অনন্যা
মেয়েদের মগজের মেকআপ বেশি জরুরি : ইবতিশাম নাসিম মৌ

প্রথমে পত্রিকা, এর পর টেলিভিশন—দুই জায়গাতেই সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলেছেন তিনি। ঘর-সংসার সামলে তিনি রিপোর্টিং করছেন, টিভির পর্দায় পরিবেশন করছেন সংবাদ, উপস্থাপনা করছেন টক শো। বলছিলাম সাংবাদিক, সংবাদপাঠিকা ও উপস্থাপক ইবতিশাম নাসিম মৌয়ের কথা। এনটিভি অনলাইন এবার জেনেছে মৌয়ের পেশা ও ফ্যাশন সম্পর্কিত ভাবনার কথা।
১. সাংবাদিকতা পেশাকে কেন বেছে নিলেন?
ইবতিশাম নাসিম মৌ : ভালো লাগে তাই। আসলে আমার কাছে মনে হয়, প্রতিটি পেশাই চ্যালেঞ্জিং। আর যেহেতু সাংবাদিকতা পেশাটা একটু অফট্র্যাকের, তাই এখানে মেয়েরা আসে কম, টিকেও থাকে কম। ১০টা থেকে ৫টা অফিস আমার কখনোই ভালো লাগত না। আরো একটা কারণ হলো, এই পেশার মাধ্যমে আমি শুধু নিজের কথাই না, সবার কথা তুলে ধরতে পারি। আর বাবার সাংবাদিকতার কারণে ছোটবেলা থেকই এই পেশার প্রতি আমার ভীষণ আগ্রহ ছিল। আমি মনে করি, মানুষের যা ভালো লাগে, যেটা ইচ্ছা সেটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া উচিত।
২. এই পেশার সঙ্গে ফ্যাশনের কি সম্পর্ক আছে?
ইবতিশাম নাসিম মৌ : আমার মনে হয় না। যে পোশাকে কাজের জায়গায় আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করব, সেটা মাথায় রেখে ড্রেসআপ করার নামই ফ্যাশন। যেমন—আমি যদি অফিশিয়াল কোনো কাজে যাই, সে ক্ষেত্রে শাড়ি, চুড়ি, গয়না পরলে আমাকে বেমানান লাগবে। আবার পয়লা বৈশাখের মতো উৎসবে জিন্স আর ফতুয়া পরলেও বেমানান লাগবে। তাই ফ্যাশনের ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্যের পাশাপাশি জায়গাটাও আমাকে বুঝতে হবে।
৩. স্টাইল বা ফ্যাশন বলতে আপনি কী বোঝেন?
ইবতিশাম নাসিম মৌ : ফ্যাশনের বিষয়ে আমি স্বার্থপর হতে চাই না। আমাকে যেটাতে ভালো লাগবে না সেটা আমি জোর করে পরব, আবার অন্যের চোখেও সেটা ভালো লাগতে হবে, আমাকে কোনো কিছু বলতে পারবে না—এমন মনমানসিকতা নিয়ে আমি চলি না। ফ্যাশন হচ্ছে রুচিশীল ও মননশীল একটা বিষয়। রেসপেক্টেবল ইমেজের নামই ফ্যাশন।
৪. প্রত্যেক মানুষের ফ্যাশন বিষয়ে গ্রুমিং থাকা কি প্রয়োজন?
ইবতিশাম নাসিম মৌ : ফ্যাশন শোর জন্য গ্রুমিংয়ের প্রয়োজন হয়, ফ্যাশনসচেতন হতে হলে গ্রুমিংয়ের প্রয়োজন নেই। একটা মানুষের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায় তার ব্যবহার এবং কী ধরনের পোশাক পরেছে তার মধ্য দিয়ে। এর জন্য গ্রুমিংয়ের কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। এ ক্ষেত্রে নিজে একটু সচেতন থাকলেই চলবে।
৫. পেশার ক্ষেত্রে আপনি কেমন পোশাক বেছে নেন?
ইবতিশাম নাসিম মৌ : স্টুডিও ও ফিল্ড দুই জায়গায়ই আমাকে কাজ করতে হয়। ফিল্ডের ক্ষেত্রে জিন্স অথবা ফরমাল প্যান্ট পরি। এর সঙ্গে লং ঢিলেঢালা শার্ট পরি। মাঝেমধ্যে পাঞ্জাবি, ফতুয়াও পরি। আর সংবাদ উপস্থাপনার সময় আমাকে শাড়িই পরতে হয়।
৬. ব্যক্তিগত জীবনে কোন ধরনের সাজপোশাক আপনার ভালো লাগে?
ইবতিশাম নাসিম মৌ : আমি মাঝামাঝি কোনো পন্থায় নেই। আমার জিন্স-শার্ট পরতে যেমন ভালো লাগে, তেমনি শাড়ি পরতেও ভীষণ পছন্দ করি। পোশাকটা পুরোপুরিই নির্ভর করছে আমার মুডের ওপর। আর অনুষ্ঠানের ধরনের কথাও মাথায় থাকে। মাঝেমধ্যে সুতির ধুতি-ফতুয়াও পরি। এ ধরনের পোশাক আমার কাছে বেশ আরামদায়ক মনে হয়।
৭. সেরা ফ্যাশন ডিজাইনার কে?
ইবতিশাম নাসিম মৌ : সব সময় নিজের পছন্দ অনুযায়ীই পোশাক পরি। তবে দেশীয় ফ্যাশনের মধ্যে বিপ্লব সাহা ও এমদাদ হক ভাইয়ের ডিজাইন করা পোশাক আমার ভালো লাগে।
৮. আপনজনের কারো কোনো ফ্যাশন ট্রেন্ড এখনো কি অনুসরণ করেন?
ইবতিশাম নাসিম মৌ : আমি এখন পর্যন্ত কখনো কাউকে অনুসরণ করিনি। কেউ কোনো পোশাক পরলে বা সাজলে তাকে দেখতে আমার অনেক ভালো লাগে। কিন্তু তার মতো করে নিজেরও পরতে হবে এমন চিন্তা কখনোই করি না।
৯. কোন অনুষঙ্গটি আপনার বেশি ভালো লাগে?
ইবতিশাম নাসিম মৌ : বড় ডায়েলের ঘড়ি। টিপও অনেক পছন্দ। আর শাড়ি পরলে ছোট ছোট মাটির, কাপড়ের বা অক্সিডাইজের গয়না পরি। এগুলো পরতে ভালো লাগে।
১০. পোশাক না অনুষঙ্গ, কোনটিকে বেশি প্রাধান্য দেন?
ইবতিশাম নাসিম মৌ : অবশ্যই পোশাক। এর সঙ্গে যদি মানাসই কিছু পরতে মন চায়, তাহলে ছোট সাইজের কোনো অনুষঙ্গ পরি। তা-ও সব সময় না।
১১. কোন রঙের পোশাক পরতে বেশি ভালো লাগে?
ইবতিশাম নাসিম মৌ : নীল রং আমার খুবই পছন্দ। সাদা এবং হালকা যেকোনো রংও আমার ভীষণ প্রিয়।
১২. পার্লারে গিয়ে না বাসায় পরিচর্যা—কোনটিকে প্রাধান্য দেন?
ইবতিশাম নাসিম মৌ : আমি পার্লারে খুব একটা যাই না। আর বাসায়ও সে রকম কোনো পরিচর্যা করা হয় না। তবে আমি চুল বেশি বড় রাখতে পারি না। সব সময় ছোট করে কেটে পরিপাটি থাকার চেষ্টা করি। আর নিউজের জন্য যখন মেকআপ করি, সেই মেকআপটা ভালো করে পরিষ্কারের চেষ্টা করি। মাঝেমধ্যে স্ক্রাব দিয়ে মুখটা পরিষ্কার করে নিই। ময়েশ্চারাইজার, লোশন লাগাতেও ভুলি না। যেহেতু আমার তৈলাক্ত ত্বক, সেহেতু সব প্রসাধনীই ওয়াটার বেইজড বেছে নিই। আর একটু ভালো ব্র্যান্ডের প্রসাধনী ব্যবহার করার চেষ্টা করি।
১৩. প্রত্যেক নারীর কোন বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত?
ইবতিশাম নাসিম মৌ : প্রতিটি বিষয়েই পুরুষদের যতটুকু সচেতন হওয়া উচিত, নারীদের ততটুকুই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আমি নারী-পুরুষ আলাদাভাবে চিন্তা করি না। আমি মনে করি, একজন মানুষকে তার সব কাজেই সচেতন হতে হবে। তবে মেয়েদের পড়াশোনা করাটা খুবই জরুরি। চেহারার মেকআপের চেয়ে মেয়েদের মগজের মেকআপ করা বেশি জরুরি।
১৪. চাকরিজীবী নারীদের কোন সব বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া জরুরি?
ইবতিশাম নাসিম মৌ : প্রত্যেক মেয়েদেরই নিজেদের বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। মেয়েরা তাঁদের শারীরিক অনেক সমস্যাকেই অবহেলা করে, এড়িয়ে যায়। ৩০ বছরের পর মেয়েদের শরীরে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনের অভাব হয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। আর কাউন্সেলিংটাও দরকার। প্রত্যেক মেয়ে যদি নিজের মনের কথা কাউকে বলে হালকা হতে পারে, তাহলে সে অনেকটা সুস্থ থাকবে। তাই এ বিষয়টাতেও তাদের নজর দেওয়া উচিত।
১৫. নিজেকে ফিট রাখতে কী করেন?
ইবতিশাম নাসিম মৌ : প্রতিদিন সকালে যখন আমি ব্রাশ করি, তখন দেখি আমাকে দেখতে কেমন লাগছে। নিজের কাছে ভালো লাগাটা মেয়েদের জন্য অনেক বেশি জরুরি। আর খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে শাকসবজি বেশি করে খাওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, এগুলো আমার খুব পছন্দ। বেশি করে পানি পান করি। আর মাঝেমধ্যে ফ্রিহ্যান্ড কিছু ব্যায়াম ও ইয়োগা করি। আর আমার ফিটনেসের অন্যতম কারণ হলো বই পড়া ও সিনেমা দেখা। যেকোনো ধরনের বই ও যেকোনো ধরনের সিনেমা আমাকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে। এগুলো আমাকে মানসিকভাবে সুস্থ ও ফিট রাখে।