গাজর কাঁচা না রান্না? কীভাবে খেলে বেশি উপকার?

বাজারে পাওয়া টাটকা সবজি ও তরকারিগুলো নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। কোনোটিতে রয়েছে উচ্চমাত্রার খনিজ, কোনোটিতে বিশেষ ভিটামিন। আবার কোনোটিতে জরুরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভরপুর। আবার কোনোটিতে ফাইবারের ভালো উৎস। এর মধ্যে গাজর একটু আলাদা। এই সবজির উপকারিতার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি ও বৈচিত্র্যময়।
কেন গাজর উপকারী?
– কেন গাজর কারণ এই সবজিতে ভিটামিন ‘এ’ মাত্রা কিছুটা বেশি। যা খুব বেশি সবজিতে এই পরিমাণে পাওয়া যায় না।
– এতে থাকা ক্যারোটিনয়েড এবং ফলকারিনোল নামক অ্যান্টি-ক্যানসার উপাদানগুলো ক্যানসার সৃষ্টিকারী কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে। এটি প্রোস্টেট, কোলন, ফুসফুস, পাকস্থলীর ক্যানসার এবং লিউকেমিয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে বলে জানাচ্ছে সাউদার্ন ডেনমার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা।
– গাজরে থাকা ফাইবার, পটাসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
– গাজরে থাকা ভিটামিন ‘এ’ চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
– গাজরের বিটা-ক্যারোটিন ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা বৃদ্ধি করে। বয়সের ছাপ, বলিরেখা এবং ফাইন লাইন কমাতেও এটি সাহায্য করে।
– এ ছাড়া ওজন কমাতে, হজমশক্তি উন্নত করতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও গাজর অত্যন্ত উপকারী।
কীভাবে গাজর খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার?
কাঁচা গাজর চিবিয়ে খেলে
কাঁচা গাজর চিবিয়ে খেলে এর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি এবং ফাইবার পূর্ণ মাত্রায় বজায় থাকে। বজায় থাকে এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রাও। সাউদার্ন ডেনমার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, গাজরের যে ক্যানসার প্রতিরোধক গুণ, তা সবচেয়ে বেশি সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে কাঁচা গাজর চিবিয়ে খেলেই। তা ছাড়া দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্যের জন্যও গাজর কাঁচা খাওয়া ভালো। কারণ কাঁচা গাজরে যে কচকচে ভাব থাকে, তা চিবিয়ে খেলে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা ময়লা পরিষ্কার হয় এবং মাড়িও সুস্থ থাকে। এ ছাড়া কাঁচা গাজরের ফাইবার হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
রান্না করে বা সেদ্ধ করে খেলে
গাজর রান্না করলে এর মধ্যে থাকা বিটা-ক্যারোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। বিটা ক্যারোটিনও একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে গিয়ে ভিটামিন এ-তে পরিণত হয়। এই ভিটামিন ‘এ’ চোখের স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ত্বক ভালো রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে, অতিরিক্ত তাপে দীর্ঘক্ষণ ধরে রান্না করলে গাজরের কিছু পুষ্টি উপাদান নষ্ট হতে পারে। তা এড়াতে হলে হালকা সেদ্ধ করে বা ভাপিয়ে নিয়ে খাওয়া ভালো।
গাজরের রস তৈরি করে খেলে
টেক্সাসের কিংসভিলের এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, হার্টের রোগীদের জন্য গাজরের রস বানিয়ে খেলে পুষ্টি উপাদানগুলো সহজেই শরীর শোষণ করতে পারে এবং হার্টের রোগ দূরে রাখার জন্য জরুরি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের মাত্রা বজায় থাকে। তবে গাজরের রস তৈরি করার সময় ফাইবার বাদ পড়ে যায়। যা হজমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই রস তৈরি করে খেলে তার সঙ্গে অল্প পরিমাণে নারকেল তেল মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে, কারণ তাতে শরীর বিটা-ক্যারোটিন শোষণ করতে পারে।
তারকা পুষ্টিবিদ রায়ান ফার্নান্দো বলছেন, গাজরের সর্বোচ্চ পুষ্টি পেতে হলে এটি সালাদ হিসেবে কাঁচা খাওয়া যেতে পারে। অথবা হালকা সেদ্ধ করে বা তরকারি রান্না করে খাওয়া সব থেকে ভালো। হজমের সমস্যা থাকলে বা ছোটদের বা বয়স্কদের কাঁচা না খাওয়াই ভালো বলে জানাচ্ছেন রায়ান। তিনি বলছে, তার চেয়ে সেদ্ধ করা গাজর অনেক বেশি সহজপাচ্য।