জাগো বাহে
রংপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অপরিহার্য

১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পরপরই রংপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি ওঠে। শুধু তাই নয়, রংপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার করার উদ্যোগও গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান শাসকচক্র আর সেটি করেনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৩০ বছর পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ক্ষমতার পালাবাবদলের পর সেই বিশ্ববিদ্যালয়টি রংপুর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। অবশেষে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার রংপুরের সাধারণ মানুষের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে রংপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে।
কয়েকটি কারণে রংপুরে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। প্রথমত, ২০০৮ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার আগে থেকেই আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল, তারা ক্ষমতায় গেলে রংপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবে। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তারা শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতিষ্ঠা করা রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে পরিবর্তন এনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর নামে নতুন নামকরণ করে। নাম পরিবর্তন করা মানে তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা নয়।
দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতির কথা যদি বাদও দিই, তবুও প্রথমবারের মতো শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তার হাতে স্থাপন করা বিশ্ববিদ্যালয়টি তো স্থাপন করা প্রয়োজন। রংপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বদ্যিালয়ের বয়স হওয়ার কথা ১৫ বছর। সেই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা আওয়ামী লীগের দলীয় স্বার্থেও হওয়া প্রয়োজন।
তৃতীয়ত, সর্বশেষ ঘোষণা করা ময়মনসিংহ বিভাগ এবং রংপুর বিভাগ ছাড়া দেশের সকল বিভাগীয় শহরে একটি করে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্বদ্যিালয় আছে। সেই হিসেবে রংপুর শহরেও একটি প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া প্রয়োজন।
চতুর্থত, রংপুর অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের জন্য রংপুরে একটি বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার রংপুরের মানুষকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তোলার কথা চিন্তা করেছিল। সেই সময়ের সেই চাহিদা আজও ফুরিয়ে যায়নি। বরং সেই চাহিদা আরো বেড়েছে। বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনেক বড় কাজ করে যাচ্ছে। সেই কাজেও অনেক বড় সহায়ক হতে পারে রংপুরের একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। রংপুর এখন দেশের সবচেয়ে গরিব বিভাগ। রংপুর বিভাগের মানুষদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা আনয়নের ব্যবস্থা করা গেলে তারা রংপুর ‘সবচেয়ে অভাবী’ অপবাদ দূর করতে পারবে।
প্রশ্ন উঠতে পারে রংপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলে তো সেখানে সারা দেশের ছেলেমেয়েরাই পড়তে আসবে। এতে করে রংপুরের মানুষের বিশেষ কী সুবিধা হবে। এর উত্তরে বলা যায় যে এলাকায় যে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই এলাকার ছেয়েমেয়েরা বেশি পরিমাণে ভর্তি হয়। হতে পারে আর্থিকভাবে অসচ্ছল অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী যাদের দূরে গিয়ে পড়ার সামর্থ্য নেই তারা সেখানে পড়ে। আবার অনেকেই বাড়ির কাছে পড়তে চায়। যে বাস্তবতার নিরিখেই হোক না কেন যে এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়, সেই অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা সেখানে সংখ্যায় বেশি পরিমাণে লেখাপড়া করে এটাই স্বাভাবিক।
পঞ্চমত কারণ, রংপুরের সন্তান ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী ছিলেন। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেও কখনোই তিনি ক্ষমতাকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেননি। তিনি ছিলেন একজন নির্মোহ-সৎ বিজ্ঞানী। আন্তর্জাতিকভাবে পরমাণু বিজ্ঞানী হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল। তাঁর নামে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া প্রয়োজন। এতে করে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয়। তাঁর জন্মস্থান রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায়। এই নামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া আর কেউ করবে না। সে জন্য আমরা বলতে চাই ‘ওয়াজেদ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে রংপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হোক।
২০০১ সালে গ্রহণ করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়। আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতি সত্যে পরিণত হয়। রংপুরের অভাব দূরীকরণের পথ প্রশস্ত হয়। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন পরমাণু বিজ্ঞানীর প্রতি শ্রদ্ধাও প্রদর্শন করা হয়।
বহুকৌণিক দিক থেকে রংপুরে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। সেই সময়ের দাবি পূরণে বর্তমান সরকার তথা শেখ হাসিনা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। রংপুরের বড় বড় উন্নয়ন যেহেতু শেখ হাসিনা ছাড়া হয়নি, তাই এই কাজটিও তাঁর হাত ধরেই হবে-এটাই আমরা মনে করি।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।