ক্রিকেটে সাফল্য
সাবাশ বাংলাদেশ

নিঃস্তব্ধ রাতে যখন চারপাশ থেকে গর্জে উঠতে থাকে বিজয়ধ্বনি, সব নীরবতা ভেঙে চারদিক আন্দোলিত করতে থাকে আমাদের জয়জয়কার, তখন সত্যি নিজেকে গর্বিত মনে হয় বাঙালি হিসেবে, বাংলাদেশি হিসেবে। এখনো আমাদের সেই বিজয়ের আনন্দ এনে দেয় ক্রিকেট, মাশরাফি-সাকিব-মুস্তাফিজদের বিশ্বকাঁপানো টাইগার দল। যখন এই লেখা লিখতে বসেছি, তখন স্টেডিয়ামজুড়ে আনন্দ, প্রতিটি টিভিসেটের সামনে একটা জয়ের জন্য উন্মুখ হয়ে বসে থাকা মানুষের চোখে-মুখে আনন্দ। আমার মন অনবরত বলে যাচ্ছে, সাবাশ বাংলাদেশ, সাবাশ বাংলাদেশ। কারণ, সেই প্রত্যাশিত জয়টি ততক্ষণে হয়ে গেছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শ্বাসরুদ্ধকর জয়ের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে জানাই অভিনন্দন, নায়কোচিত নেতৃত্বের জন্য মাশরাফিকে জানাই আন্তরিক সালাম।
ক্রিকেট আমাদের আবেগের এতটা জায়গা দখল করে ফেলেছে, যা অন্য অনেক কিছুর চেয়েও বেশি। এত প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মধ্যে একটা জয়ই আমাদের গর্বিত করে তোলে। কারণ, ক্রিকেট এখন আর শুধু খেলা নয়, একটা সম্মানেরও বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের বেলায়, বিশেষ করে এই ভারতীয় উপমহাদেশে। সাম্প্রতিক সময়ের ম্যাচগুলো থেকে আমরা এভাবে বলতে পারি, বর্ষাকালে যেমন দু-একদিন বাদে সব সময়ই বৃষ্টি হয়, ঠিক তেমনি দু-একটা ম্যাচ বাদে বীরের মতো সব জিতে চলেছেন মাশরাফিরা। তবুও অন্যসব ম্যাচের চেয়ে এশিয়ার মর্যাদার লড়াইয়ে বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তানের এই ম্যাচ ছিল অধিক গুরুত্বপূর্ণ। শুধু এ কারণেই নয় যে ম্যাচটি জিতলে বাংলাদেশ ফাইনালে যাবে। ‘পাকিস্তান’ শব্দটি সামনে এলেই চোখে ভেসে ওঠে ইতিহাসের এক বিরাট অধ্যায়, যা মনে হলেই জিততে ইচ্ছে করে, বারবার পরাজিত করতে ইচ্ছে করে ওদের।
এই ম্যাচে ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি মুস্তাফিজ, কিন্তু সে কথা মোটেই মনে করতে দেননি বাকি বোলাররা। মাশরাফির নেতৃত্বে ১২৯ রানেই আটকা পড়ে পাকিস্তান। ব্যাটে নেমেও পাকিস্তানি বোলারদের নিস্তার দেননি বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা। মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে জয়, মনে পড়ে যাচ্ছিল সেই ২০১২ সালের এশিয়া কাপ, তারই যেন শোধ নিচ্ছিলেন তিনি। বিপর্যস্ত পাক বোলাররা খেই হারিয়ে দিতে থাকেন নো বল। ফিল্ডিংয়েও একই অবস্থা। দেখে মনে হচ্ছিল, কোনো আন্ডারডগ দলের সঙ্গে খেলছি আমরা। আমাদের ক্রিকেট টিমের এমন দিনই তো চাই। শেষ সময়ে বোলারদের ব্যবহার করা দেখেই বোঝা যায়, আফ্রিদির অধিনায়ক দক্ষতা। একজন তো দেখলাম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, 'বাংলাদেশকে জেতানোর জন্য দুজন অধিনায়ক দুদিক থেকে চেষ্টা করেছেন!' এ থেকে আমরা শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি, বাংলাদেশ বিশ্বের সেরা দল, মাশরাফি সেরা অধিনায়ক এবং আফ্রিদি অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির ধারেকাছেও নেই।
আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, জিততে থাক বাংলাদেশ, আমরা বলতে থাকি সাবাশ বাংলাদেশ, সাবাশ বাংলাদেশ আর পৃথিবী অবাক তাকিয়ে থাক।
লেখক : সাংবাদিক, পরিবর্তন ডটকম।