উদরপূর্তি
ভারতীয় ও চায়নিজ মিশেলে হাক্কা

রেস্তোরাঁ মানেই খাবারের ভিন্ন আয়োজন। একসময় রেস্তোরাঁর পরিবেশটাকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হতো। এখন আবার খাবারের মানের দিকেই বেশি খেয়াল রাখা হয়। স্বাদের এদিক-সেদিক হলে আর রক্ষে নেই। রেস্তোরাঁপল্লী বনানীতে যাঁরা হরহামেশাই রকমারি খাবারদাবারের স্বাদ নেন, তাঁরা বিষয়টি বেশ ভালো করেই জানেন। কারণ, পুরো ঢাকার মধ্যে এখানেই রেস্তোরাঁ একটু বেশি। ছোট-বড়, নামী-বেনামী রেস্টুরেন্ট মিলে তা ‘শ’ ছাড়ালেও, ভোজনরসিকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে গুটিকয়েক।
সে যা-ই হোক। এবার আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব একটু ভিন্ন স্বাদের বা ধাঁচের রেস্তোরাঁর সঙ্গে। হাক্কা ঢাকা। হাক্কা মূল চীনের একটা বিশেষ গোষ্ঠী। সে দেশে তারাই সবচেয়ে বেশি বিনোদন কাজের সঙ্গে জড়িত। কথিত আছে, হাক্কা গোষ্ঠীর কয়েকজন ভারতে তাদের উপনিবেশ গড়ে তোলে। পরে কাজের পরিবেশ না পাওয়ায় খাবারের ব্যবসায় ঝুঁকে পড়েন। তবে মসলাবিহীন চায়নিজ খাবার কি আর ভারতীয়দের মুখে উঠবে! অনেকটাই ব্যর্থ হয়ে পড়েন তারা। এরই মধ্যে একজন সবাইকে দারুণ একটি বুদ্ধি দেয়। তা হলো, চীনা খানাপিনায় ভারতীয় স্পাইসি সব মসলা ব্যবহারের। যে কথা সেই কাজ। এরপর আর পিছে তাকাতে হয়নি তাদের। পুরো ভারতজুড়ে অল্প দিনেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই হাক্কা।
ভিন্ন স্বাদের এই খাবার বাঙালিদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে বনানীর ১০ নম্বর রোডের ব্লক ‘ডি’-এর ৩৪ নম্বর বাড়িতে যাত্রা শুরু করে ‘হাক্কা ঢাকা’। ২০১৪ সালে খুব ছোট পরিসরে যাত্রা শুরু করে তারা। ভারতের মতোই এখানে অল্প দিনেই মন জয় করে ‘হাক্কা ঢাকা’। নাম শুনে পুরান ঢাকার কোনো খাবারের দোকান ভাববেন না। এটা পুরোদস্তুর চায়নিজ রেস্তোরাঁ।
হাক্কা ঢাকার অন্যতম কর্ণধার তারিক মাইনুদ্দিন বলেন, ‘ভাগ্যান্বেষণে ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও আশপাশের দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন বহু চীনা। তারাই স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত মসলা ও রান্নার ধরনের সঙ্গে নিজেদের ধরনটা মিলিয়ে এক নতুন ঘরানা তৈরি করেন। আর এরই নাম হাক্কা চায়নিজ।’
অর্থাৎ এই খাবারে ‘খাঁটি’ বিষয়টি যেমন থাকছে, আবার থাকছে ভারতীয় উপমহাদেশের মসলার দুর্নিবার স্বাদ! সঙ্গে রয়েছে চায়না স্টাইলে তৈরি ব্যানার আর খাবারের তালিকা। হাক্কা ঢাকায় খাবার পাওয়া যাবে একটু ভিন্নভাবে। ড্রিংকসসহ সাত কোর্স খাবার দুজনের জন্য নিলে সব মিলিয়ে এক হাজার ৩০০ টাকা আর চারজনের জন্য দুই হাজার ৫০০ টাকা। যারা মম নামক তিব্বতি খাবার খেয়েছেন, তাদের কাছে এখানকার চিকেন ডাম্পলিং বেশ লাগবে। চিকেনের ভেতরে মসলার ভাবটি যেমন টের পাওয়া যায়, আবার টের পাওয়া যায় মসলার আধিক্য না থাকার ভাবও। র্যাপড প্রনজ দারুণ স্বাদের খাবার। দেখতেও বেশ মুখরোচক। মাঝারি আকারের চিংড়িগুলো প্রথম পেঁচানো হয় নুডলস দিয়ে। তারপর ভাজা হয় ডুবো তেলে। বাইরে কুড়কুড়ে নুডলস আর ভেতরে নরম চিংড়ির স্বাদ। সত্যিই যেন জিভে জল চলে আসে। আর একটি খাবারের মধ্যে আছে মঙ্গোলিয়ান বিফ। ঝাঁজালো স্বাদ আর রসুনের উপস্থিতি যেন পরতে পরতে সেই ঝালকে শুধু বাড়িয়ে দেয়। তো, এই জিনিস কি আর আমাদের অপছন্দ হতে পারে! সুপের মধ্যে ‘এশিয়ান বিফ নুডুল সুপ’ নিলে পেট ভরবে বেশ!
এখানে বসার ব্যবস্থা আছে সব মিলে ৭৫ জনের। রেস্তোরাঁটি খোলা থাকে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। তাই আর দেরি না করে আজই ঢুঁ মেরে আসুন ‘হাক্কা ঢাকা’ রেস্তোরাঁ থেকে।
ছবি : আল কেমি