অনন্যা
নারীর নিজের জন্য সময় রাখা জরুরি : ইসরাত আমিন

ইসরাত আমিন। আলোকচিত্রী বা ওয়েডিং ফটোগ্রাফার হিসেবেই বেশি পরিচিত। গান গাওয়া, ছবি আঁকার পাশাপাশি এই নারীর আরেকটি পরিচয় হলো তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। আলোকচিত্র পেশার সঙ্গে জড়িত অনেকেরই কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। শত ব্যস্ততার মধ্যেও নিজের সত্তাকে ধরে রেখেছেন সফল এই নারী। একমুহূর্তের জন্যও ভোলেন না নিজেকে সময় দিতে, স্বতঃস্ফূর্ত রাখতে। এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে ইসরাত আমিন জানালেন কীভাবে এত ব্যস্ততার মধ্যেও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে ফ্যাশনেবল ও ফিট রেখেছেন তিনি।
প্রশ্ন : ফটোগ্রাফির পেশাকে এককথায় কী বলবেন?
ইসরাত আমিন : প্রতিটি বিষয় একেকজনের কাছে একেক রকম। সাধারণত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের কারণে এমনটা হয়ে থাকে। ফটোগ্রাফি বা আলোকচিত্রের বিষয়টি পুরোটাই দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। একজন মানুষের ছবি ১০ জন তুললে ১০ অঙ্গিকে তুলবে। কখনোই কারো সঙ্গে কারোর ছবির কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই আমি মনে করি, ফটোগ্রাফি মানে হোয়াট ইউ আর অ্যান্ড হাউ ইউ থিংক।
প্রশ্ন : এই পেশার সঙ্গে কি ফ্যাশনের সম্পর্ক রয়েছে?
ইসরাত আমিন : অবশ্যই সম্পর্ক রয়েছে। ছবি না থাকলে আমরা জানতেই পারতাম না, ষাটের দশকের ফ্যাশন কেমন ছিল বা সত্তরের দশকে ফ্যাশনে কেমন পরিবর্তন এসেছিল। পোশাকের পরিবর্তন, আচার-আচরণের পরিবর্তন, সভ্যতার পরিবর্তন, ফ্যাশনের পরিবর্তনের সাক্ষী কেবল ছবিই।
প্রশ্ন : স্টাইল বা ফ্যাশন বলতে আপনি কী বোঝেন?
ইসরাত আমিন : যে পোশাক বা অনুষঙ্গ আমাকে মানায়, যা আমি স্বাচ্ছন্দ্যে পরতে পারি, সেটাই আমার কাছে ফ্যাশন। ফ্যাশন বা স্টাইলে পরিবর্তন আসবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। তবে আমি সব পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে বদলাই না। যুগের সঙ্গে তাল রেখে কিছুটা পরিবর্তন করি। কিন্তু নিজের ব্যক্তিত্বকে ধরে রাখার চেষ্টা করি। আমি ফ্যাশনকে ধারণ করি, ফ্যাশনের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলি না।
প্রশ্ন : পেশার ক্ষেত্রে আপনি কেমন পোশাক বেছে নেন?
ইসরাত আমিন : যেহেতু আমার কাজ বিয়েকে ঘিরে, তাই সব সময় চেষ্টা করি বিয়ের আমেজের পোশাক পরার। তবে ট্র্যাডিশনাল পোশাকই আমার বেশি পছন্দ। যার ওপর কারচুপি বা এমব্রয়ডারির কাজ করা থাকে। অতিরিক্ত জমকালো কিছু পরি না, তবে পোশাকে বিয়ের রেশ রাখার চেষ্টা করি। হাইহিল একেবারেই এড়িয়ে যাই। যে পোশাকই পরি না কেন, সঙ্গে স্লিপার পরার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন : ব্যক্তিগত জীবনে কোন ধরনের সাজপোশাক আপনার ভালো লাগে?
ইসরাত আমিন : পোশাকের বিষয়টা পুরোটাই আমার মুডের ওপর নির্ভর করে। তবে একই ট্রেন্ডের পোশাক খুব কম পরি। এ ছাড়া কোনো অনুষ্ঠানে গেলে বাঙালিয়ানা পোশাক পরার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন : সেরা ফ্যাশন ডিজাইনার কে?
ইসরাত আমিন : ডিজাইনার পোশাকের থেকে নিজে ডিজাইন করে পোশাক পরতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করি। অন্য কারো ডিজাইন করা পোশাক আমার পরতে ভালো লাগে না। তবে যেহেতু ট্র্যাডিশনাল পোশাক পরতে পছন্দ করি, সেহেতু ভারতের সব্যসাচীর ডিজাইন করা পোশাক আমার বেশ ভালো লাগে।
প্রশ্ন : আপনজনের কারো কোনো ফ্যাশন ট্রেন্ড এখনো কি ফলো করেন?
ইসরাত আমিন : আমি আমার মায়ের অন্ধ ভক্ত। ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি, মা সব সময় শাড়ি আর বড় লাল টিপ পরতে বেশি পছন্দ করত। সব সময় রাবিন্দ্রিক লুকে দেখতাম তাঁকে। আর প্রতিবারই মুগ্ধ হতাম। এখনো আমি মায়ের এই ফ্যাশন ফলো করি।
প্রশ্ন : কোন অনুষঙ্গটি আপনার বেশি ভালো লাগে?
ইসরাত আমিন : হাতের ঘড়ি ছাড়া আমি কখনোই বাসার বাইরে বের হই না। আর সঙ্গে আংটি, কানের দুল ও সুগন্ধি লাগাতে ভুলি না। যতই ব্যস্ততা থাকুক, এটুকু অন্তত মেনে চলি।
প্রশ্ন : পোশাক না অনুষঙ্গ—কোনটি বেশি প্রাধান্য দেন?
ইসরাত আমিন : দুটোই আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। কখনো পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে অনুষঙ্গ বা গয়না পরি, আবার কখনো গয়নার সঙ্গে মিলিয়ে পোশাক পরার চেষ্টা করি। তবে হ্যাঁ, পোশাক ভারি হলে গয়না হালকা পরি আর পোশাক হালকা হলে গয়না ভারি পরি।
প্রশ্ন : কোন রঙের পোশাক পরতে বেশি ভালো লাগে?
ইসরাত আমিন : কালো রঙের। কোনো অনুষ্ঠান হোক কিংবা কাজ, অমার প্রথম পছন্দ কালো রঙের পোশাক।
প্রশ্ন : মেকআপের ক্ষেত্রে কী কী পছন্দ?
ইসরাত অমিন : চোখে কাজল দিতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। আর আমি মনে করি, ভারি কোনো মেকআপ করার থেকে আইব্রো হালকা এঁকে, গাঢ় করে কাজল লাগিয়ে আর ঘন করে মাশকারা দিলে সেই মানুষটির চেহারা এমনিতেই বদলে যায়, যা আমার নিত্যদিনের সঙ্গী বলতে পারেন।
প্রশ্ন : পার্লারে গিয়ে না বাসায় পরিচর্যা—কোনটি প্রাধান্য দেন?
ইসরাত আমিন : আসলে এতটাই ব্যস্ত থাকি যে, পার্লারে যাওয়ার একেবারেই সময় পাই না। আর ঘরে বসেও খুব একটা পরিচর্যা করা হয় না। মাসে একবার সময় পেলে পার্লারে যাই। মাঝেমধ্যে দুই-তিন মাসও পার্লারে যাওয়া হয় না। তবে সময় পেলে হালকা গরম পানির মধ্যে বেকিং সোডা মিশিয়ে হাত-পা ভিজিয়ে ১০ মিনিট বসে থাকি। এটা হাত-পা পরিষ্কার রাখার জন্য বেশ কার্যকর। আর মাঝেমধ্যে দুধ, লেবুর রস ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলি। এতে আমার ত্বকের ক্লান্তি অনেকটা দূর হয়।
প্রশ্ন : প্রত্যেক নারীর কোন বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
ইসরাত আমিন : যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন, প্রত্যেক নারীর নিজের জন্য সময় রাখা জরুরি। নিজের স্বাধীনতা ধরে রাখার জন্য, স্বতঃস্ফূর্ত মনোভাব ধরে রাখার জন্য হলেও নিজেকে সময় দিন। নিজের জন্য ভাবুন। তাহলে দেখবেন, সব ব্যস্ততার মধ্যেও নিজেকে প্রাণহীন মনে হবে না।
প্রশ্ন : চাকরিজীবী নারী বা কোনো পেশায় জড়িত থাকা নারীদের কি বাড়তি যত্ন নেওয়া জরুরি?
ইসরাত আমিন : অবশ্যই। যেসব নারী ঘরের বাইরে কাজ করেন, তাঁদের শরীরের ওপর অনেক চাপ যায়। যার প্রভাব চেহারায়ও পরে। তাই এসব নারীকে নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া জরুরি। নিজে সুস্থ না থাকলে, সুন্দর না থাকলে সবকিছুই বিফল মনে হবে।
প্রশ্ন : নিজেকে ফিট রাখতে কী করেন?
ইসরাত আমিন : আমি বেশির ভাগ সময়ই একটানা দাঁড়িয়ে বা বসে কাজ করি। এ কারণে মাঝেমধ্যে ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ করে করে নিজেকে ফিট রাখার চেষ্টা করি। আর প্রতিদিন সকালে খালি পেটে অন্তত আধা লিটার পানি খাই। আর হ্যাঁ, যখনই খাবার খাই অল্প পরিমাণে এবং ধীরে ধীরে খাই। আর ফল আমার খুবই পছন্দ। সব সময় মৌসুমি ফল খাওয়ার চেষ্টা করি।