চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতির সংকটে ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল

দেশের হাজারো মেধাবী শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার আশ্রয়স্থল এবং রোগীদের নির্ভরতার কেন্দ্রস্থল রাজধানীর একমাত্র সরকারি ডেন্টাল চিকিৎসা কেন্দ্র—ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল। ২০০ শয্যাবিশিষ্ট এই সরকারি হাসপাতালটি দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ দন্ত চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চিকিৎসক, নার্স ও সহায়ক জনবলের সংকট, যন্ত্রপাতির অচলাবস্থা ও স্থানাভাবসহ নানামুখী সমস্যায় হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিন এখানে ১৫০০ থেকে ২০০০ রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও সিট সংকট, চিকিৎসা সরঞ্জামের স্বল্পতা এবং পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় বহু রোগী প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অনুমোদিত মোট ৩৯১টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৩০৬ জন। এর মধ্যে ১৩০টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে আছেন ১১৮ জন, ১১৮টি নার্স পদের বিপরীতে ১১২ জন, তৃতীয় শ্রেণির ৫৯টি পদের বিপরীতে আছেন ৪৪ জন এবং চতুর্থ শ্রেণির ৮৪টি পদের মধ্যে মাত্র ৩৩ জন।
অবসরজনিত কারণে ৫১টি পদ বর্তমানে শূন্য। হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা সেবার জন্য রয়েছে ৭ বেডের আইসিইউ, ১০টি অপারেশন থিয়েটার, আধুনিক ইমপ্লান্ট সেন্টার এবং ওরাল ও ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি, কনজারভেটিভ, প্রস্থোডন্টিকস, শিশু দন্ত, রেডিওলজি ও প্যাথলজি বিভাগসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত সেবা। তবে MRI ও CBCT মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে পড়ে আছে, যা জটিল রোগ নির্ণয়ে বড় বাধা সৃষ্টি করছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ২৪ ঘণ্টা চালু থাকলেও, এর জন্য নেই আলাদা কোনো জনবল বা অনুমোদিত পদ। বর্তমানে ওএমএস বিভাগের ৮ জন ও মেডিসিন-সার্জারি বিভাগের ৭ জন চিকিৎসকের ওপর নির্ভর করেই চালানো হচ্ছে সার্বক্ষণিক জরুরি সেবা। অপারেশনের জন্য আছে ২টি অপারেশন থিয়েটার, কিন্তু নেই কোনো নিযুক্ত অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক, যা গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। আইসিইউতেও নেই অনুমোদিত চিকিৎসক পদ। সংযুক্তিতে কর্মরত ২ জন চিকিৎসকের মাধ্যমে চলছে সব কার্যক্রম, যা ২৪ ঘণ্টার সেবার জন্য পর্যাপ্ত নয়। হাসপাতালের কনজারভেটিভ বিভাগসহ বিভিন্ন ইউনিটে আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। অনেক সময় জায়গা সংকুলানের অভাবে রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এজন্য ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করে শয্যা সংখ্যা ২০০ থেকে ৩০০-তে উন্নীত করার দাবি জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওরাল ক্যান্সারসহ মুখগহ্বরের জটিল রোগে আক্রান্তদের উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, কেমোথেরাপি ইউনিট ও অতিরিক্ত অপারেশন থিয়েটার চালু করা অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে নবনিযুক্ত পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু তৈয়ব মো. আহসান উল্লাহ বলেন, ‘জরুরি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা সেবা চালু থাকলেও কোনো অনুমোদিত পদ না থাকায় আমরা বিদ্যমান চিকিৎসকদের দিয়ে সেবা চালিয়ে যাচ্ছি। চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য জনবলের সংকট প্রকট হওয়ায় চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে বেশ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। জরুরি বিভাগের জায়গাটিও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকায় জরুরি অপারেশন পরিচালনায় জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সংযুক্তিতে এনেস্থেসিওলজিস্ট, চিকিৎসক ও নার্সের জরুরিভিত্তিতে পদায়ন হলে ভালো হয়। এছাড়াও শূন্য পদগুলো পূরণ করা জরুরি।’
চিকিৎসা খাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। দ্রুত জনবল নিয়োগ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আধুনিক যন্ত্রপাতির সংযোজন এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের স্থানান্তরের মতো পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে রোগীসেবা আরও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই উদ্যোগ নেওয়া গেলে ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল দেশের দন্ত চিকিৎসা সেবায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে।