায়ন হবে না। সেটির বাস্তবায়ন এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই এক বছর খেসারত গুনতে হবে ছোট ব্যবসায়ী ও দোকানিদের। কারণ প্যাকেজ মূসকের পরিমাণ দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার ব্যবসায়ীদের আগামী অর্থবছরে প্যাকেজ মূসক দিতে হবে বার্ষিক ২৮ হাজার টাকা। এখন তাঁরা ১৪ হাজার টাকা দেন। খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেটসহ অন্য সিটি করপোরেশন এলাকায় প্যাকেজ মূসকের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আর জেলা শহরের পৌর এলাকায় ছোট ব্যবসায়ী ও দোকানিদের সাত হাজার ২০০ টাকার পরিবর্তে ১৪ হাজার টাকা দিতে হবে। দেশের অন্য এলাকায় প্যাকেজ মূসকের পরিমাণ সাত হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। বর্তমানে এর পরিমাণ তিন হাজার ২০০ টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী মোবাইল ফোনের সেবায় সম্পূরক শুল্ক তিন শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখেন। অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব রাখার পরদিনই গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রস্তাবিত হারে টাকা আদায় শুরু করে দিয়েছে বিভিন্ন অপারেটর।
অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটর অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) থেকে জানানো হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বৃহস্পতিবার বাজেটে সম্পূরক শুল্কের ঘোষণার পর পরই এ বিষয়ে এসআরও জারি করেছে। এসআরও হাতে পাওয়ার পরই বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর নতুন ট্যারিফ প্ল্যানের সিস্টেম আপগ্রেড শুরু করেছে।
কয়েকটি মোবাইল অপারেটর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে সর্বোচ্চ কলরেট প্রতি মিনিট দুই টাকা। এর সঙ্গে ৩ শতাংশ সম্পূরক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং এক শতাংশ সারচার্জ দিতে হতো গ্রাহককে। ওই এক মিনিটের জন্য খরচ হতো দুই টাকা ৩৯ পয়সা। সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করায় এখন তার খরচ বেড়ে হবে দুই টাকা ৪৪ পয়সা।
বাজেটের নানা সঙ্গতি-অসঙ্গতি নিয়ে কথা হবে। সংশোধন হবে। বিয়োজন হবে। যুক্ত হবে। বাজেট নিয়ে কথার হয়তো শেষ হবে না। আলোচনা-সমালোচনা চলতেই থাকবে। তারপরও কথা থেকেই যায়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে তো?
লেখক : সাংবাদিক