ধুলোয় ঢেকেছে কালীগঞ্জ মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের অপারেশন থিয়েটার

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১০ শয্যার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি কার্যত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কালীগঞ্জ-কোটচাঁদপুর সড়কের পাশে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এই ভবনটি এক সময় এলাকাবাসীর স্বপ্ন ছিল। মাতৃমৃত্যু হ্রাস, শিশুরোগের উন্নত চিকিৎসা ও নিরাপদ প্রসবের লক্ষ্য নিয়ে ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় হাসপাতালটি।
কিন্তু উদ্বোধনের কয়েক মাসের মধ্যেই হাসপাতালটি কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। জনবল সংকটের কারণে এখানে এখন আর নিয়মিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসক নেই, নার্স নেই, প্রয়োজনীয় স্টাফ নেই। ধুলোয় ঢেকে যাচ্ছে অপারেশন থিয়েটার, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দামি যন্ত্রপাতি। ফাঁকা পড়ে আছে ওয়ার্ড ও বেড। পানির লাইনও অচল হয়ে গেছে।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী এখানে ১২ জন জনবল থাকার কথা। যার মধ্যে ২ জন চিকিৎসক, ১ জন ল্যাব টেকনিশিয়ান, ১ জন ফার্মাসিস্ট, ১ জন আয়া, ১ জন ওয়ার্ডবয়, ১ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি), ৪ জন অফিস সহায়কসহ আরও কিছু পদ থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে কর্মরত আছেন মাত্র ৪ জন।
হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা থাকার কথা থাকলেও তা নেই। রোগীরা রেজিস্টারে নাম লেখানোর পর জানতে পারেন চিকিৎসক নেই, অন্য হাসপাতালে যেতে হবে। ওষুধ নেই, অপারেশন থিয়েটার বন্ধ, পানির লাইন অকেজো। যন্ত্রপাতি অচল হয়ে নষ্ট হচ্ছে। প্রতিদিন অনেক গর্ভবতী নারীসহ মা ও শিশুরা স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার আশায় আসেন। কেউ আসেন প্রসবজনিত জটিলতা নিয়ে, কেউ মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ড নিতে। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় তাদের হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়।
মমতাজ বেগম নামের এক নারী বলেন, দূরে উপজেলা হাসপাতালে যাওয়া কষ্টকর। আমরা গরিব মানুষ, আমাদের কষ্টের কথা কাকে বলবো?
কালীগঞ্জ পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোশারেফ হোসেন মোশা বলেন, অনেকবার চিঠি দিয়েছি, দাবি তুলেছি কমপক্ষে একজন মহিলা চিকিৎসক নিয়োগের জন্য। কিন্তু আজও কোনো ফল নেই। এত বড় হাসপাতাল পড়ে আছে অকেজো অবস্থায়। এটা জনগণের সঙ্গে অবিচার।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা বলেন, হাসপাতালটি ভৌগোলিকভাবে চমৎকার জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা চাই, এটি সম্পূর্ণভাবে সচল হোক। কিন্তু জনবল না থাকায় নিয়মিত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। তারপরও সীমিত সামর্থ্যে কিছুটা সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।