অভিমত
শুধু প্রেমিকা নয়, ভালোবাসুন সবাইকে

জন্মের পর মানুষ প্রথম যে বন্ধনে আবদ্ধ হয় তা ভালোবাসা। পৃথিবীর প্রথম দিন থেকেই হয়তো ভালোবাসার সৃষ্টি। যাকে ঘিরে পুরো জীবন কেটে যায়। এই ভালোবাসার মধ্যে লুকিয়ে থাকে হাজারো মুগ্ধতা।
আজ ভালোবাসা দিবস। পৃথিবী সব মানুষের মাঝে ভালোবাসার বন্ধনের কথা জানান দিচ্ছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। আজকের দিনটিতে পুরো বিশ্ব মেতে উঠেছে ভালোবাসার উৎসবে। জগতের বন্ধনে যে কোনো ভেদাভেদ নেই তারই প্রকাশ দিনটি।
১৯৯৩ সাল থেকে বিশ্ব ভালোবাসার সুরে গান গাইতে থাকি আমরাও। আমাদের হাজার হাজার মাইল দূরে ইতালির রোম থেকে বইতে থাকে ভালোবাসা দিবসটির বাতাস। ২৬৯ বা ২৭০ খ্রিস্টাব্দে এক ‘কষ্টময়’ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় আজকের ‘মায়াময়’ দিনটি। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের নাম অনুসারেই এই দিনটির নাম করা হয় ভ্যালেন্টাইনস ডে।
এই ভালোবাসা শব্দটার সঙ্গে মিশে আছে সব চাওয়া-পাওয়া। যা ছড়িয়ে আছে বিশ্বব্যাপী। এক নিমিষেই শত্রুকে বন্ধু করে নিতে পারে এই ভালোবাসা। তাই জীবনের ভালোবাসার মহত্ম অনেক বৈকি।
ইট-পাথরের ব্যস্ত রাজধানীতে ভিন্নভাবে ধরা দেয় সেই ভালোবাসা দিবস। প্রিয় মানুষের হাত ধরে একান্তে সময় কাটাতে বেরিয়ে পড়েন অনেকেই। একটু ফাঁকা জায়গার খোঁজে নানা পরিকল্পনা করে রাখেন। প্রিয় স্থানেই হয়তো পুরো দিন চলবে তাদের খুঁনসুটি।
সারা দেশে ভালোবাসার রং একটু বেশি ছড়ায় তরুণ-তরুণীদের মাঝে। দিনটিকে ঘিরে অনেকে বাহানাও ধরেন প্রিয় ব্যক্তির কাছে। সেই বাহানাতেও থাকে অনেক ভালোবাসা। যা পূরণের জন্য ব্যস্ততা শুরু হয় একে অপরের মাঝে।
ভালোবাসা দিবসের তাৎপর্য আমাদের দেশে একটু বেশিই। কেননা পহেলা ফাল্গুন শুরু হয় ১৩ ফেব্রুয়ারি। সবুজের দেশে পুরো প্রকৃতি ভরে ওঠে ফুলে ফুলে। মধুর সুরে গান গায় কোকিল। বসন্তকালে প্রকৃতির সঙ্গে নানা রং লাগে মানুষের মনেও। সেই বসন্তকে নিয়ে চলে নানা গান-কবিতা, সৃষ্টি সাহিত্য-উপন্যাসের। এই দিনে তরুণ-তরুণীরা হারিয়ে যায় প্রকৃতির রাজ্যে। যা ভালোবাসা দিবসে বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
ভালোবাসা দিবসটি তরুণ-তরণীদের প্রেম বিনিময়ের জন্য হলেও আমাদের দেশে সেই সীমা পেরিয়ে চলে বহুদূর। সমাজের সব ব্যবধান ভুলে সবাইকে কাছে টানতে শেখায় এই ভালোবাসা। পরিবারের সবার মাঝে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতেই দিনটির আগমন।
এই দিনে অনেকেই বাবা-মাসহ পরিবারের সঙ্গে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়েন, কেউবা আবার স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বের হন, অনেকেই ভালোবাসার একমাত্র মানুষকে পাশে নিয়ে চলে যান দূর থেকে বহুদূরে। সমাজের চারপাশ ভরে ওঠে এক মধুর মমতায়। সবখানেই লাগতে থাকে আনন্দের দোলা।
প্রিয় মানুষকে নিয়ে এই দিনটিতে অনেকের দেখা মিলবে বাংলা একাডেমি, টিএসসি বা ধানমণ্ডির লেকে। কেউ আবার মুক্ত বাতাস নিতে ঘুরবেন হাতির ঝিলেও। রাজধানীর উত্তরাতেও হয়তো খোলা আকাশের সন্ধানে বেরিয়ে পড়বেন কেউ কেউ। যে যেখানেই যান না কেন সবার মাঝে থাকবে ভালোবাসা। যা দিয়ে সৃষ্টি হবে এ মধুর জগৎ। যেখানে ভালোবাসা ও আনন্দ ছাড়া কিছুই মিলবে না।
রাজধানীর মতো সারা দেশেই ছড়াবে এই দিনটির স্নিগ্ধতা। ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে অনেকেই রেখেছেন ভিন্ন পরিকল্পনা। দীর্ঘ দিন ধরে পছন্দের মানুষটিকে আজই হয়তো জানিয়ে দেবেন, ‘আপনি তাকেই ভালোবাসেন’। অপর পক্ষের সম্মতির কয়েক সেকেন্ডেই সৃষ্টি হবে একটি ইতিহাস। যার ব্যাপ্তি থাকবে জীবনের পুরোটা সময়।
এই দিনটিতে দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সাঁজ পাল্টে যায়। তরুণ-তরুণীরা লাল গোলাপ গুজে দেন প্রিয় জনের হাতে। অনেক যত্নের সুন্দর ফুলগুলো প্রেমিকার খোপায় বসিয়ে দেন ভালোবাসার মানুষটি। তাতেই আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে দুজনের হৃদয়। নিরিবিলি বসে একান্তে চলে ভাব বিনিময়। সারা দিন ঘুরে সন্ধ্যা বেলা কফি শপে চলে হাসি-আনন্দ।
ভালোবাসা দিবসকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে বাহারি অভিজ্ঞতার ফুলঝুরি। দিনটি পালনে এই মাধ্যমেও দেখা যায় নানা আয়োজন। যার মাধ্যমে পুরো পৃথিবী যোগ হয় একসঙ্গে। দূর পরবাসের আত্মীয় বা প্রিয়জন নিমিষেই চলে আসেন কাছে। তাই দিনটির গুরুত্ব কম নয়।
যদিও এই ভালোবাসাকে একটি দিনে বন্দি করা যায় না বলেন অনেকেই। তাদের ভাষ্য, জীবনের প্রতিটি দিনই ভালোবাসাকে ঘিরে। ভালোবাসা ছাড়া একটি প্রহরও কাটে না। মানুষের মধ্যে সব সময়ই কোনো না কোনো ভালোবাসা কাজ করে। তাই ভালোবাসাকে বিশেষ দিনে বেঁধে ফেলা ঠিক নয়।
সে যাই হোক। ভালোবাসা দিয়েই যে চলছে এই পৃথিবী তাতে তো সন্দেহ নেই। বিশেষ দিনে একটু বিশেষ ভালোবাসার সৃষ্টি হলে মন্দ কি? আমাদের সবার মাঝে সৃষ্টি হোক ভালোবাসা। সবাই জীবনকে উপভোগ করুন ভালোবাসা দিয়ে। এটাই তো আমরা সবাই চাই, তাই না!
লেখক : সাংবাদিক