অনন্যা
নারীর কথা সুন্দর হওয়া জরুরি : তামান্না চৌধুরী

পেশায় পুষ্টিবিদ। মানুষকে স্বাস্থ্যবিষয়ে সচেতন করাই তাঁর কাজ। বলছি, অ্যাপোলো হসপিটালের প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরীর কথা। মুগ্ধ করা বাচনভঙ্গি দিয়ে তিনি সবাইকে পরামর্শ দেন কী করে জীবনযাপন করতে হয়। সবাইকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে যে মানুষটি এত ব্যস্ত, তিনি নিজেকেও ফিট ও ফ্যাশনেবল রাখার বিষয়ে বেশ সচেতন। এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে নিজের ফ্যাশন ও পছন্দ সম্পর্কে জানালেন সফল এই নারী।
প্রশ্ন : অনেক পেশা থাকতে পুষ্টিবিদ কেন হলেন?
তামান্না চৌধুরী : আমি মনে করি, মানুষ যে বিষয়ে পড়াশোনা করে সে যদি সেই বিষয়ে কাজ করে তাহলে অনেক ভালো করতে পারে। তাই আমি যেহেতু ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশনে পড়াশোনা করেছি সেহেতু এই বিষয়ে কাজ করার আগ্রহ অনেক বেশি ছিল। আমি মনে করেছি, যদি এই বিষয় সম্বন্ধে জানি তাহলে এটা আমার কাজে লাগবে। আমি অন্তত আমার নিজের ও পরিবারের সবার স্বাস্থ্যের সঠিক খেয়াল রাখতে পারব। এ করণে মূলত এই বিষয়টাতে পড়াশোনা করেছি। যখন দেখলাম, পুষ্টি বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা খুবই জরুরি, তখন নির্দ্বিধায় এই পেশাকে বেছে নিয়েছি। যাতে সব জায়গায় সব মানুষের উপকার করতে পারি।
প্রশ্ন : এই পেশার সঙ্গে ফ্যাশনের কী কোকো সম্পর্ক আছে?
তামান্না চৌধুরী : হ্যাঁ, অবশ্যই সম্পর্ক রয়েছে। একজন ডায়েটেশিয়ান বা পুষ্টিবিদ যদি নিজেকে ফিট না রাখে বা ফ্যাশনেবল না হয় তাহলে মানুষ তাকে দেখে অনুপ্রেরণা পাবে না। কারণ এই পেশার প্রথম ও প্রধান কাজ হলো মানুষের মনকে বোঝা। যাদের মনে আমাকে দেখে আমার মতো হওয়ার ইচ্ছা জাগবে না, তাদের তো সঠিক খাবারের তালিকা দিয়েও কোনো লাভ হবে না। কারণ তারা আমাকে দেখে নিজেকে পরিবর্তনের কোনো আগ্রহ খুঁজে পাবে না। তাই এই পেশায় নিজেকে ফ্যাশনেবল ও ফিট রাখাটা খুবই জরুরি।
প্রশ্ন : স্টাইল বা ফ্যাশন বলতে আপনি কী বোঝেন?
তামান্ন চৌধুরী : আমার কাছে ফ্যাশন বলতে পোশাক বা সাজসজ্জা নয়। মানুষের কথাবার্তা, আচার-আচরণ, কথা বলার ধরন, অঙ্গভঙ্গি সবকিছুই ফ্যাশনের অন্তর্ভুক্ত। তাই যে মানুষটি এই বিষয়গুলোতে ফ্যাশনেবল ও সুন্দর তাকেই স্টাইলিশ বলা যেতে পারে।
প্রশ্ন : প্রতিটি মানুষের ফ্যাশন বিষয়ে গ্রুমিং থাকা কি প্রয়োজন?
তামান্না চৌধুরী : চাকরিজীবী নারী হোক কিংবা গৃহিণী হোক, তার ফ্যাশন বিষয়ে গ্রুমিং থাকা খুবই জরুরি। আমি মনে করি, এই গ্রুমিং তাকে সব জায়গায় সব বিষয়ে সাহায্য করবে।
প্রশ্ন : পেশার ক্ষেত্রে আপনি কেমন পোশাক বেছে নেন?
তামান্না চৌধুরী : রোগী দেখার সময় বা হাসপাতালে ভিজিটের সময় আমি সব সময় সালোয়ার-কামিজ পরি। এটি স্বাচ্ছন্দ্যের এবং আরামদায়কও বটে। আর ট্রেনিংয়ের সময় সচরাচর শাড়িই পরি।
প্রশ্ন : ব্যক্তিগত জীবনে কোন ধরনের সাজ পোশাক আপনার ভালো লাগে?
তামান্না চৌধুরী : শাড়ি। বিশেষ করে সাউথ ইন্ডিয়ান সিল্ক আমার বেশ পছন্দ। আর চুল সব সময় পরিপাটি রাখার চেষ্টা করি। কারণ এলোমেলো চুল আমার একদমই পছন্দ না। তাই আমি চুলের যত্নটাই বেশি নেই। আর কোনো মেকআপ না করলেও চোখে কাজল অবশ্যই দেই। কাজল ছাড়া আমি ঘরের বাইরে যাই না। কারণ আমার কাছে মনে হয়, কাজল না দিলে সাজ পরিপূর্ণ হয় না।
প্রশ্ন : সেরা ফ্যাশন ডিজাইনার কে?
তামান্না চৌধুরী : লিপি খন্দকারের ডিজাইন করা পোশাক আমার বেশ ভালো লাগে। আর যদিও আমি সময় খুব কম পাই তবুও নিজে মাঝে মাঝে ডিজাইন করে কাপড় পরতে পছন্দ করি। তবে ট্রেন্ডের পেছনে একেবারেই ছুটি না। যেটা আমাকে মানায় না সেটা যদি ট্রেন্ড হয়েও থাকে তবুও পরি না।
প্রশ্ন : আপনজনের কারো কোনো ফ্যাশন ট্রেন্ড এখনো কি ফলো করেন?
তামান্না চৌধুরী : আমার নিজের ছোট বোনের ফ্যাশন আমার খুবই ভালো লাগে। ও অনেক সুন্দর করে চোখে আইশ্যাডো দিতে পারে। আমি এখনো ওর মতো করে আইশ্যাডো দিতে পারি না। তবে চেষ্টা করি ওর মতো করে দেওয়ার জন্য। আর আমার বোনের শাড়ির কালেকশনও অনেক বেশি, যা আমার খুবই পছন্দ।
প্রশ্ন : কোন অনুষঙ্গটি আপনার বেশি ভালো লাগে?
তামান্না চৌধুরী : কানের দুল আমার ভীষণ প্রিয়। বিভিন্ন ধরনের কানের দুলের কালেকশনও রয়েছে আমার।
প্রশ্ন : পোশাক না অনুষঙ্গ, কোনটিকে বেশি প্রাধান্য দেন?
তামান্না চৌধুরী : আমি অনুষঙ্গের সঙ্গে মিলিয়ে পোশাক পরি। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে অনুষঙ্গ পরি না।
প্রশ্ন : কোন রঙের পোশাক পরতে বেশি ভালো লাগে?
তামান্ন চৌধুরী : রঙিন যেকোনো পোশাকই পরতে ভালো লাগে। তবে কালো, বেগুনি ও হলুদ রঙের পোশাক বেশি ভালো লাগে।
প্রশ্ন : পার্লারে গিয়ে না বাসায় পরিচর্যা- কোনটিকে প্রাধান্য দেন?
তামান্না চৌধুরী : বাসায় প্রাকৃতিক পরিচর্যাকেই আমি বেশি প্রাধান দেই। সব সময় মাইল্ড ফেসওয়াশ ব্যবহার করি। মাঝে মাঝে ফেস ওয়াশের সঙ্গে সামান্য চিনি মিশিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলি। এতে স্ক্রাবিংয়েরও কাজ হয়। আর সানস্ক্রিন ছাড়া বাইরে বের হই না। আমি খুব বেশি প্রসাধনী বদলাই না। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে আমি একটাই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে আসছি।
প্রশ্ন : প্রতিটি নারীর কোন বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত?
তামান্না চৌধুরী : প্রতিটি নারীরই কথা সুন্দর হওয়া খুবই জরুরি। নারীদের লেভেল অব ভয়েসের বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। আমি মনে করি, সুন্দরভাবে কথা বলতে পারলে সে সব কিছু জয় করতে পারবে।
প্রশ্ন : চাকরিজীবী নারী বা কোনো পেশায় জড়িত থাকা নারীদের কী বাড়তি যত্ন নেওয়া জরুরি?
তামান্না চৌধুরী : চাকরিজীবী নারীদের নিজের ত্বক ও চুলের বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি। আর রোদে গেলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। না হলে একটা সময় ত্বক রুক্ষ হয়ে যাবে এবং চুল পড়তে শুরু করবে।
প্রশ্ন : নিজেকে ফিট রাখতে কী করেন?
তামান্না চৌধুরী : আমি সময়মতো খাওয়ার চেষ্টা করি। প্রচুর পরিমাণে পানি খাই। ফাস্টফুড ও চকলেট একেবারেই খাই না। প্রোটিন জাতীয় খাবার মাছ, মাংস, ডিম প্রতিদিন আমার খাবার তালিকায় থাকে। কাঁচা লবণ খাই না। যতই ব্যস্ত থাকি নিয়মিত আট ঘণ্টা ঘুমাই। আর ছয় মাস পর পুরো শরীর চেকআপ করি।