উচ্চ রক্তচাপ কেন হয়? নিয়ন্ত্রণে করণীয়

উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার হচ্ছে এমন এক শারীরিক অবস্থা, যেখানে ধমনীতে রক্তের চাপ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে যায়। এটি বর্তমানে একটি নীরব ঘাতক রোগ হিসেবে পরিচিত, যা হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি বিকলের অন্যতম প্রধান কারণ। বাংলাদেশে এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অথচ আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপনের সামান্য পরিবর্তনই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ কেন হয়?
– অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ বা সোডিয়াম গ্রহণ
– অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা
– পরিবারে উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস
– ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি নির্ভরতা
– মানসিক চাপ ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন
– পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া
– শারীরিক পরিশ্রমের অভাব
– হরমোনাল ইমব্যালেন্স (যেমন: থাইরয়েড, কিডনি সমস্যা)
খাদ্যাভ্যাসে যে পরিবর্তনগুলো আনতে পারে মুক্তি
একজন ডায়েটিশিয়ানের দৃষ্টিতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খাদ্য একটি বড় ভূমিকা রাখে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য উপযোগী খাবার হলো–
লবণ নিয়ন্ত্রণ করুন
প্রতিদিন ৫ গ্রামের বেশি লবণ গ্রহণ নয়। রান্নায় লবণের পরিমাণ কমান ও কাঁচা লবণ এড়িয়ে চলুন।
ফাইবারযুক্ত খাবার
বিভিন্ন রঙের শাক-সবজি, ফলমূল, ওটস, দানাশস্য- এগুলো রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে থাকে।
পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার
কলা, কলাই, আলু, কুমড়া ও মিষ্টি আলু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ
অল্প পরিমাণে দুধ ও লো-ফ্যাট দই, ডিমের সাদা অংশ, মুরগির বুকের মাংস ও মাছ- প্রতিদিনের খাবারে রাখুন।
ক্যাফেইন ও প্রসেসড ফুড এড়িয়ে চলুন
চা-কফি ও ঝাল-নোনতা হাই প্রসেসড খাবার কমিয়ে দিন। বিকল্প হিসেবে গ্রিন টি, হারবাল টি বা রোজেলা টি পান করতে পারেন যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
ফ্লুইড ব্যালেন্স বজায় রাখুন
প্রতিদিন অন্তত ২ থেকে ২.৫ লিটার পানি পান করুন।
রসুন
রসুন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে উপকারী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। রসুনে থাকে অ্যালিসিন নামক একটি সালফারযুক্ত যৌগ, যা রক্তনালিকে প্রসারিত করে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। তবে রক্ত পাতলা করার ওষুধ (যেমন: Aspirin) খেলে কাঁচা রসুন খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
জীবনধারায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন
– নিয়মিত ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটা বা হালকা শরীরচর্চা
– ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন
– মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান/নামাজ/মেডিটেশন করুন
– ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার
– নিয়মিত ওজন মাপা ও রক্তচাপ মনিটর করা
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ওষুধের পাশাপাশি- সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনই হতে পারে প্রকৃত প্রতিরোধ ব্যবস্থা। একজন ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য পরিকল্পনা গ্রহণ করলে ওষুধের উপর নির্ভরতা কমে আসতে পারে। খাবারই হোক আমাদের প্রতিরোধের প্রথম মাধ্যম।
লেখক: শেখ সুবর্ণা আক্তার সিনথী, নিউট্রিশনিস্ট অ্যান্ড কনসালটেন্ট ডায়েটিশিয়ান; বাংলাদেশ লেজার অ্যান্ড সেল সার্জারি ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটাল।